এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিস্থিতি আবার নষ্ট করতে চায় ন্যাটো
2023-07-12 15:10:36

জুলাই ১২: স্থানীয় সময় গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে, লিথুয়ানিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ন্যাটো শীর্ষসম্মেলন। ইউক্রেনের পরিস্থিতি ছিল সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু। তা ছাড়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা টানা দ্বিতীয়বারের মতো সম্মেলনে অংশ নেন। যার ফলে ন্যাটোকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিস্তারের বিষয়টি আবার উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দেয়। জাপানি মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্রান্সের বিরোধিতার কারণে, জাপানে এশিয়ার প্রথম যোগাযোগ কার্যালয় খোলার ন্যাটোর পরিকল্পনা, যা মূলত শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার জন্য নির্ধারিত ছিল, তা আগামী শরৎ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার প্রভাব প্রসারিত করার ন্যাটোর অভিপ্রায়ে কোনো পরিবর্তন হবে না।

 

স্নায়ুযুদ্ধের একটি পণ্য হিসাবে, শুরু থেকেই ন্যাটো হলো মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখার মূল স্তম্ভ। স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হলে, ন্যাটো যুক্তরাষ্ট্রের "জার্মানি ও ফ্রান্সের উপর পা রাখার" কৌশলে ছয় দফা পূর্বমুখী সম্প্রসারণ পরিচালনা করেছে। ইউক্রেন সংকট, ইউরোপে একটি নিরাপত্তা বিভাজন তৈরি করেছে এবং ক্রমাগত এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত তার প্রভাব প্রসারিত করেছে।

২০০৬ সালের জানুয়ারিতে, তত্কালীন ন্যাটোতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ভিক্টোরিয়া নিউল্যান্ড প্রথমবারের মতো "বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব" ধারণাটি সামনে নিয়ে আসেন। ন্যাটো ও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড একটি অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যাটোর বৈশ্বিক প্রভাব প্রসারিত করার চেষ্টা করেন। ২০০৯ সালে, ন্যাটো এবং চারটি এশিয়া- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ তাদের নিজের চাহিদা অনুযায়ী সহযোগিতা প্রচারের জন্য "কাস্টমাইজড সহযোগিতা পরিকল্পনা" চালু করে। পরবর্তী ১০ বছরে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ফোকাসের অমসৃণ সমন্বয়ের কারণে, ন্যাটোর এশিয়া-প্যাসিফিকেশন প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ২০১৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় "ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি রিপোর্ট" প্রকাশ করার পর, ন্যাটো সেই অনুযায়ী আবার তার কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০২২ সালে, "ন্যাটো নিউ স্ট্র্যাটেজিক কনসেপ্টে" প্রথমবারের মতো চীনের কথা উল্লেখ করে এবং এশিয়া-প্রশান্তকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য একে একটি অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে। পাশাপাশি চীনকে একটি "পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ" হিসাবে বিবেচনা করে।

 

ন্যাটোর এশিয়া-প্রশান্তকরণের প্রক্রিয়ায় জাপান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ন্যাটো টোকিওতে এশিয়ার প্রথম যোগাযোগ কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, এটি জাপানে এশিয়া-প্যাসিফিক সমন্বয় কেন্দ্র স্থাপন করতে চায়, যা এই অঞ্চলের জনগণের কাছে তীব্র বিরোধিতা পেয়েছে।

সম্প্রতি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক লোক ন্যাটোর সামরিক উত্তেজনার প্রতিবাদে এবং ন্যাটোর এশিয়া-প্রশান্তকরণের বিরোধিতা জানিয়ে সমাবেশ করে।

ন্যাটোর মধ্যেও প্রভাব প্রসারিত করার আচরণের বিরোধিতার কথা শোনা যায়। যেমন- ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাকখোঁ একবার স্পষ্টভাবে জাপানে ন্যাটোর একটি যোগাযোগ অফিস প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।

 

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল- সহযোগিতা ও উন্নয়নের উত্তম স্থান। এ অঞ্চল বড় শক্তিগুলির প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নয়। ন্যাটো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি আগ্রাসী সামরিক সংস্থা। ন্যাটোর নিজস্ব সনদ অনুযায়ী, সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে তার অস্তিত্বের তাৎপর্য হারিয়েছে।

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)