‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান তৈরি করছে চীন সরকার
চীনজুড়ে চলছে নিয়োগ অভিযান। দেশটির শহরগুলোতে স্নাতকদের চাকরি খুঁজে পেতে সহায়তা করার জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। চাকরি মেলাসহ চলছে নিয়োগ অভিযান। গেল ২ বছরের মধ্যে যারা স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাগ্রহণ শেষ করেছেন এবং যাদের বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছর, তারা এই প্রক্রিয়ায় চাকরি পেতে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।
এই গ্রীষ্মে নতুন স্নাতকদের কর্মজীবনের পথে সহযোগিতা করতে চীনের বিভিন্ন শহর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা যাতে জীবনের প্রথম চাকরি খুঁজে পান, সেজন্য চাকরি মেলাসহ একাধিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের সুচৌ শহর নাইট মার্কেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাকরি মেলার জন্য একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।
চাকরি মেলাগুলো এখন শহরের জমজমাট বাণিজ্যিক এলাকা ও মলে সন্ধ্যা বা রাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেগুলো তরুণ চাকরিপ্রার্থীরা ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে।
শহরের মানবসম্পদ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের নেতৃত্বে, গোটা জেলা ও কাউন্টি এই গ্রীষ্মে বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে চাকরি মেলা আয়োজনের জন্য সহযোগিতা করছে। শহরটি নতুন স্নাতকদের সঙ্গে আরও চাকরির সুযোগ ভাগ করে নেওয়ার জন্য লাইভ স্ট্রিমিং করছে।
স্বাচ্ছন্দ্যে চাকরি খুঁজে পাওযার পথ সৃষ্টির জন্য একটি পরিবেশ তৈরির কাজ চলছে বলে জানান সুচৌ মানবসম্পদ পরিষেবা কেন্দ্রের পরিচালক লি চিয়ান।
"আমরা এই নতুন প্রজন্মকে বোঝার জন্য কাজ করছি, বিশেষ করে যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর তাদের পছন্দগুলো সম্পর্কে আমরা জানছি।
এছাড়াও নতুন গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি দিতে নিয়োগকর্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সুচৌ ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের জন্য প্রণোদনামূলক নীতি চালু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা ভর্তুকি এবং নতুন নিয়োগের জন্য এককালীন পুরস্কার।
দেশের অন্যান্য অংশে, সহায়ক নীতিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্নাতকদের জন্য চাকরি মেলা এবং অন্যান্য কর্মসংস্থান-সম্পর্কিত পরিষেবাগুলো নিশ্চিত করছে স্থানীয় সরকার।
এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশ স্নাতকদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করার জন্য ১৭ টি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে, চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইনটেলেক্ট গ্রুপ কোম্পানী লিমিটেড একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছে, যার মাধ্যমে সফটওয়্যার, ফাইনান্স ও ইলেকট্রনিক্স খাতে তৈরি হয়েছে প্রায় ১১ হাজার নতুন চাকরি।
চাকরি দেওয়ার কার্যক্রম সমন্বয় করতে এরই মধ্যে চীনের ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইনটেলেক্ট গ্রুপ।
দেশটির মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের তথ্যমতে, এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ১৬২টি অনলাইন জব ফেয়ারের আয়োজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে খুঁজে নেওয়া হয় চাকরী প্রত্যাশীদের। এক লাখ ৭৫ হাজার চাকরির অফার নিয়ে এই মেলায় অংশ নেয় ৪১ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান বিভাগ জানায়, দেশটিতে ১৬ থেকে ২৪ বছয় বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ৯ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ এরইমধ্যে বিভিন্ন কর্মে প্রবেশ করেছে।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান
২. তাইওয়ান প্রণালীর দুই পারের তরুণদের অংশ গ্রহণে ২০তম সামার ক্যাম্প
তাইওয়ান প্রণালীর দুই পারের বাসিন্দা, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে যোগাযোগ ও বোঝাপড়া গড়ে তুলতে তাইওয়ানের তরুণদের জন্য মূল ভূখণ্ডে আয়োজন করা হয় ২০তম সামার ক্যাম্প। এতে অংশ নিয়েছেন প্রণালীর দুই পারের প্রায় এক হাজার তরুণ-তরুণী। গোটা গ্রীষ্মজুড়েই মূল ভূখন্ডে হবে এমন আগ্রহোদ্দীপক নানা আয়োজন।
কোভিড মহামারি অবসানের পর ফের তাইওয়ানের তরুণদের জন্য মূল ভূখন্ডে শুরু হয়েছে আকর্ষণীয় সামার ক্যাম্প।
২০তম সামার ক্যাম্পে যোগ দেন তাইওয়ান প্রণালীর দুইপারের হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী। নানা অনুষ্ঠানের তারা আনন্দ করেন, বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন এবং পরস্পরের বিষয়ে জানাশোনা গভীর করেন।
৪ জুলাই সামার ক্যাম্পের শুরুতে বেইজিং স্পোর্টস ইউনিভার্সিটিতে জড়ো হন তাইওয়ানের ২০০ কলেজ শিক্ষার্থী। মূল-ভূখন্ডের প্রাত্যহিক জীবন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুব খুশি তারা।
তাইওয়ানের চায়নিজ ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ইউনিয়নের চেং তিং ই জানালেন তার গভীর উচ্ছ্বাসের কথা।
আমরা এখানে আসতে পেরে খুবই খুশি। আরও বেশি খুশি এ জন্য যে, মূলভূখণ্ড ও তাইওয়ানের শিক্ষার্থীরা আমরা এখানে এক হতে পেরেছি।
তাইওয়ানের ছেংছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উ ইউ’র আগ্রহ বইয়ে পড়া মূলভূখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর প্রতি।
আমি এখানে একটা টিম স্পিরিট অনুভব করছি। আমি পাঠ্যবইয়ে পড়া মূল ভূখন্ডের গুরুত্পূর্ণ স্থানগুলো দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।
স্যামার ক্যাম্পের প্রথম দিনেই তাইওয়ানের যুবরা অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে সময় কাটান। তারা মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট গ্যালারিতে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন এবং লাইভ পারফরমেন্স উপভোগ করেন।
অল চায়না ফেডারেশন অফ তাইওয়ান কমপ্যাট্রিয়টসের আয়োজনে সান্ধ্য পার্টির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় সামার ক্যাম্পের। সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াং ইচৌ তুলে ধরেন সামার ক্যাম্পের গুরুত্বে কথা।
আমরা খুব খুশি, কারণ এমন সরাসরি যোগাযোগ ও বিনিময়ের মাধ্যমেই আমরা পরস্পরের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে পারবো, মতৈক্যে পৌঁছতে পারবো এবং তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির সকল বাধাকে অতিক্রম করতে পারবো।
সামার ক্যাম্পে যোগ দেওয়া তাইওয়ানের শিক্ষার্থীরা পরে মূল ভূখন্ডের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে যান। গোটা গ্রীষ্মকাল জুড়েই চলবে সামার ক্যাম্পের এ কার্যক্রম।
প্রতিবেদকঃ মাহমুদ হাশিম
সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. চীনা স্নাতকরা অপ্রচলিত কর্মজীবনের পথে এগুচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মধারা
প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে ঐতিহ্যবাহী পেশার পরিবর্তে ভিন্ন পেশা বা কর্মজীবন বেছে নিচ্ছেন চীনের অনেক শিক্ষিত তরুণ। তারা স্নাতক শেষ করে ডিজিটাল দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অনন্য কর্মজীবনের পথ তৈরি করছেন।
লিউ হুইমিন, বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থীদের একজন। সেখান থেকে ভাষা বিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করেছেন লিউ।
সহপাঠিদের থেকে একটু ভিন্ন চিন্তার মানুষ লিউ। স্নাতক শেষ করে যখন সবাই ভালো ক্যারিয়ার গোছাতে প্রচলিত ভালো চাকরির পেছনে ছুটছে তখন লিউ অনুবাদক পেশার পরিবর্তে হোমস্টে বা গৃহরক্ষক পেশাকে বেছে নেন।
লিউ তার ডিজিটাল দক্ষতা ব্যবহার করে বেইজিংয়ের গ্রামীণ বাসস্থান নিয়ে কাজ করছেন। নতুন পথ অন্বেষণে লিউ হুইমিন বেশ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
‘আমি আশা করি, জেনারেশন জেডের তরুণদের নিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চালিত করতে পারবো।’
লিউয়ের মতো পূর্ব চীনের ছিংতাও শহরের আরেক তরুণ সু লিতান। স্নাতক শেষ করার পর খাদ্য সরবরাহ পরিষেবার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন।
প্রতিদিন, খাবারের তালিকা, দাম, প্যাকেজিং থেকে শুরু করে সবকিছু কীভাবে উন্নত করা যায় তার পরামর্শ দিতে খাবারের বিভিন্ন দোকানে যান। মানুষ উপকৃত হলে তার কাজে তৃপ্তি আসে বলে জানান সু লিতান।
"যে লোকেরা এই ছোট খাবারের দোকানগুলো চালায়, তাদের বিশেরভাগই উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে জানে না। তাদের সাহায্য করতে পারাটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়।
দেশটির মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় ২০১৯ সাল থেকে ৭৪টি নতুন পেশা চালু করেছে, যার মধ্যে স্থান পেয়েছে ইন্টারনেট বিপণনকারী, হোমস্টে রক্ষক এবং সবুজ নির্মাণ পরামর্শদাতার মতো পেশা।
সম্প্রতি চীনা গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চীনের তরুণ এবং প্রযুক্তি-বুদ্ধিমান কর্মীবাহিনী ঐতিহ্যবাহী পেশার পরিবর্তে অপ্রচলিত চাকরি বা পেশাকে বেছে নিচ্ছেন। কাজের শ্রেণীবিভাজন না করে সমাজ বা দেশের জন্য সহায়ক এমন কাজেই অগ্রসর হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পাশ তরুণরা। এতে দেশটিতে তৈরি হচ্ছে এক নতুন কর্মধারা।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: নাজমুল হক রাইয়ান
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী