নিখিল চীনে ডিজিটাল গ্রামের নমুনা স্থাপন করেছে শি পা থোং গ্রাম
2023-07-07 16:17:07

“আসসালাম আলাইকুম, খাং খাং’র লাইভে সবাইকে স্বাগতম’। শি পা থোং গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভকারী শি খাং আগের মতো তাঁর লাইভ শুরু করেছেন। তিনি বর্তমানে এ গ্রামে একজন ক্যাডার। সোনার রেপসিড ক্ষেত্র এবং গভীর পাহাড়ে অবস্থিত মিয়াও জাতির বাড়িঘর অতিক্রম করে শি খাং তার আজকের লাইভ শুরু করেছেন।

এমন দৃশ্য প্রায়শই এ গ্রামে দেখা যায়। পাথরের তৈরি পথে হাঁটলে আপনি দেখতে পাবেন যে, চার্জ করা যায় এবং সতর্কতা জারি করা যায় এমন আধুনিক স্মার্ট লাইট পোল যেখানে সেখানে দেখা যায়। পর্যটকরা কিউআর কোড স্ক্যান করে নিজের পণ্য তুলে নেন। টিকটক দেখা এবং লাইভ করাসহ নানা বিনোদনে আনন্দ ও হাসির শব্দ শোনা যায়। ডিজিটাল বাতাসে শি পা থোং গ্রাম আরামদায়ক বাসস্থানে পরিণত হয়েছে।

“প্রথমে আমাকে অবাক করে দিয়েছে যে, ২০২০ সালে শি পা থোং গ্রামে ফাইভ জি ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রামের জন্য আরও ইতিবাচক শক্তি যুক্ত করেছি।”

শি খাং জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শি পা থোং গ্রাম আবারও প্রাণবন্ত হয়েছে। আগে বাইরে কাজ করে যাওয়ার তরুণরা গ্রামে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। শি খাং তাদের মধ্যে একজন।

২০১৯ সালের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি শি পা থোং গ্রামে ফিরে আসেন। সে সময় থেকে তিনি ক্যামেরায় বাস্তব গ্রামীণ জীবন তুলে ধরা শুরু করেন এবং সুনির্দিষ্টভাবে ইন্টারনেটে লাইভ করে শি পা থোং গ্রামের গল্প শোনান। লাইভস্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের উপার্জন ৫ লাখ ইউয়ানের বেশি বাড়তে সাহায্য করেন তিনি। শি খাং বলেন,  ‘আগে আমি কেবল বাড়িতে লাইভস্ট্রিমিং দেখতাম। ফাইভ জিসহ নেটওয়ার্ক উন্নয়নের ফলে বর্তমানে আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে কৃষিক্ষেতে বৈশিষ্ট্যময় পণ্য পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। ইন্টারনেটের পাখা কাজে লাগিয়ে শি পা থোংয়ের বৈশিষ্ট্যময় পণ্য নিখিল চীন, এমন কি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে”।

ঠিক লাইভস্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে রঙিন মিয়াও জাতির সূচীকর্ম চীনের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। গ্রামে নারীদের নতুন পরিচয়ও পেয়েছেন। শি পা থোং গ্রামের মিয়াও জাতির সূচীকর্ম সমবায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শি শুন লিয়ান বলেন, ‘বিক্রি নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। আমাদের মিয়াও জাতির সূচীকর্ম উন্নত হয়েছে। আমাদের জীবন-যাত্রাও অধিকতর ভালো হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে অপটিক্যাল ফাইবার প্রতি বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর ২০২০ সালের মধ্যে ফাইভ জি উন্নত হওয়া পর্যন্ত বর্তমানে শি পা থোং গ্রামে অত্যাধুনিক ইন্টারনেট যুক্ত করা হয়েছে। অনেক গ্রামবাসী ইন্টারনেটের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং নিজের উপার্জন বাড়িয়েছে। যা চীনে দারিদ্র্যবিমোচন এবং সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য গ্রাম পর্যায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

শি পা থোং গ্রামের স্মার্ট পরিচালনা কেন্দ্রে বিশাল স্ক্রিনে রিয়েল-টাইম সংখ্যাগুলো ক্রমাগত দেখা যায়। ডেটা বিশ্লেষণ, ভিআর’র অভিজ্ঞতা নেওয়া এবং স্মার্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো এই স্ক্রিনে প্রতিফলিত হয়েছে।

চায়না টেলিকমের হু নান প্রদেশের সিয়াং সি শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ‘শি পা থোং গ্রামে ডিজিটাল গ্রামীণ প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চায়না টেলিকম ইতোমধ্যেই ২০ লাখ ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে”।  পরিকল্পনা অনুযায়ী শি পা থোং ডিজিটাল গ্রামীণ প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার কাজ দুই ধাপে শেষ করা হবে। প্রথম ধাপে এ দর্শনীয় স্থানের তথ্য প্ল্যাটফর্ম, লাইভস্ট্রিমিং, এক কিউআর কোডের মাধ্যমে দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা এবং আরকটি স্ক্রিনের মাধ্যমে পরিচালনা ব্যবস্থা, হোটেলের আইটিভি, ফাইভজি মেসেঞ্জারসহ ১০টি অংশ প্রতিষ্ঠিত হবে।

বর্তমানে একটি কিউআর কোডের মাধ্যমে দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানো এবং একটি স্ক্রিনের মাধ্যমে পরিচালনা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যার ফলে কোনো আকস্মিক ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুলিশকে কল করবে। দর্শনীয় স্থানের কর্তৃপক্ষ স্মার্ট সাউন্ড কলামের মাধ্যমে শিগগিরি রেডিও সিগনাল প্রচার করতে পারবে এবং কাছাকাছি নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করতে পারবে।

২০২২ সালে শি পা থোং গ্রাম বেশ কয়েকবার দেশের বিভিন্ন স্থান ও জেনিভেজুয়েলাসহ নানা দেশের সঙ্গে অনলাইনে দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে। দূর পাহাড়ে অবস্থিত এই মিয়াও জাতির বাসস্থান তথ্যায়নের মাধ্যমে পাহাড় অতিক্রম করে বিশ্বের কাছে চলে গেছে।

(রুবি/তৌহিদ)