বিজ্ঞানবিশ্ব ২৫তম পর্ব
2023-07-03 16:11:47

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

২৫তম পর্বে যা থাকছে:

* শীর্ষ দশ উদীয়মান প্রযুক্তির ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ

* গ্রীষ্মকালীন দাভোসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শন

* সিক্স জি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে জোর দেবে চীন

 

 

শীর্ষ দশ উদীয়মান প্রযুক্তির ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ

 

সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত সামার দাভোস ফোরামে শীর্ষ দশটি উদীয়মান প্রযুক্তির ওপর বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। প্রতিবেদনে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সমাজে যে সব প্রযুক্তি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বিগত ১১ বছর ধরে ফ্রন্টিয়ার মিডিয়ার সহযোগিতায় এই বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।

আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরে ব্যাটারিচালিত পরিধানযোগ্য মেডিক্যাল ডিভাইস, মৌলিক কনটেন্ট বানাতে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বিমানের টেকসই জ্বালানির মতো প্রযুক্তি আমাদের সমাজে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে, এমনটাই উঠে এসেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদনে।

২০১১ সাল থেকে শীর্ষ দশ উদীয়মান প্রযুক্তির উপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। তখন থেকে এই প্রতিবেদনে সেসব প্রযুক্তির নামই বারবার উঠে এসেছে যেগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে ছোট প্রযুক্তি মনে হলেও পরবর্তীতে সেগুলোই বিশ্বব্যাপী ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে মেসেঞ্জার রিবোনিউক্লিক অ্যাসিড ভ্যাকসিনের নাম উঠে আসে। পরবর্তীতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই বেশিরভাগ করোনার টিকা তৈরি করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচায়। 

এ বছর এই প্রতিবেদনে শীর্ষ দশ উদীয়মান প্রযুক্তি হিসেবে স্থান পেয়েছে- ফ্লেক্সিবল ব্যাটারি, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিমানের টেকসই জ্বালানি, ডিজাইনার ফেজ, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মেটাভার্স, পরিধানযোগ্য উদ্ভিদ সেন্সর, স্যাপিটাল ওমিক্স, ফ্লেক্সিবল নিউরাল ইলেকট্রনিক্স, টেকসই কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সুবিধাযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেরেমি জারগেনস বলেন, “নতুন প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মানের উন্নতি এবং পরিবেশ রক্ষা- এ সবেরই সক্ষমতা আছে, যদি সঠিক ভাবে পরিকল্পনা ও প্রয়োগ করা হয়।”   

উত্তর চীনের প্রধান বন্দর শহর থিয়ানচিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের সামার দাভোস। ‘শিল্পোদ্যোগ: বৈশ্বিক অর্থনীতির চালিকা শক্তি’ থিমকে সামনে নিয়ে ইভেন্টটি আরো ছয়টি সেকশনে জোর দেয়। সেগুলো হলো প্রবৃদ্ধির বিকাশ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীন, শক্তির রূপান্তর এবং উপকরণ, মহামারি পরবর্তী ভোক্তা, প্রকৃতি এবং জলবায়ু সুরক্ষা এবং বাজারে নতুন উদ্ভাবন ছাড়া। বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশের রাজনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা, সামাজিক সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন মহলের দেড় হাজারের বেশি প্রতিনিধি এ ফোরামে অংশ নেন।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

গ্রীষ্মকালীন দাভোসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শন

গ্রীষ্মকালীন দাভোসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দর্শনার্থীদের চমকে দিয়েছে চীন। এখানে বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার ও সুবিধাকে তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে, দাভোসে অংশ নেয়া প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে আগামী কয়েক বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নেতৃত্ব দেবে চীন।

  

শুধুমাত্র চীনের ঐতিহ্যবাহী চা পান এবং ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অভিজ্ঞতাই নয়, ভবিষ্যতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও অনুসন্ধান করার সুযোগ পান এই ইভেন্টে চীনসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অতিথি ও অংশগহণকারীরা।   

থিয়ানচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি থেকে প্রাপ্ত একটি মেশিন এই প্রদর্শনিতে একটি উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন ছিলো। রোগীর মাথায় পরানো এই

 

ডিভাইসটি সংকেত সংগ্রহ করে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ডিকোড ও বিশ্লেষণ করে রোগী বিষণ্নতায় ভুগছে কিনা তা বলে দিতে পারে।  

ডিসপ্লেতে থাকা আরেকটি ডিভাইস ছিলো একটি নিউরোমডুলেটেড এক্সোস্কেলটন যা হাঁটতে অসুবিধা হয় এমন লোকদের সাহায্য করার জন্য মস্তিষ্কের সংবেদনকে ব্যবহার করে।  

এই শক্তিশালী ডিভাইসটি ব্যবহারকারীকে হাটতে সাহায্য করে বলে জানান থিয়ানচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরাল ইঞ্জিনিয়ারিং উদ্যোক্তা দলের প্রধান কু পিন।
তিনি বলেন, "এটি বিশ্বের প্রথম নিউরোমডুলেটেড এক্সোস্কেলটন সিস্টেম ৷ ইলেক্ট্রোড ক্যাপ লাগানোর পরে, মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রোএন্সফলোগ্রাম মস্তিষ্কের হাঁটার সংকেত বিশ্লেষণ করতে পারে।"

এদিকে, সামার দাভোসে অংশগ্রহণকারীরা জানান, ডিজিটালাইজেশন এবং সবুজ উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাওয়া ছিলো চীন সফরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য।

এই প্রসঙ্গে আর্জেন্টিনার একটি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আন্দ্রেস লসন বলেন, “আমি বিশ্বাস করি উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি চীনে ঘটতে থাকবে। চীন বিশ্বের অনেক দেশের জন্য একটি শক্তিশালী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠবে।” 

প্রযুক্তি কীভাবে বন্দর পরিচালনাকে আরও দক্ষ করে তুলেছে থিয়ানচিন বন্দর ফোরামে এটিও প্রদর্শন করা হয়। লেজার এবং রাডার প্রযুক্তির সংমিশ্রণে বন্দরের চারপাশে ১ লাখের বেশি সেন্সর কাজ করে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিরীক্ষণ ও পরিচালিত হয়।

থিয়ানচিন বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ৮০ শতাংশেরও বেশি রপ্তানিসহ বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণ শিল্পের তালিকায় উল্লেখযোগ্য হারে এগিয়ে আছে চীন। এ ছাড়া কার্গো এবং কন্টেইনার থ্রুপুটের ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০টি বন্দরের মধ্যে চীনের সাতটি বন্দর আছে। বন্দর প্রযুক্তিতে এই অগ্রগতিগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ। 

 

|| প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

সিক্স জি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে জোর দেবে চীন

 

টেলিকম প্রযুক্তিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সিক্স জি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে জোর দেবে চীন। পাশাপাশি চীনজুড়ে ফাইভ জি প্রযুক্তির ব্যপ্তি বাড়িয়ে আরো বেশি শিল্পখাতকে এর আওতায় আনা হবে।

চীন বিশ্বের সবথেকে বড় ফাইভ জি নেটওয়ার্ক নির্মাণ করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত থিংক ট্যাংক চায়না একাডেমি অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের তথ্যমতে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত দেশজুড়ে ২৮ লাখের বেশি ফাইভ জি বেস স্টেশন নির্মাণ করেছে চীন। 

গত বুধবার সাংহাইয়ে ২০২৩ মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস সাংহাই নামক এক টেলিকম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সব বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই অনুষ্ঠানে চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার চাও চিকুও বলেন ফাইভ জি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে বিশেষ জোর দেবে চীন এবং একই সাথে সিক্স জি প্রযুক্তি নিয়েও কাজ চলবে।

মাইনিং এবং বৈদ্যুতিক শক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ফাইভ জি প্রযুক্তির প্রয়োগকে আরও কার্যকরী করতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, বলেন চাও।

অনুষ্ঠানটির অর্গানাইজার মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যালায়েন্স অব গ্লোবাল সিস্টেমের মহাপরিচালক ম্যাটস গ্রানরিড বলেন বিগত কয়েক বছরে ফাইভ জি সুপারপাওয়ার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। আগামী বছর ফোর জি কে ছাড়িয়ে ফাইভ জিই হবে চীনের সব থেকে বড় প্রযুক্তি।

এদিকে চায়না কমিউনিকেশনস স্ট্যান্ডার্ড এসোসিয়েশনের মহাসচিব ওয়েন কু বলেন, “ফাইভ জি প্রযুক্তি ও সিক্স জি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উভয় প্রযুক্তির বিকাশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন। ফাইভ জি প্রযুক্তির উন্নয়ন সিক্স জি প্রযুক্তি বিকাশের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করবে। ফাইভ জি এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া মানে সিক্স জি প্রযুক্তি বিকাশের পথ আরো সুগম হওয়া।”

হুয়াওয়েই টেকনোলজিস করপোরেশনের চিফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার মেং ওয়ানচৌ বলেন ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে ৫ বিলিয়ন ফাইভ জি সংযোগ স্থাপন হবে।

তিনি বলেন, “পরিমাণগত বৃদ্ধির সীমারেখা পেরিয়ে গুণগত বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকেছে চীনের ফাইভ জি প্রযুক্তি। বর্তমানে পুরো বিশ্বে ১.৫ বিলিয়ন ফাইভ জি সংযোগ আছে। আমরা আশা করছি ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে ফাইভ জি সংযোগের সংখ্যা হবে ৫ বিলিয়ন।”

আলোচকরা আরো বলেন, সমাজে ডিজিটাল রূপান্তরের ধাক্কা এককভাবে কোনো প্রযুক্তির পক্ষে সমাধান করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই সিক্স জি প্রযুক্তির উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী