চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণায়ের প্রেস ব্রিফিং
2023-07-07 13:43:55

জুলাই ৭: গতকাল (বৃহস্পতিবার) চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র শু ইয়ু থিং চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে চীনের পরিষেবা বাণিজ্যের তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়ামের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রশ্নের জবাব দেন। এ নিয়েই আজকের সংবাদ পর্যালোচনা।

 

অপটিক্যাল চিপসের জন্য গ্যালিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। সম্প্রতি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসন  গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম-সম্পর্কিত পণ্যের উপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শু ইয়ু থিং ওইদিন এ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে বলেন, গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম-সম্পর্কিত পণ্যগুলোর সামরিক ও বেসামরিক ব্যবহারের জন্য সুস্পষ্ট আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এ ধরনের পণ্যগুলোর উপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা একটি আন্তর্জাতিক অনুশীলন। চীনের এই ব্যবস্থা কোনও নির্দিষ্ট দেশকে লক্ষ্য করে নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

তিনি বলেন,

 “বিশ্বের প্রধান দেশগুলো সাধারণত কিছু পণ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। চীন সরকার আইন অনুযায়ী গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম-সম্পর্কিত পণ্যগুলোর ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করেছে, যাতে সেগুলোর বৈধ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এর উদ্দেশ্য হলো জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং আরও ভালোভাবে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালন করা। এটা উল্লেখ করা উচিত যে, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ মানে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা নয় এবং যারা এ সম্পর্কিত নিয়ম মেনে চলবে তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হবে। চীন সরকার যে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে তা কোনও নির্দিষ্ট দেশকে লক্ষ্য করে নয়।”

 

শু ইয়ু থিং বলেন, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত ঘোষণা প্রকাশের আগে বেইজিং চীন-যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন-ইইউ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সংলাপ চ্যানেলের মাধ্যমে অগ্রিম বার্তা দিয়েছিল। এই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ১ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

সম্প্রতি কোনও কোনও গণমাধ্যম জানায় যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিপ রপ্তানির উপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বিবেচনা করছে। কিছু আমেরিকান কোম্পানি বলেছে, চীনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিপ রপ্তানি সীমাবদ্ধ করা হলে তা এখনই গুরুতর প্রভাব ফেলবে না, তবে এর ফলে আমেরিকান শিল্প স্থায়ীভাবে চীনে তাদের সুযোগ হারাবে। এ প্রসঙ্গে শু ইয়ু থিং জোর দিয়ে বলেন, চীন বিশ্বের বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর বাজার এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা তাদের নিজেদের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে।

 

তিনি বলেন,

 “যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছুদিন যাবৎ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অপব্যবহার করে আসছে, চীনের সেমিকন্ডাক্টর খাতকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে এবং কৃত্রিমভাবে বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর বাজারকে বিভক্ত করছে। যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ বিশ্বের অবাধ বাণিজ্যকে বিঘ্নিত করেছে, আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক নিয়ম উপেক্ষা করেছে এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতি লঙ্ঘন করছে। সেমিকন্ডাক্টর হলো শ্রম ও সহযোগিতার বৈশ্বিক শিল্প বিভাগের একটি আদর্শ উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্রের এ আচরণ কেবল চীনা কোম্পানির বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করবে না, বরং বহু দেশ ও অঞ্চলের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিনিময় এবং আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতায় বাধা সৃষ্টি করবে।”

 

শু ইয়ু থিং বলেন, চীনের চিপ বিক্রির পরিমাণ এ ক্ষেত্রে বিশ্বের মোট লেনদেনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, যা চীন ও অন্যান্য দেশের কোম্পানিগুলোর পারস্পরিক কল্যাণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য লাভজনক সহযোগিতার ফল।

 

চীন ও ইউরোপের আর্থ-বাণিজ্যেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি প্রসঙ্গে শু ইয়ু থিং ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বেইজিং নবম চীন-ইইউ উচ্চ-স্তরের আর্থ-বাণিজ্যিক সংলাপের ফলাফল-পরবর্তী কাজের বাস্তবায়নের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কাজকে এগিয়ে নিতে চায়। তিনি বলেন,

 

 “বর্তমানে দুই পক্ষ দশম উচ্চ-স্তরের আর্থ-বাণিজ্যিক সংলাপ নিয়ে আলোচনা করছে। চীন ইইউর সঙ্গে সংলাপের প্রস্তুতির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে এবং যৌথভাবে দ্বিপাক্ষিক আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক।”

 

একই দিন চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসের বাণিজ্যের পরিসংখ্যানও প্রকাশ করেছে। শু ইয়ু থিং জানান, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে চীনের পরিষেবা বাণিজ্য সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখেছে। পরিষেবা আমদানি-রপ্তানি ওই সময় ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে পৌছায়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জ্ঞান-নিবিড় সেবা বাণিজ্যের অনুপাত বেড়েছে বলে মুখপাত্র উল্লেখ করেন।

 

লিলি/রহমান