জাপানের পরমাণু দূষিত পানি নিষ্কাশনে কেন পশ্চিমা দেশগুলির কোনো উদ্বেগ নেই?
2023-07-11 14:40:17

জুলাই ১১: ১০ জুলাই, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ফুকুশিমা পারমাণবিক দূষিত পানি সমুদ্রে নিঃসরণের বিষয়ে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলি, যেমন- ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পেরু, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে সমুদ্রে পারমাণবিক দূষিত পানি নিষ্কাশনে জাপানের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। বিপরীত দিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলির প্রতিক্রিয়া অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।

 

আইএইএ’র মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশের পর, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ‘স্বাগত’ জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যখন পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা জাপানের পরিকল্পনার বিতর্কিত বিষয়ে অনেকাংশে নীরব ছিল। মূলধারার পশ্চিমা মিডিয়ার রিপোর্ট পড়ার পর, সিআরআই সম্পাদকীয় কিছু সমস্যা খুঁজে পেয়েছে:

প্রথমত, কিছু পশ্চিমা মিডিয়া জাপান এবং আইএইএ-এর কথায় ব্যাপক প্রতিবেদন তৈরি করেছে, ‘পরমাণু দূষিত পানির’ পরিবর্তে ‘পারমাণবিক শোধিত জল’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছে। কিন্তু, আন্তর্জাতিক সমাজের বিরোধিতার কথা খুব কমই লেখা হয়েছে! ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) এর একটি নিবন্ধে, জাপান এবং আইএইএ’র ভাষা প্রায় সবখানে উদ্ধৃত করা হয়েছে। নিবন্ধের এক ভিডিওতে, প্রতিবেদক মাছ খাওয়ার একটি ‘পারফরম্যান্সেও’ যোগ দিয়েছেন, সেই সঙ্গে লিখেছে যে ফুকুশিমার কাছে পাওয়া মাছগুলি ‘খুব নিরাপদ’ এবং কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

কিন্তু, সমুদ্রে পরমাণু দূষিত পানি নিষ্কাশন পরিকল্পনার পরিবেশগত বিপত্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ফুকুশিমার পারমাণবিক দূষিত জলে ৬০টিরও বেশি ধরণের রেডিওনুক্লাইড রয়েছে। জাপানও স্বীকার করেছে যে প্রায় ৭০ শতাংশ পরমাণু দূষিত জল মান উত্তীর্ণ না। জার্মান ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সের এক গবেষণা অনুসারে, ফুকুশিমার উপকূলে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সমুদ্র স্রোতের কারণে, নিষ্কাশনের ৫৭ দিনের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরের বেশিরভাগ অংশে ছড়িয়ে পড়বে তেজস্ক্রিয় উপাদান! যা শুধু সামুদ্রিক পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকেও বিপন্ন করবে।

 

কেন কিছু পশ্চিমা দেশ জাপানের পরমাণু দূষিত জলের বিষয়ে এত ‘নিশ্চিন্ত’?

 

উদাহরণ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখা যাক। লস এঞ্জেলেস টাইমস অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪০ এবং ১৯৫০এর দশকে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে ৬৭বার পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল। স্থানীয় জনগণের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র নেভাদা পারমাণবিক পরীক্ষা সাইট থেকে সরাসরি মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে ১৩০টন পারমাণবিক দূষিত মাটি ফেলেছে। এতে বোঝা কঠিন নয়, কেন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের পরমাণু দূষিত পানি সমুদ্রে ফেলার পরিকল্পনায় কোন কথা বলে না! কারণ দেশটি নিজেই সামুদ্রিক পারমাণবিক দূষণ সৃষ্টির অন্যতম "সূচনাকারী"।

 

২০১১ সালে ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক দুর্ঘটনার যৌথ পরিচালনা এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্গঠনের বিষয়ে একটি সহযোগিতা চুক্তি করে। উভয় পক্ষ এই পারমাণবিক দুর্ঘটনাকে একটি "সুযোগ" হিসাবে গ্রহণ করে এবং দৃঢ়ভাবে মৈত্রী প্রচার করার সুযোগ গ্রহণ করে। জাপান আন্তর্জাতিক জনমতের ক্ষেত্রে সমুদ্রে পারমাণবিক দূষিত পানি নিষ্কাশনে সমর্থন লাভের জন্য মার্কিন শক্তি ব্যবহার করে এবং যুক্তরাষ্ট্র জাপানে তার সামরিক আধিপত্য বজায় রাখার সুযোগ নেয়।

 

প্রশান্ত মহাসাগর হলো মানবজাতির সাধারণ স্থান। এটা কিছু দেশের পারমাণবিক পরীক্ষার সাইট বা ভূ-রাজনৈতিক গেমের অংশ নয়। জাপান সরকারের উচিত অবিলম্বে পরমাণু দূষিত জল সমুদ্রে ফেলার পরিকল্পনা বন্ধ করা। যেসব পশ্চিমা দেশ নীরব রয়েছে, তাদের এই পরিকল্পনার সহযোগী হওয়া উচিত না।

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)