ই জাতির সেলাই শিল্প উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছেন স্নাতক শিক্ষার্থীরা
2023-07-06 15:42:13


গ্রামের কথা বললে সবার মনে হয়, তা ‘ফ্যাশনেবল নয়’। তবে চীনের ইউননান প্রদেশের ছু সিয়োং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সূচীকর্মের মেয়েরা এ ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছে। তাদের সূচীকর্ম বেইজিং, শাংহাই, নিউইয়র্ক এবং মিলান ফ্যাশন সপ্তাহে হাজির হয়েছে। ছু সিয়োং ই জাতির সূচীকর্ম এবং মাজু সংস্কৃতির যৌথ নামে সাংস্কৃতিক পণ্যগুলো বিশ্বের ১২ হাজারেরও বেশি দোকানে অনলাইন ও অফলাইনে বিক্রি হচ্ছে। সূচীকর্মের মেয়েরা ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, স্পেন ও পতুর্গালসহ নানা দেশের পোশাক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের সূচীকর্মের অর্ডারের মূল্য ৫০ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে সেসব মেয়েরা একটি ছোট সুই দিয়ে বিশ্বকে অবাক করার বড় শিল্প গড়ে তুলেছেন।

৫ বছর আগে ছু সিয়োং অঞ্চলের ইয়োং রেন উপজেলার সূচীকর্ম কমিটির চেয়ার‍ম্যান লি রু সিউ খুব চিন্তিত ছিলেন যে, ‘ছোট মেয়েরা এখন সূচীকর্ম করতে চায় কি?

 

লি রু সিউ’র বাবা মা সে অঞ্চলের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার নিয়ে কাজ করেছেন। লি রু সিউ ই জাতির বেশ কয়েকটি সূচীকর্মের পদ্ধতি জানেন। তিনি ছু সিয়োং অঞ্চলের ‘শীর্ষ দশ সূচীকর্মে নারী প্রকৌশলী’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি ই জাতির সূচীকর্ম খুব ভালোবাসেন এবং ৭ হাজারের ও বেশি ই জাতির পোশাক ও সূচীকর্ম সংগ্রহ করেছেন। এক সময় সূচীকর্ম তৈরি করার লোক অনেক কমে যায়। লি রু সিউ তাঁর নারী শিক্ষার্থীকে উত্সাহিত করতে নিজেই তাদের সূচীকর্ম ক্রয় করেন।

লি রু সিউ’র মতো ছু সিয়োং অঞ্চলের উ থিং উপজেলার মি সান জা গ্রামে জাতীয় পর্যায়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারী পু ইয়ু জেন; তিনি একটি গ্রামের পর আরেকটি গ্রাম, এক বাড়ির পর এক বাড়িতে গিয়ে সুষ্ঠু সূচীকর্মী খোঁজেন এবং তাদের লালন করার জন্য প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী সূচীকর্মীদের বিনা পয়সায় খাবার এবং থাকার জায়গা দেন।

সে সময় সূচীকর্মের কোনো বাজার হয় নি। লি রু সিউ’র দোকানে এক সময় কোনো বিক্রি হতো না। পু ইয়ু জেনের লালিত সূচীকর্মের মেয়েরাও কোনো উপার্জন করতে পারতো না। তারা আর সেলাই করতে চায় না।

এ পথে আগানো মুশকিল হয়ে ওঠে। তবে, ই জাতির সূচীকর্ম উন্নয়নে তারা আস্থাবান।

ছু সিয়োং ই জাতির শতাধিক ধরনের পোশাক রয়েছে। ই জাতির সূচীকর্মে পুরো শরীরে ফুল থাকে। এ সূচীকর্মে বিভিন্ন রঙ ও স্টাইলের বিভিন্ন তাত্পর্য রয়েছে। লি রু সিউ’র সংগ্রহ করা সূচীকর্ম নকশা থেকে রঙ বাছাই ও সেলাই সম্পূর্ণ আলাদা।

এ সূচীকর্ম সবার পছন্দ না। এমন কি, কেউ মনে করে, এটি ফ্যাশনেবল নয়। তবে লি রু সিউ মনে করে, ‘প্রতি সূচীকর্ম হস্তশিল্পী মেয়ের মনে একটি ফুল আছে। তারা প্রত্যেকই একজন নকশাকার।

 

চলতি বছরের দুই অধিবেশনে রঙিন ই জাতির পোশাকে চিন রুই রুই গণমহাভবনে প্রবেশের পরই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার গায়ে পরেছেন এমন একজন জাতীয় গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধি বলে মন্তব্য করেছে গণমাধ্যম।

চিন রুই রুই’র পরিবারে ৮ প্রজন্ম ই জাতির সূচীকর্ম ধরে রেখেছেন। চিন রুই রুই’র মা একজন প্রাদেশিক পর্যায়ের ই জাতির ঐতিহ্য উত্তরাধিকারী। তিনি জাতিগত পোশাক ও সূচীকর্ম বিক্রির জন্য সর্বপ্রথমে একটি দোকান খুলেছেন। ১০ বছর ধরে তাঁর চালানো ই জাতির সূচীকর্মের দোকান বর্তমানে ই জাতির সূচীকর্ম সাংস্কৃতিক প্রচার কোম্পানি লিমিটেডে পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাসের পর চিন রুই রুই দ্বিধা করেছিলেন যে, বড় শহরে ক্যারিয়ার গড়বেন কি না? তবে মায়ের সঙ্গে শেন জেন, শাংহাই ও বেইজিংসহ নানা শহরে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার পর ই জাতির সূচীকর্মের বাজার দেখে তিনি হোমটাউনে ফিরে আসেন এবং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপকে হিসেবে যোগ দেন। তার প্রচেষ্টায় কোম্পানিটি ই জাতির সূচীকর্মের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

২০২২ সালে তার কোম্পানির বিক্রির পরিমাণ ৭০ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্রিটেনের সঙ্গে ৬ হাজার ৫শ’ ই জাতির পোশাক বিক্রির অর্ডার পায় কোম্পানিটি। 

চিন রুই রুই’র মতো তরুণ প্রজন্মের সেলাইকারীদের যোগদানে ছু সিয়োং অঞ্চলের ই জাতির সূচীকর্ম শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।