‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ২৬
2023-07-11 19:11:52

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে  

১। পানির শহর চুচিয়াচিয়াও

২। ছয় বছরে চীনের নয়টি প্রদেশ ঘুরেছেন বাংলাদেশী সজল আহমেদ

৩। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পছন্দের স্থান শিলিন স্ট্রিট

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ২৬তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।  

 

১। পানির শহর চুচিয়াচিয়াও

চীনের সাংহাইয়ের ইয়াংজি নদীর দক্ষিণে ছিংফু জেলায় অবস্থিত জলের শহর চুচিয়াচিয়াও। মুক্তার ধারা নামেও পরিচিত এই শহর।

 

মিং ও ছিং রাজবংশের সময় কাঠ, মার্বেল ও পাথর দিয়ে নির্মিত সেতুগুলোর জন্য এই শহর বেশি পরিচিত। ১৯৯১ সালে সাংহাই সরকার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহর হিসেবে এর নামকরণ করে। এছাড়া ছোট পাখার আকৃতি হওয়ায় সাংহাইয়ের ভেনিস হিসাবেও পরিচিত এই শহর।

এ শহরের আছে ১ হাজার ৭০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস । ৪৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই শহর। বলা হয়ে থাকে কেউ যদি এ শহরের সেতু না দেখে তাহলে তার এ শহর দেখা হবে না। ১৫৭১ সালে নির্মিত ফাংশেং ব্রিজ দীর্ঘতম ও সবচেয়ে উঁচু পাথরের গড়া।

 

খুয়োচি গার্ডেন এ শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। ১৭ হাজার ৯৯৭ বর্গ মিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে এই বাগান। ১৯১২ সালে মা ওয়েনখিং এই বাগান তৈরি করেন। এই বাগানের কাজ সম্পূর্ণ করতে ১৫ বছর সময় লেগেছিল।

 

আরেকটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে নর্থ ষ্ট্রীট। যার আছে ৪০০ বছরের ইতিহাস। ৩-৪ মিটার প্রশস্ত এই রাস্তা "মিং ও ছিং রাজবংশের সময় সাংহাইয়ের নম্বর ওয়ান রাস্তা" নামে পরিচিত ছিল।

 

 

যারা ভোজনবিলাসী তাদের জন্য এই শহরে আছে চুচিয়াচিয়াও সাউমাই , চুচিয়াচিয়াও ফ্রাইড বান, মানথৌ, তফু, লোটাস রুট, বাইসুইয়ু , চারউ, চোংজি ইত্যাদি।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

২। ছয় বছরে চীনের নয়টি প্রদেশ ঘুরেছেন বাংলাদেশী সজল আহমেদ

বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় জন্ম সজল আহমেদের। বর্তমানে পড়ছেন চীনের ইউননান প্রদেশের কুনমিং শহরের সাউথওয়েস্ট ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটিতে। তিনি কম্পিউটার সাইন্সে মাস্টার্সে অধ্যয়ন করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঘুরে বেড়াই এবারের পর্বে কথা হয়েছে তার সাথে। তিনি শেয়ার করেছেন চীনে তার ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার গল্প।

সজল আহমেদ

·        প্রশ্ন- ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি? –

সজল আহমেদ – আমি ভালো আছি।

·        প্রশ্ন-  আপনি তো  প্রায় ছয় বছর ধরে চীনে আছেন। পড়ালেখা করেছেন সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে।পড়ালেখার পাশাপাশি , এই কয়েক বছরে অনেক জায়গায় নিশ্চয়ই ঘুরতেছেন। আমরা জানতে চাই  আপনার কোথায় কোথায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে?

 

 

সজল আহমেদ – পড়ালেখার সুবাদে, রিসার্চের কাজে এবং ছুটিতে আমি চীনের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। ইউননান, হেনান, হুপেই,কুইচৌ, সিচুয়ান, কুইলিন ,সাংহাই, বেইজিং,ঘুরেছি। আমি এই চীনের মোটামুটি নয়টি প্রদেশে ঘুরছি।

বন্ধুদের সাথে সজল আহমেদ

·        প্রশ্ন- এই জায়গাগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? 

সজল আহমেদ – আমার সবথেকে ভালো লেগেছে ইউননান প্রদেশে। এই প্রদেশের বিভিন্ন শহরে আমি ঘুরেছি। যারা চীনে ঘুরে আসে কিংবা এখানকার বাসিন্দা তারা খুব ভালো করে জানে টালি, লিচিয়াং, সিশুয়াংবান্না, শহরগুলো কতটা সুন্দর। এখানকার পরিবেশ খুব সুন্দর। বলতে গেলে বারো মাসই নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। এখানে বরফ পড়ে না, অনেক শীতও না আবার অনেক গরমও না। এছাড়া এখানকার খাবার খুব ভালো।

সহপাঠীদের সাথে সজল আহমেদ

 

·        প্রশ্ন- আমরা জানি আপনি খুব ভালো চীনাভাষা পারেন। আপনার ভাষা শেখার জার্নি সম্পর্কে যদি বলতেন?

সজল আহমেদ – বাংলাদেশ থেকে যখন প্রথম চায়নাতে আসি তখন আমি চীনা ভাষা পারতাম না। ধীরে ধীরে শেখা শুরু করলাম। আমাদের চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং ক্লাস হতো। সেখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। প্রথমদিকে চীনা ভাষা অনেক কঠিন লাগতো। ধীরে ধীরে বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলে, শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এখন ভালো বলতে পারি চীনা ভাষা।

 

সজল আহমেদ

 

·         প্রশ্ন- বাংলাদেশের অনেকেই আছে যারা চীনে ঘুরতে যেতে চায়,  তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন? –

সজল আহমেদ- বাংলাদেশ থেকে যারা চীনে আসতে চান তাদের উদ্দশ্যে বলতে চাই, আপনারা অবশ্যই ইউননানে আসবেন। এখানে ঘুরার মতো অনেক জায়গা আছে। এখানে মজার খাবার খেতে পারবেন।

·         প্রশ্ন- আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

সজল আহমেদ – আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকার –আফরিন মিম

 

৩। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পছন্দের স্থান শিলিন স্ট্রিট

চীনের ইউননান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং শহরে রয়েছে বেড়ানোর মতো অনেক জায়গা। কুনমিংয়ের এক প্রান্তে অবস্থিত ছাংকুং জেলা। এখানে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। বিকেল বা সন্ধ্যায় ছাংকুং এলাকায় থাকা শিক্ষার্থীরা অনেকেইবেড়াতে যান শিলিন স্ট্রিটে।

এটি ফুডস্ট্রিট হিসেবে বেশ বিখ্যাত।এই এলাকা মূলত জমজমাট হয়ে ওঠে বিকাল থেকে।

এখানে পাওয়া যায় ইউনানের বিশেষ কিছু খাবার যেমন রাইস নুডুলস, ফ্লাওয়ার কেক ইত্যাদি।

এখানে চীনের বিখ্যাত হুয়োকুয়ো বা হটপট খাবার হন্য বেশ কয়েকটি বিশেষ রেস্টুরেন্ট আছে। একটি বড় ফুডকোর্ট রয়েছে। সেখানে ফাস্ট ফুড, বারবিকিউসহ বিচিত্র স্বাদের অসংখ্য ডিশ পাওয়া যায়।

এই স্ট্রিটে বেশ কয়েকটি কফি ও বেকারির বড় ব্র্যান্ড শপ রয়েছে। এসব জায়গায় কেক, রুটি ও নানা ধরনের বেকারি আইটেম পাওয়া যায়।

শিলিন স্ট্রিটের রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে মুসলিম রেস্টুরেন্টও রয়েছে। এসব রেস্টুরেন্ট ছাড়াও বিকাল থেকে শিলিন স্ট্রিটে হকারদের ভিড় জমতে থাকে। গাড়িতে করে নানা রকম খাদ্য বিক্রি হতে থাকে। এসব খাদ্যের মধ্যে তৌফু ভাজা, বারবিকিউ চিকেন থেকে শুরু করে ডিম পারোটা, মিষ্টি আলু পোড়া এবং ভুট্টা সিদ্ধর মতো জনপ্রিয় খাবারও আছে।

শিলিন স্ট্রিট কেনাকাটার জন্যও বিখ্যাত। রয়েছে অনেকগুলো ব্র্যান্ডশপ। পাশাপাশি আছে ছোট ছোট দোকান যেখানে তুলনামূলকভাবে কমদামে পোশাক, জুতা, প্রসাধনী সামগ্রী, অলংকার, ফুল, ইত্যাদি পাওয়া যায়।

এখানে মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার একসেসরিজের অনেকগুলো দোকান রয়েছে। আছে সুপারশপ। শিলিন স্ট্রিটে নাইট মার্কেট ছাংকুং এলাকায় বিখ্যাত। শিলিন স্ট্রিটে বেশ কয়েকটি পেটশপ আছে যেখানে ঘরে পোষার জন্য  কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, গিনিপিগ, কচ্ছপ কিনতে পাওয়া যায়। এখানে ঐতিহ্যবাহী চীনা মেডিসিন বা ভেষজ ঔষধের দোকান আছে। আরও আছে ঐতিহ্যবাহী চায়ের দোকান। এখানে জেসমিন টিসহ বিভিন্ন রকম চা বিক্রি হয়। এখানে বিভিন্ন রকম খেলাধুলারও আয়োজন আছে।

শিলিন স্ট্রিটের খুব কাছেই সাবওয়ে স্টেশন থাকায় এখানে পর্যটকদের আসা যাওয়াও সহজ। এখানে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে যেখানে বিদেশিরাও থাকতে পারে।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী