কৃষি জগতে সুখবর নিয়ে এলো চীনের বিজ্ঞানীরা | শেকড়ের গল্প | পর্ব ২৫
2023-07-05 17:54:52

                                               

কৃষি জগতে সুখবর নিয়ে এলো চীনের বিজ্ঞানীরা | শেকড়ের গল্প | পর্ব ২৫

 

এবারের পর্বে রয়েছে

১. ধানের ছত্রাকবিরোধী জিন আবিষ্কার চীনা বিজ্ঞানীদের

২. কৃষিকাজ সহজ করছে ড্রোনের ব্যবহার

৩. সৃজনশীল পদ্ধতিতে চীনে তরমুজের আবাদ

৪.আধুনিক সুরক্ষিত কৃষির বিকাশে চীনের কার্যকর উদ্যোগ

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

 

১. ধানের ছত্রাকবিরোধী জিন আবিষ্কার চীনা বিজ্ঞানীদের

ধানের রোগ প্রতিরোধকারী জিন আবিষ্কার করে দারুণ এক সুখবর নিয়ে এসেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্য দিয়ে ৪০ শতাংশ ধান ব্লাস্ট রোগ থেকে রক্ষা পাবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। ভালো ফলাফল পাওয়ায়, অন্যান্য ফসলেও এ জিন প্রয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। 

ব্লাস্ট হলো ধানের ছত্রাকজনিত এক ধরনের মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগ। এ রোগে ধান আক্রান্ত হলে ফলন অনেকাংশে কমে যায়। 

চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোন সময় এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে ধান গাছ। এটি ধানের পাতা, গিট এবং নেক বা শীষে আক্রমণ করে থাকে। সে অনুযায়ী রোগটি পাতা ব্লাস্ট,  গিট ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট নামেও পরিচিত। এ রোগে আক্রান্ত হলে অনেক সময় বেশিরভাগ ফসলই নষ্ট হয়ে যায়।  

দীর্ঘ সময় গবেষণা করে সম্প্রতি চীনা বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের জিন আবিষ্কার করেছেন যা ধানগাছকে প্রতিরোধ করবে ব্লাস্ট ছত্রাক থেকে।   

এই গবেষণা কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন হুয়াচং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি কুওতিয়ান। এ বিষয়ে একাডেমিক জার্নাল নেচারে একটি গবেষণা পত্রও প্রকাশিত হয়েছে।

বর্তমানে, চীনে ব্রড-স্পেকট্রাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন সীমিত জাতের ধান রয়েছে। এ কারণে ক্লোনিং ব্রড-স্পেকট্রাম রোগ প্রতিরোধী জিন এবং ব্রড-স্পেকট্রাম প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবন করা হলো ফসলের রোগ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সুরক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

লি বলেন, তার দল এর আগে ব্লাস্ট প্রতিরোধী আরবিএল-ওয়ান নামক একটি জিন আবিষ্কার করে, কিন্তু এর ফলাফল খুব একটা সন্তোষজনক ছিলো না। এরপর ১০ বছর গবেষণা করে নির্দিষ্ট কিছু জেনোমকে লক্ষ্য করে নতুন জিন আরবিএল-ওয়ানটু আবিষ্কার করে।

অধ্যাপক লি কুওতিয়ান, গবেষণা দলের প্রধান

"হুপেই, চিয়াংসি এবং হাইনান প্রদেশের চারটি জায়গায় নতুন জিনের ব্যবহার করেছি। আমরা বেশ ভালো ফলাফল পেয়েছি। এই জিনের ব্যবহারের ফলে প্রায় ৪০ শতাংশ ফসল সংরক্ষণ করা সম্ভব।“

লি বলেন, জৈবিক প্রজনন প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রড-স্পেকট্রাম রোগ প্রতিরোধী জিন দ্রুত এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব।

 “নতুন এই জিনটি শুধু ধানে নয়, গম, ভুট্ট, টমেটো এবং অন্যান্য সবুজ সবজিতেই প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ভালো ফলাফল পেয়েছি। বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে অন্যান্য ফসলেও নতুন এই জিন প্রয়োগ করা যাবে।“

চীনের গবেষক দলের এ আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

 ২. কৃষিকাজ সহজ করছে ড্রোনের ব্যবহার

ড্রোন ব্যবহার করে সহজ হয়েছে চীনের কৃষিকাজ।  কেননা আধুনিক পদ্ধতিতে ড্রোন ব্যবহার করে জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর চিত্র দেখা যায় হরহামেশাই। এতে করে কৃষকের সময় যেমন বাঁচছে, তেমনি পুরো জমি ব্যবহার করে ভালো ফলনের প্রত্যাশাও করছেন কৃষকরা।

দক্ষিণ চীনের কুয়াংসিতে কীটনাশক ছিটাতে ড্রোনের ব্যবহার খুব বেশিদিন হয়নি। গেল কয়েক বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছিলো এই ড্রোন।

ড্রোনের সাহায্যে প্যানিকেল ইনিশিয়েশন স্টেজে এই কীটনাশক ছীটানো এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কুয়াংসি প্রদেশ জুড়ে। কেননা এটি একদিকে কৃষকের সময় যেমন বাঁচাচ্ছে, তেমনি কমিয়ে দিচ্ছে খরচ।

প্যানিকেল ইনিশিয়েশন স্টেজ বলতে সেই সময়কালকে বোঝায় যখন মাঠের প্রায় ৩০ থেকে ৫০  শতাংশ ধানের শীষ প্রায় ১  সেন্টিমিটার ফুটে ওঠে। এই সময়টায় পোকামাকড়ে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই প্রদেশের ছিংফেং এলাকায় দশ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ধান প্যানিকেল পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তাই বিভিন্ন জায়গায়ই দেখা যাচ্ছে ড্রোনের ব্যবহার।

কৃষকরা বলেছেন, একটি ড্রোন দিনে ১৩ হেক্টরেরও বেশি জমিতে একই পরিমাণে কীটনাশক ছিটানো যায়, যা হাতে ছিটানোর তুলনা ২০গুণ বেশি কার্যকর।

২০২৩ সালে কুইকাং শহরজুড়ে কৃষকরা ১ লাখ ১০হাজার হেক্টর আগাম ধান রোপণ করেছে। আর ৩৩ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ধুলা অপসারণে  ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোন।

 

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

৩. সৃজনশীল পদ্ধতিতে চীনে তরমুজের আবাদ

গ্রিনহাউজ পদ্ধতিতে চীনে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে তরমুজের। দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বেহাইয়ের চুকুয়াং ফার্মে একরকম সৃজনশীল পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।

এখানকার কৃষকদের সহযোগিতায় তরমুজের লতাগুলো লম্বালম্বিভাবে রাখা হয়। তাতে জায়গা লাগে কম এবং তরমুজগুলো কীটপতঙ্গ থেকে দূরে থাকে।

কৃষকরা বলেন, এখানে কুইলিং নামের বিশেষ জাতের তরমুজ চাষ করা হয়। একেকটির ওজন আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়ায় এ তরমুজগুলো ভীষণ মিষ্টি স্বাদের হয়।

ভালো মানের তরমুজ উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকে স্থানীয় সরকার। 

এ বছর প্রায় ৮ হেক্টর জায়গায় ২০০ টনের মতো তরমুজ উৎপাদন করা হয়েছে। প্রতি কেজি তরমুজ কৃষকরা বিক্রি করতে পারছেন ৩ থেকে ৪ ইউয়ানে।

কুইলিং ছাড়াও এই খামারে চাষ করা হয় হামি তরমুজ ও হানিডিউ তরমুজ। যত্ন নিয়ে চাষাবাদ করায় এগুলোর বেশ ভালো ফলন হয় এবং চাহিদাও অনেক।

 

প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

 

 

 

 

৪. আধুনিক সুরক্ষিত কৃষির বিকাশে চীনের কার্যকর উদ্যোগ

আধুনিক সুরক্ষিত কৃষির বিকাশে কার্যকর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন সরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য বাস্তবায়নে চারটি প্রাথমিক কাজ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয় জানায়, চারটি প্রাথমিক কাজের মধ্যে অন্যতম হলো কৃষিকাজে উপযুক্ত মেশিন নির্ধারণ এবং সাশ্রয়ী জ্বালানী নিশ্চিত করা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, মৎস্য শিল্প প্রধানত পরিবেশগত জলজ চাষের উপর গুরুত্ব দিবে। এছাড়া কৃষি পণ্যের সংরক্ষণ ও শুকানোর উপর জোর দেবে।

পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে,২০৩০ সালের মধ্যে চীনের কৃষিখাতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এবং এভাবে আধুনিক সুরক্ষিত কৃষির জন্য উদ্ভাবনের ভিত্তি তৈরি করা হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, আধুনিক সুরক্ষিত কৃষির বিকাশে বিনিয়োগ ভর্তুকি ও বিশেষ বন্ড ব্যবস্থার উপর আরো গুরত্ব দেবে চীন সরকার।

প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী