‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ২৫
2023-07-05 17:23:24

                              

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।      

১. সবার জন্য উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে চীন

 

একটি ন্যায়পরায়ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়তে যে চীন বদ্ধপরিকর তা দেশজুড়ে উচ্চমানের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে চীনের প্রচেষ্টাতেই প্রতিফলিত হয়। এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেনো উচ্চমানের শিক্ষা পায় এবং ঝরে না যায় সেদিকে বিশেষ নজর রাখছে চীন।

 

 

 

চলতি বছর মধ্য হুনান প্রদেশে ৪ লাখ ৭৭ হাজার শিক্ষার্থী জাতীয় কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৭২ জন শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধীত্বের ফলে বিশেষ ব্যবস্থার জন্য আবেদন করেন।

 

তেমনই একজন শিক্ষার্থী ওয়ু ওয়েইসং। আট বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। বিশেষায়িত এক বিদ্যালয়ে কেটেছে তার স্কুলজীবন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটি মিউজিক কলেজে পড়াশোনা করে পরবর্তীতে কম্পোজার হবেন। পরীক্ষায় যেনো তিনি সফল হতে পারেন সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ।

 

পরীক্ষা শুরু হবার আগের দিন তার বাবাকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের যে রুমে পরীক্ষা হবে সেখানে যান তিনি। তাকে প্রথম তলায় একটি রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে তাকে সাহায্য করতে সার্বক্ষণিক দু’জন শিক্ষকও নিয়োজিত ছিলো। 

 

 

হুনান প্রভিন্সিয়াল এডুকেশন এক্সামিনেশন ইনস্টিটিউটের এডমিশনস অফিসের উপ পরিচালক ওয়েই ইয়ং বলেন ২০১৭ সাল থেকে হুনান প্রদেশের কলেজগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারছেন।

 

‘২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আমাদের প্রদেশের কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু সবার জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করাই নয়, বরং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উচ্চশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে একটি ভালো কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে তোলা।‘  

 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমান অধিকার নিশ্চিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে চীন। বিশেষ করে সম্মান ও ন্যায্যতার সাথে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা দানে বিশেষভাবে সচেতন চীন সরকার।

 

বর্তমানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরাও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের লুচৌ শহরের কুলিন কাউন্টির একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় নানা চ্যালেঞ্জ পোহাতে হতো। স্কুলটির তিনটি ক্যাম্পাস থাকায় শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে সঠিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারতেন না। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা হতো। তবে এখন আধুনিক প্রযুক্তি, মোবাইল যোগাযোগ ও ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের কল্যাণে এ সকল সমস্যার সমাধান হয়েছে।

 

ভার্চুয়াল ক্লাসরুম সময় ও স্থানের সীমাবদ্ধতাকে জয় করেছে। ফলে আরো বেশি মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া হয়ে উঠেছে এখন আরো সহজ।

কুলিন শহরের সেকেন্ড প্রাইমারি স্কুলের প্রিন্সিপাল লিউ চংওয়েই বলেন চীনের ঐতিহ্যগত শিক্ষায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম।

 

‘’চীনা শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম। ইন্টারনেট বেসড এই প্লাটফর্মে শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়ে খুবই চমৎকার ভাবে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে ও শিখতে পারে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে তাদের মা-বাবাও অংশ নিতে পারেন। স্মার্টফোন বা অন্য স্মার্ট ডিভাইসের সাহায্যে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে অংশ নেওয়া যায়, যা শিক্ষাকে আরো সহজলভ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলেছে।‘’

 

গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাগত বৈষম্য মোকাবিলাতেও জোর দিচ্ছে চীন। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে, যেসব বিদ্যালয়ে সম্পদের অভাব রয়েছে সেখানে পাঠদানের জন্য দক্ষ শিক্ষকদের উৎসাহিত করছে চীন সরকার।

 

প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন

সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম

 

 

২.  ম্যাকাওতে যুব মিডিয়া অ্যাকশন ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে

 

তরুণদের উন্নয়নের স্বার্থে চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাওতে ‘ইয়ুথ অ্যান্ড ফিউচার’ মিডিয়া অ্যাকশন প্রচারাভিযান চালু করা হয়েছে।

গেল শনিবার এই প্রচারাভিযানটি সরকারের ম্যাকাও এসএআর এবং চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজির যৌথ স্পন্সরশিপে আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি ম্যাকাও ব্রডকাস্টিংকে উচ্চমানের প্রোগ্রামের একটি সিরিজ বিনামূল্যে সম্প্রচার করার অনুমোদন দেয় সিএমজি। 

 
 
যুব, কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ এবং মূল ভূখণ্ডে উচ্চ প্রযুক্তির উদ্যোগে শিক্ষামূলক ভ্রমণ অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাতে ম্যাকাও যুবকদের উন্নয়নের প্রচার করা যায় তাই এই ইভেন্টের উদ্দেশ্য।


আয়োজকরা জানান, ম্যাকাওয়ের তরুণদের কর্মজীবনের উন্নয়নে সহায়তা করার পরিকল্পনাগুলো যৌথভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকার, মিডিয়া এবং অন্যান্য উদ্যোগগুলোর সুবিধার্থে ম্যাকাও এসএআর সরকার এবং সিএমজি উভয়ই "এক দেশ, দুই ব্যবস্থা" নীতি মেনে পূর্ণাঙ্গ ভূমিকা রাখবে। 


আয়োজকের মতে, এটি ম্যাকাও এসএআর সরকার এবং সিএমজির মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতার ক্রমাগত গভীরতার আরেকটি উদ্ভাবনী অর্জন। এর ফলে চীনের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ম্যাকাও-এর সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে নতুন প্রেরণা যোগ হবে।

 

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম

 

৩. কুয়াংতংয়ে চায়না মিডিয়া গ্রুপের চাকরি মেলা

কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য স্নাতকদের জন্য একটি বড় আকারের আঞ্চলিক নিয়োগ প্রকল্প শুরু করেছে চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি। সম্প্রতি দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের চুহাই শহরে এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়।  

বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা নতুন স্নাতকদের কর্মসংস্থান বাড়ানো এই প্রকল্পের  লক্ষ্য। প্রায় ২০০ উদ্যোগ এবং প্রতিষ্ঠান চুহাইতে বিশেষ এই মেলায় নিবন্ধন করে এবং ৬হাজার উচ্চ-মানের পদ অফার করে।

 

চাকরি মেলাটি "IGUOPIN" নামে পরিচিতি পেয়েছে। এটি একটি নতুন মডেল তৈরি করেছে যা চাকরি খোঁজা এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

 

চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিভা-সম্পর্কিত নীতিগুলো সম্পূর্ণরূপে বুঝতে এবং কর্মসংস্থানের সর্বোত্তম পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করছে এটি।  ২০২০ সালের মার্চ থেকে মেলার টানা চারটি সংস্করণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম  

৪. এশিয়ান গেমসের আগে হংকং-ম্যাকাও তরুণদের চেচিয়াং সফর 

হংকং এবং ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হাজারের বেশি যুবক চেচিয়াং প্রদেশে তাদের পাঁচ দিনের সফর শুরু করতে সোমবার হাংচো পৌঁছেছেন।

হংকং ও ম্যাকাও থেকে যুবারা জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কে আরও জানতে এবং এশিয়ান গেমসের উষ্ণ পরিবেশ অনুভব করতে চেচিয়াং সফরে এসেছেন।

চেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাংচৌতে অনুষ্ঠিত হবে ২০২২ সালের এশিয়ান গেমস। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্রীড়া ইভেন্টটি স্থগিত করা হয়েছিল। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর এশিয়ার ১০ হাজারের বেশি ক্রীড়াবিদ জড়ো হচ্ছেন হাংচৌতে। ৪০টি খেলায় ৪৮৩টি ইভেন্টে পদকের জন্য লড়বেন তারা।

 

হংকং এবং ম্যাকাও যুবাদের স্বাগত জানাতে হাংচৌ অলিম্পিক স্পোর্টস সেন্টারের টেনিস ভেন্যুতে একটি শৈল্পিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চেচিয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করা, এশিয়ান গেমসকে আলিঙ্গন করা এবং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া শীর্ষক তিনিটি অংশ ছিল।

ম্যাকাওয়ের যুবা হুসুয়েহ ইয়া-ওয়েন বলেন, ‘মূল ভূখণ্ডে এত বড় মঞ্চে ম্যাকাওয়ের প্রতিনিধিত্বমূলক গান গাইতে পারা আমার জন্য প্রথম। এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ এবং আমি এটি করতে পেরে বেশ সম্মানিত বোধ করছি’।

 

পাঁচ দিনের সফরে, হংকং-ম্যাকাওর যাবারা এশিয়ান গেমসের ভেন্যু, বিখ্যাত নৈসর্গিক স্থান এবং ঐতিহাসিক স্থান, সুন্দর গ্রাম এবং চেচিয়াংয়ের ১১টি শহরের উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প পার্ক পরিদর্শন করবেন।

 

প্রতিবেদকঃ মাহমুদ হাশিম

সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী