আকাশ ছুঁতে চাই ২৫
2023-07-06 18:09:01

 

১. স্বপ্ন বুননের কারিগর ই হুয়া

২. প্যারেনটিং বিষয়ে কর্মশালা

৩.  অদম্য চিয়াং চাং চিই

৪. ফিবা নারী বাস্কেটবল এশিয়া কাপ জিতে নিল চীন

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

স্বপ্ন বুননের কারিগর ই হুয়া

চীনে এখন  অনেক তরুণ তরুণী শহরের চাকচিক্যময় জীবনের আকর্ষণ ত্যাগ করে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে। গ্রাম পুনরুজ্জীবনে অংশ নিচ্ছেন তারা। এমনি একজন তরুণী ই হুয়া।

চীনের মিয়াও জাতির তরুণী ই হুয়া শুধু নিজের জীবনকেই গড়ে তোলেননি, সেই সঙ্গে গড়ে তুলেছেন নতুন গ্রামের স্বপ্ন। চলুন শোনা যাক এই তরুণীর গল্প।

মধ্য চীনের হুনান প্রদেশ। এখানে সিয়াংসি থুচিয়া ও মিয়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারে অবস্থিত চিশোও সিটি। ছোট্ট একটি পাহাড়ি গ্রাম চোংহুয়াং। এখানে মিয়াও জাতির অনেক মানুষ বাস করেন। মিয়াও জাতির নারীরা বুনন শিল্পে দক্ষ। বিশেষ ধরনের এমব্রয়ডারিতে পারদর্শীরা তারা। এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে তারা এই কারুশিল্প বহন করেন।

তবে অনেক তরুণতরুণী একসময় উন্নত জীবন ও জীবিকার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেছেন। তারা হয়তো এই শিল্পের সঙ্গে সংযোগকে হারিয়ে ফেলেছেন।

চীনে বর্তমানে চলছে গ্রাম পুনরুজ্জীবনের ধারা। অনেক তরুণ তরুণী গ্রামে ফিরে আসছেন এবং নিজের গ্রামের উন্নয়নে কাজ করছেন।

 

এমনি একজন তরুণী ই হুয়া। ৭০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সিয়াংসি এলাকায় কেটেছে তার শৈশব। ছোটবেলা থেকেই মিয়াও লোকজ শিল্প, ঐতিহ্য ও নকশা তাকে মুগ্ধ করে। তার ভিতরে ছিল শিল্পী সত্তা। কিন্তু জীবন জীবিকার প্রয়োজনে তার পরিবার থেকে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিতে। তিনি ছাংশার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিউনিকেশন টেকনোলজিতে গ্র্যাজুয়েট হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে চাকরিও শুরু করেন একটি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তার সবসময়েই মনে হতো যদি মিয়াও এমব্রয়ডারি নিয়ে কিছু করতে পারতেন। তিনি তার শিল্পচর্চা চালিয়ে যেতে থাকেন। ২০০৯ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে মিয়াও এমব্রয়ডারি নিয়ে শিল্পচর্চাই করবেন। তিনি চাকরি ছেড়ে চলে যান সাংহাই। সাংহহাই ও কুয়াংচৌতে ডিজাইনিংয়ের উপর পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

দুই বছর পর তিনি সিয়াংসিতে ফিরে এসে ছোট্ট একটি কারখানা দেন। মাত্র দুটি সেলাই মেশিন নিয়ে যাত্রা শুরু করেন ই হুয়া।

২০১২ সালে তিনি আধুনিক টেইলরিং শিল্পের সঙ্গে মিয়াও এমব্রয়ডারির সংযোগ ঘটিয়ে পোশাক নির্মাণের একটি প্রেতিষ্ঠান গড়েন। তার স্বামী লিন চিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ করেন।

তিনি স্থানীয় নারীদের এমব্রয়ডারি এবং পোশাক তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেন। গড়ে তোলেন একটা কর্মীদল।

ই হুয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০০ গ্রামীণ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের আয় ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ইয়ুয়ানে পৌছেছে।

সরকারি সহায়তা ও স্বীকৃতি মিলেছে। তিনি ইতালির মিলানে মিয়াও এমব্রয়ডারির প্রদর্শনী করেছেন।

এখন ই হুয়া এবং তার প্রতিষ্ঠান একটি বড় সাফল্যের প্রতীক। মিয়াও এমব্রয়ডারিযুক্ত পোশাকই শুধু নয়, ব্যাগ বেডকভারসহ আরও অনেক পণ্য তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি মিয়াও সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানও আয়োজন করছেন তারা। ফলে এই গ্রামে স্থানীয় পর্যটন শিল্প চাঙা হয়েছে।

ই বলেন, জীবনে আপনি অনেককিছুই করতে পারেন। তবে অবৈষয়িক সংস্কৃতিকে রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সুযোগ পাওয়া নিঃসন্দেহে গৌরবের। এই কাজ করার মাধ্যমে  মিয়াও এমব্রয়ডারির মতো একটি বিস্ময়কর সংস্কৃতি রক্ষা পাচ্ছে পাশাপাশি গ্রামীণ পর্যটন বিৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন সম্ভব হচ্ছে।

তরুণী ই হুয়া নিজের স্বপ্নকে যেমন বুনন করেছেন তেমনি গ্রামের অনেক নারী তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছেন স্বপ্নের ঠিকানা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা রহমান

 

প্যারেনটিং বিষয়ে বিশেষ কর্মশালা

 

শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য চাই প্যারেনটিং বা অভিভাবকতার সঠিক জ্ঞান। শুধু মা নয়, বাবা এবং অন্য কেয়ার গিভারদেরও জানা দরকার শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান ও তথ্য।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এবং চায়না ন্যাশনাল চিল্ডরেন’স সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি বেইজিংয়ে আয়োজিত হয় এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। লাইট এভরি মোমেন্ট অব চাইল্ডহুড বা শৈশবের প্রতিটি মুহূর্তকে আলোকিত করা শীর্ষক এই কর্মশালায় বাবা , মা, কেয়ারগিভারদের জানানো হয় শিশুর বিকাশ বিষয়ক সঠিক তথ্য। শিশুর সঙ্গে অভিভাবকদের দ্বিমুখী যোগাযোগ গড়ে তোলা হয়।

হবু মা বাবাকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এই কর্মশালায়। প্যারেনটিং ওয়ার্কশপের মূল লক্ষ্য হলো শিশুবান্ধব সমাজ গড়ে তোলা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

অদম্য চিয়াং চাং চিই

 চীনের এক সাহসী তরুণী চিয়াং চাং চিই । শৈশবে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়েও জীবনের পথে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন এই তরুণী। তার এই অদম্য জীবনীশক্তি দিয়ে তিনি আরও অনেক নারীর জন্য হয়ে উঠেছেন প্রেরণা। চলুন শোনা যাক এই অদম্য সাহসী নারীর গল্প।

চলতি বছর কয়েক মিলিয়ন শিক্ষার্থী চীনের কলেজ এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ভালো ফলাফল করেছেন। এই পরীক্ষার্থীদের একজন ছিলেন চিয়াং চাং চিই। তাকে প্রথমে দেখলে চমকে উঠতে হয়। কারণ তার দুটি পা নেই। শুধু শরীরে উপরের অংশ রয়েছে এই মেয়েটির। অথচ মুখে তার বিজয়ীর হাসি।

২০১০ সালে মাত্র ছয় বছর বয়সে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় দুই পা হারায় চিয়াং। সেই বয়সেই তাকে যখন অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন সে তার মাকে বলে যদি তুমি কাঁদো তাহলে আমার যন্ত্রণা বাড়বে। তুমি কেঁদোনা। অপরারেশন সফল হবে।

সত্যিই প্রাণে বেঁচে যায় চিয়াং কিন্তু হারায় দুই পা। সামনে তার অপেক্ষা করে এক কঠিন জীবন। কিন্তু অদম্য চিয়াং এই জীবন সংগ্রামকে হাসিমুখে মেনে নেয়। সে এমনকি নাচের ক্লাসেও ভর্তি হয়। দুই পা ছাড়া নাচ কিভাবে সম্ভব? ভেবে পাননা শিক্ষকরা। তবে শেষ পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানে সে নাচ শিখতে শুরু করে।

তার মা তাকে সহায়তা করেন। কয়েক বছর নাচ শেখার পর, মা ও মেয়ের যৌথ নাচের প্রদর্শনী হয় বিভিন্ন মঞ্চে। দারুণ সাড়া পান তারা। ২০১৮ সালে তার জীবনের গল্প নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়। অনেকে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে আর্থিক সাহায্য দিতে চান।

চিয়াংয়ের বাবা মা ধনী নন। কিন্তু তারা কারও দয়া বা করুণা গ্রহণ না করে মেয়েকে আত্মনির্ভরশীর করতে চান। তাই কারও কোন আর্থিক সহায়তা তারা গ্রহণ করেননি।

স্কুলের লেখাপড়াতেও অদম্য চিয়াং বেশ ভালো ফলাফল করতে থাকে। হাইস্কুল পর্যন্ত সে ক্লাসে মনোযোগী ও ভালো ছাত্রী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে।

এবছর কাওখাও পরীক্ষার দিন চিয়াংয়ের পেটব্যথা জ্বর ছিল। কিন্তু অসুস্থতা তাকে দমাতে পারেনি। বাবা তাকে পৌছে দেন পরীক্ষার হলে। মা অপেক্ষা করেন বাইরে।

অসুস্থতা সত্তেও বেশ ভালোই ফলাফল করেছে চিয়াং। চিরায়ত সাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া করবেন তিনি।

এইভাবে অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন চিয়াং।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

ফিবা নারী বাস্কেটবল এশিয়া কাপ জিতে নিল চীন

 


ফিবা নারী বাস্কেটবল এশিয়া কাপে চীনা নারী বাস্কেটবল দল ফাইনাল ম্যাচে জাপানকে হারিয়ে ৭৩-৭১ স্কোর করে ১২ বছর পর আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। চীনের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের এই বড় সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছে দেশের ক্রীড়াপ্রিয় জনগণ।

২০১১ সালের পর এশিয়া কাপ জিতে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে  থাকা চীন অবশেষে এই কাপ জয় করলো।

নারী বাস্কেটবল দলের কোচ চাং ওয়েই মনে করেন, তার দল ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্য পাবে।

এই সাফল্যজনক ঘটনার  সঙ্গেই শেষ হচ্ছে আজকের আকাশ ছুঁতে চাই।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

 

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল