চীনের সঙ্গে ‘পারস্পরিক সুবিধা এবং উভয়ের জয়’ চাইলে কিছু বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ: সিআরআই সম্পাদকীয়
2023-07-10 11:51:39

জুলাই ১০: গতকাল (রোববার) যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন তাঁর চার দিনের চীন সফর শেষ করেছেন। গত কয়েকদিনের বৈঠক ও আলোচনায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে যে, দু’পক্ষের উচিত যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করা। ইয়েলেন মার্কিন-চীন অর্থনৈতিক ‘পারস্পরিক সুবিধা এবং উভয়ের জয়’ খোঁজার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসব বিষয়ে মন্তব্য করেছে সিআরআই সম্পাদকীয়।

 

এক মাসের মধ্যে চীন সফর করা ইয়েলেন দ্বিতীয় মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন চীন সফর করেন। দুই পক্ষের প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে, ইয়েলেনের এই সফরের মাধ্যমে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পরের উদ্বেগের গভীর ও ব্যাপক বোঝাপড়া দেখা যায় এবং উভয় পক্ষ সংলাপ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করে। এতে আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। কিছু বিদেশি মিডিয়া বিশ্বাস করে যে, এটি একটি ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’।

 

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা সর্বদা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘চালিকাশক্তি’ হয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে উসকানি দেওয়ার পরে, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের নীতি অব্যাহত রেখেছে এবং চীনের ওপর দমন তীব্রতর হয়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে, চীনা ও মার্কিন নেতারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য বালিতে বৈঠক করেন। ইয়েলেনের এবারের চীন সফরকে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের ঐকমত্য বাস্তবায়ন এবং দুই দেশের মধ্যে আর্থিক ক্ষেত্রে যোগাযোগ ও বিনিময় জোরদার করার জন্য একটি দৃঢ় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দুই পক্ষের প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে চীন বিশ্বাস করে যে আলোচনাটি "গঠনমূলক" হয়েছে। সফর শেষে ইয়েলেন আরো বলেন, গত কয়েকদিনে চীনের সঙ্গে বৈঠকটি ছিল ‘প্রত্যক্ষ ও ফলপ্রসূ’। এমন এক সময়ে যখন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীন-মার্কিন সম্পর্ক সর্বনিম্ন অবস্থায় পৌঁছেছে। দুই পক্ষের এই বিবৃতি চীন-মার্কিন সম্পর্ককে সহজ করতে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা দেবে।

 

কিন্তু একই সময়ে, বহির্বিশ্ব লক্ষ্য করেছে যে ইয়েলেন এখনও ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ নিয়ে কথা বলছেন এবং ‘ন্যায্য’ অর্থনৈতিক নিয়মের একটি সেট তৈরি করার দাবি করছেন। চীনের পক্ষ থেকে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে, এতে দেখা যায়, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার উন্নতির ক্ষেত্রে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এখনও মতভেদ রয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের এখনও অনেক কিছু করার আছে।

 

বর্তমানে, চীন চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন প্রচার করছে এবং অভিন্ন উন্নয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, চীনে একটি বিশাল বাজার রয়েছে এবং চীনের সঙ্গে সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান খাতের প্রচার এবং মুদ্রাস্ফীতি রোধ করার ক্ষেত্রেও সহায়ক। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার প্রকৃতিকে স্বীকৃতি দেওয়া। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও তার জনগণের সত্যিকারের কল্যাণে করণীয় নিয়ে ভাবতে পারে।

 

বর্তমানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এক হাজারেরও বেশি চীনা কোম্পানি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এখন যা করা উচিত তা হল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চীনের উপর আরোপিত শুল্ক বাতিল করা, চীনে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা, চীনা কোম্পানিগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং দুই দেশের কোম্পানিগুলির জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা প্রসারিত করার শর্ত তৈরি করা।

 

সিআরআই সম্পাদকীয়তে আশা করা হয়, জ্যানেট ইয়েলেনের চীন সফরের পর, আন্তর্জাতিক সমাজ দেখতে পাবে যে, যুক্তরাষ্ট্র চীন-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য চীনের সঙ্গে কাজ করছে। এতে চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা সঠিক দিকে ফিরে আসবে।
(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)