সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তাইওয়ানবিষয়ক কার্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র চু ফেং লিয়ান সাংবাদিকদের একটি ছবি দেখান। ছবিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের মধ্যে বিদ্যমান সামরিক যোগসাজশের বর্তমান অবস্থা ফুটে উঠেছে।
পরে হংকং ও তাইওয়ানের তথ্যমাধ্যমও এ ছবি ও সংশ্লিষ্ট খবর প্রচার করে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের সামরিক যোগসাজশ তাইওয়ানের যুবসমাজকে যুদ্ধের মাঠে এবং তাইওয়ানকে খাদে নামিয়ে আনার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
এসব খবরে মুখপাত্র চু ফেং লিয়ানের কথা উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে দাবার ঘুঁটি থেকে পরিত্যক্ত ঘুঁটিতে পরিণত করছে।
চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবে, তাইওয়ান সমস্যা খুবই জটিল। যুক্তরাষ্ট্রে চীনবিরোধী শক্তি এবং তাইওয়ানের বিছিন্নতাবাদী শক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
জুন মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানে ৪৪ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দেয়। এটি হলো তাইওয়ানে বাইডেন প্রশাসনের দশম দফা অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত। এর বিরুদ্ধে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তাইওয়ানবিষয়ক কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এখন তাইওয়ানের অনেক বাসিন্দাও বুঝতে পারছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে একটি পাউডার কেগ এবং গোলাবারুদের ম্যাগাজিনে পরিণত করতে চায়, যা তাইওয়ানকে রক্ষা করবে না বরং ধ্বংস করবে।
তাইওয়ানে মার্কিন অস্ত্র বিক্রিতে নতুন বৈশিষ্ট্যও দেখা যাচ্ছে। ২৯ জুন, তাইওয়ান ১৪টি এম-১৩৬ মাইন স্থাপন ব্যবস্থা কেনার কথা ঘোষণা করে। তাইওয়ানের তথ্যমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তাইওয়ানের থাও ইউয়ান, তাইজুংসহ কিছু জায়গায় মাইন স্থাপন করতে চায় তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ। এ সবই শহুরে এলাকা।
সামরিক বিশেষজ্ঞ লাইন সুন চেং বলেন, প্রক্ষেপণের মাধ্যমে বিশাল এলাকাজুড়ে মাইন স্থাপন করলে, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। এমনকি তাইওয়ানের বাহিনীর পক্ষেও বোঝা মুশকিল যে কোথায় কোথায় মাইন স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরাসরি; মাইনগুলো সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করতে পারে।
পাশাপাশি, তাইওয়ানের ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি সৈনিক প্রক্রিয়াও জোরদার করেছে। এমনকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রকেও বাহিনীতে যোগ দিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। হাস্যকর ব্যাপার হলো, তাইওয়ানের কাছে বিক্রি করা অস্ত্রের মধ্যে সাঁজোয়া গাড়ি হতে পারে ভবিষ্যতে তাইওয়ানের নেতার পালাবার গাড়িও বটে। ২০২১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজের সামরিক সাময়িকপত্রে স্পষ্টভাবে বলে আসছে যে, যদি তাইওয়ানকে দখল করা হয় তাহলে তাইওয়ান ধ্বংস হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র মুখে বলে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে তাইওয়ান সমস্যা সমাধানের কথা, কিন্তু আসলে চায় চীনের মূলভূভাগ ও তাইয়ানের মাধ্যে বিছিন্নতা বজায় রাখতে। যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘একচীন নীতি’ ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে তাইওয়ান সমস্যা সমাধানের ধারণাকে যুক্ত করে। এর মানে যখন তারা আর শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি চাইবে না, তখন ‘এক চীন নীতি’ও মানবে না। সেক্ষেত্রে যদি যুদ্ধ হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এহেন ফাঁদে পড়তে চীন নারাজ।
চীনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যা-ই হোক না কেন, তাইওয়ান সমস্যা সবসময় চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবেই থাকবে। নতুন জনমত জরিপ থেকে জানা গেছে, ৬০ শতাংশেরও বেশি তাইওয়ান বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সহযোগিতামূলক প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় আর বিশ্বাস করে না। আর তাইওয়ানের নতুন সামরিক মহড়া চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে। তাইওয়ানের মানুষ এখন আর যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করে না।
বস্তুত, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় নিজেকে প্রথম স্থানে রাখে। তাইওয়ান এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে না। তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের ‘দাবার পরিত্যক্ত ঘুঁটি’ ছাড়া আর কিছুই না। (শিশির/আলিম/রুবি)