বিজ্ঞানবিশ্ব ২৬তম পর্ব
2023-07-10 19:39:33

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

২৬তম পর্বে যা থাকছে:

* কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন মডেল চালু করলো চীনা টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে 

* চীন-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে বৈজ্ঞানিক আদান-প্রদানে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা

* ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর অ্যাওয়ার্ড পেলেন চীনা বিজ্ঞানী

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন মডেল চালু করলো চীনা টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে 

চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ে গত শুক্রবার এর ডিপ লার্নিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল পাংউ’র সর্বশেষ ভার্সন বাজারে এনেছে। দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের থংকুয়ানে অনুষ্ঠিত হুয়াওয়ে ক্লাউড ডেভেলপার কনফারেন্সে এটি বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয় হুয়াওয়ে। 

হুয়াওয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল পাংউ সিরিজ সর্বপ্রথম চালু হয় ২০২১ সালে। এটি একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলের সমষ্টি যা টেক্সট তৈরি, টেক্সট শ্রেণীবিন্যাস ও কথোপকথনে সক্ষম।

মোট তিনটি স্তরে স্থাপন করা হয়েছে সবথেকে আপগ্রেডেড পাংউ-থ্রি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলটি। ফাউন্ডেশন স্তরে ব্যবহার করা হয়েছে আরও পাঁচটি ভিন্ন মডেল। ফাউন্ডেশন স্তরে রয়েছে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং, মাল্টিমোডাল ডাটাবেস, কম্পিউটার ভিশন, প্রেডিকশন ও সাইন্টিফিক কম্পিউটিং মডেল। এই মডেলগুলো বিভিন্ন শিল্পখাতের প্রয়োগিক সমস্যা মেটাতে পাংউ’কে দক্ষ করে তোলে।

দ্বিতীয় স্তরে ই-গভর্নমেন্ট, ফাইন্যান্স, উৎপাদন, মাইনিং ও আবহাওয়াবিদ্যার মতো কিছু নির্দিষ্ট কাজের জন্য বিশেষায়িত মডেল নিয়ে কাজ করা হয়েছে। হুয়াওয়ে জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সাপেক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল পাংউকে নিজেদের ডাটাসেট দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিতে পারবে। 

হুয়াওয়ের নির্বাহী পরিচালক ও হুয়াওয়ে ক্লাউডের সিইও ছ্যং পিং আন জানান, শিল্পখাতের নানা চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন খাতের গ্রাহকদের চমৎকার সেবা প্রদান করাই আসল লক্ষ্য এই পাংউ সিরিজের। গ্রাহকরা পাংউর বুদ্ধিমান আপগ্রেড কার্যকর উপায়ে কাজে লাগিয়ে বড় আকারের মডেল তৈরিতে সক্ষম হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ছ্যং। হুয়াওয়ে জানায়, ফাইন্যান্স, উৎপাদন, ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা ও উন্নয়ন, কয়লা খনি ও রেলের মতো অসংখ্য শিল্পে বেশ মূল্যবান জায়গা করে নিয়েছে পাংউ সিরিজ।

আবহাওয়ার উপর পাংউ’র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি গবেষণাপত্র বিশ্বের শীর্ষ বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘নেচারে’ প্রকাশিত হয়। সেখানে আরো স্পস্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে নির্ভুল আবহাওয়ার পূর্বাভাস পেতে গত ৪৩ বছরের আবহাওয়ার তথ্য কাজে লাগিয়ে একটি আবহাওয়া পূর্বাভাস বলে দিতে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল বানানো সম্ভব। 

শুধু আবহাওয়ার পূর্বাভাসই নয়, সেকেন্ডের ভেতর আর্দ্রতা, বাতাসের গতি, তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের চাপও অনুমান করতে পারে এই আধুনিক মডেল। গবেষণাপত্র অনুযায়ী, গতানুগতিক পূর্বাভাস প্রক্রিয়া থেকে ১০ হাজার গুণ দ্রুত পূর্বাভাস দিতে পারে পাংউ মডেল। 

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

চীন-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে বৈজ্ঞানিক আদান-প্রদানে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা

 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক বেশি এগিয়েছে চীন। একুশ শতকের সকল অতিপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তিতে অচিরেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে চীন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছে দেশটি। আর এই দেশের সঙ্গে তরুণ বিজ্ঞানী আদান-প্রদানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই দেশের মধ্যে বৈজ্ঞানিক আদান-প্রদান ও গবেষণা এগিয়ে নিচ্ছে দুই দেশকেই। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আফরিন মিম-

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে নিজের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করতে তরুণ বয়সে চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার নারী বিজ্ঞানী নোকুথুলা মুচুনু। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী।

ইয়াং সায়েন্টিস্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাতজন তরুণ গবেষক চীনে ভ্রমণ শুরু করেন। মুচুনু ছিলেন সেই প্রোগ্রামের একজন। চীনের থিয়ানচিন ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সুযোগ পান তিনি।

চীনের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক আদান-প্রদান এবং সহযোগিতা গবেষণা এগিয়ে নিতেই এই প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।  শিখেছিলেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন খুঁটিনাটি, যা এখনো নিজের গবেষণায় কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, ফাইভ-জি ওয়্যারলেস, কোয়ান্টাম তথ্যবিজ্ঞান, বায়োটেকনোলজি ও সবুজ জ্বালানি- সব ক্ষেত্রেই এখন বিশ্ব কাপাচ্ছে চীন। আর সেই দেশে গিয়ে তরুণ বিজ্ঞানীদের বিকাশে এই প্রোগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করেন এই মুচুনু। মুচুনু বিশ্বাস করেন ইয়াং সায়েন্টিস্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম তরুণ গবেষকদের জ্ঞান শেয়ার করতে এবং নতুন দক্ষতা অর্জনে অনন্য ভূমিকা পালন করে।

মুচুনু বলেন, "এই প্রোগ্রামের প্রথম দলে থাকতে পেরে আমি ধন্য। আমার অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিল। কেননা আমি গবেষণা কাজ করতে বরাবরই আগ্রহী ছিলাম।  এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই দেশে এসে জানতে পেরেছি চীনারা কত সহজে, কত নিখুঁতভাবে গবেষণা কাজ করে থাকে।” 

দেশে ফিরে মুচুনু  পিএইচডি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করছেন। গবেষণায় তিনি চীন থেকে লব্ধ জ্ঞান শেয়ার করেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। পাশাপাশি এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা গবেষণায় চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে মুচুনু বলেন, "আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি এবং এখনও আমার শিক্ষার্থীদের বলছি, নিজেদেরকে গন্ডির বাইরে নিতে হবে। চীনের চিন্তাভাবনার একটি ভিন্ন উপায় এবং গবেষণার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা রয়েছে, যা আপনার গবেষণা কাজকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।”

চলতি বছরের শুরুতে চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে পিপল-টু-পিপল এক্সচেঞ্জ মেকানিজমের বৈঠকে স্বাক্ষরিত হয় নতুন সহযোগিতা চুক্তি, যার মূল ক্ষেত্র হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

 

|| প্রতিবেদন: আফরিন মিম

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর অ্যাওয়ার্ড পেলেন চীনা বিজ্ঞানী

 

এবার ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন একজন চীনা বিজ্ঞানী ও তার দল। ইউরোপিয়ান পেটেন্ট অর্গানাইজেশন-বহির্ভূত দেশের ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার জেতেন তারা। বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যাটারি বিস্ফোরণ এবং আগুন লাগার ঝুঁকি কমিয়ে আনায় এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয় বিজ্ঞানী উ কাই ও তার দলকে। 

সম্প্রতি পূর্ব স্পেনের ভ্যালেনসিয়ায় এক অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় বলে জানায় ইউরোপিয়ান পেটেন্ট অফিস। 

কনটেমপোরারি এমপেরেক্স টেকনোলোজি কর্পরেশন লিমিটেডের প্রধান বিজ্ঞানী উ কাই। তিনি ও তার দল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ওপর এমন এক কভার বসিয়েছেন, যা ব্যাটারির নিরাপত্তা ঝুঁকি কমিয়ে আনে অনেকাংশেই। ইউরোপিয়ান পেটেন্ট অফিস বলছে, এই উদ্ভাবনের ফলে যেসব গাড়িতে দাহ্য ইলেক্ট্রোলাইট যুক্ত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো হয়ে উঠবে আরও নিরাপদ।  

বিজ্ঞানী উ কাই বলেন, “এই ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর পুরস্কারটি আমার ও আমার দলের জন্য বেশ প্রেরণাদায়ক। বিশ্বের কিছু সেরা বিজ্ঞানীর সাথে আমাদের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এই পুরস্কার। আমরা তাদের সাথে আমাদের আইডিয়া শেয়ার করতে পারছি, যা আমি মনে করি আমাদের জন্য খুবই উপকারী।” 

বিশ্বজুড়ে ৬০০ বিজ্ঞানীর মধ্য থেকে ইউরোপিয়ান ইনভেন্টর পুরস্কারের বিজয়ী নির্বাচন করা হয়েছে। তাদের অনেকের উদ্ভাবনের লক্ষ্যই ছিলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সুন্দর, সহজ ও নিরাপদ করে গড়ে তোলা।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী