গেল কয়েক বছর ধরে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মানুষ বার বার চীনের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার কথা উল্লেখ করে আসছে। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে অযৌক্তিকভাবে চীনা কোম্পানি প্রতিরোধ করেছে, কথিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিল পাশ করে এবং মিত্র দেশ নিয়ে চীনকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সরবরাহ চেইন থেকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। চীনের উন্নয়ন দমন করতে তথাকথিত ‘চীনা হুমকি’ প্রচার করেছে এবং অন্যান্য দেশকে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ কমাতে উসকানি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া তার বৃহত্তম মিত্র ইউরোপের কিছু দেশও অদৃশ্য মার্কিন হাতে চালিত কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করেছে। ফাইভ জি-সহ নানা ক্ষেত্রে চীনা কোম্পানির যোগদানে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।
বর্তমানে বিচ্ছিন্নতার বদলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন একটি ধারণা উত্থাপন করেছে, তা হল ‘ঝুঁকিমুক্ত’। ইউরোপও যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা অনুসরণ করছে। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস চীনে উন্নত লিথোগ্রাফি মেশিন রপ্তানি না-করার ঘোষণা করে। সার্বিক বিচ্ছিন্নতা বা ঝুঁকিমুক্ত- যাই হোক, তার মূল বিষয়টি একই। যুক্তরাষ্ট্র নিজের আধিপত্য রক্ষা করতে চীনকে নিঃসঙ্গ করে রাখছে। চীনকে বৃহত্তম হুমকি ও প্রতিযোগী হিসেবে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, তাদের মতে একটি দেশ শক্তিশালী হলে আধিপত্যে জড়িয়ে যাবে। এখন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক, সামরিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে অন্য দেশের উন্নয়ন রোধ করছে। তবে তারা চায় না যে ভবিষ্যতে একদিন অন্য দেশ তাদের উপর একই আধিপত্য করুক। চীনের কৌশলগত উদ্দেশ্য কখনও বোঝে নি যুক্তরাষ্ট্র। তাই চীন সম্পর্কে সঠিক নীতি প্রয়োগ করতে পারছে না। যেমন, প্রথম বোতামটি ভুল বেঁধে দিলে পরের সব বোতাম ধারাবাহিকভাবে এলোমেলো ছাড়া- কিছুই হয় না।
যুক্তরাষ্ট্র শুধু চীনের উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কেই অস্পষ্ট বোঝে নি, তা নয়। বরং, চীনা জাতির চরিত্রেরও অবমূল্যায়ন করেছে। চীনের ওপর আধিপত্য যত বেশি হবে, তত বেশি পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবে।
সম্প্রতি চীন ঘোষণা করেছে, গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম দুটি উপাদানের রপ্তানির ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে। চিপ ও সৌর প্যানেল তৈরিতে এ দুটি উপাদান প্রয়োজন। বিশ্বের ৮০ শতাংশ গ্যালিয়াম চীনে সংরক্ষিত আছে এবং চীনও বৃহত্তম জার্মেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ।
চীন কখনও প্রথমে ঝামেলা উস্কে দেবে না। তবে, চুপচাপ আঘাত সহ্যও করবে না। নিজের নিরাপত্তা ও বৈধ অধিকার রক্ষায় চীনের আস্থা ও দক্ষতা খুব দৃঢ় হয়ে থাকে।
সম্প্রতি মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন ৪ দিনব্যাপী চীন সফর শেষ করে ৯ জুলাই বেইজিংয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা চায় না ওয়াশিংটন। তাই যদি হয়, তাহলে বিপর্যয়কর ফলাফল হবে। আশা করা যায়, এবার যুক্তরাষ্ট্রের কথা ও কাজে মিল হবে। সার্বিক বিচ্ছিন্নতার বদলে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ কথা বলার খেলা খেলবে না দেশটি। সবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা হতে পারে কিনা, তা শতভাগ নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের উপর।
(শিশির/তৌহিদ)