জুলাই ৩: সম্প্রতি গ্রীষ্মকালীন দাভোস ফোরাম চীনের থিয়ানচিনে আয়োজিত হয়। প্রায় এক শ দেশ ও অঞ্চলের ১৫০০ জনেরও বেশি রাজনীতিক, পন্ডিত ও শিল্পনেতৃবৃন্দ তিন দিনব্যাপী ফোরামে বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও নতুন দফা বিশ্বায়ন নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা মনে করেন, বর্তমান বিশ্ব বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সংলাপ,বিনিময় এবং জয়-জয় সহযোগিতার বিকল্প নেই। বিদ্যমান বৈশ্বিক শৃঙ্খলাকে নষ্ট করা হলে মানবজাতি বদ্ধ এক পরিবেশে ফিরে যাবে, যেখানে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে বা থাকতে বাধ্য হবে।
এবার চার বছর পর গ্রীষ্মকালীন দাভোস ফোরাম পুনরায় অফলাইনে আয়োজিত হলো। এটা হলো এমন এক সময় যখন বিশ্বের অর্থনীতি ও ভূরাজনীতি গভীরভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। ফোরামের অংশগ্রহণকারীরা পুনরায় বিশ্বের বাণিজ্যিক ব্যবস্থা সক্রিয় করার আহ্বান জানান। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক নোজি ওকোনজো লিলা ফোরামে বলেন, সংস্থার সিমুলেশন অনুযায়ী, যদি বৈশ্বিক বাণিজ্যে বিচ্ছিন্নতার ঘটনা ঘটে, তবে বিশ্বব্যাপী জিডিপি স্থায়ীভাবে হ্রাস পাবে ৫ শতাংশ।
ফোরামে ১৫০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী ২ শতাধিক বার ‘সহযোগিতা’, ‘অভিন্ন কল্যাণ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বায়ন এখনও বিশ্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বৃদ্ধির একমাত্র চালিকাশক্তি। অর্থনীতির বিশ্বায়নের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোত্তম সমন্বয় বাস্তবায়ন ও বিশ্বের সরবরাহ-চেইন ও মূল-চেইন স্থিতিশীল ও উন্নত করা যাবে। মানবজাতির ইতিহাস প্রমাণ করে যে, কোনো দেশের দরজা বন্ধ করা হলে সেদেশ অনিবার্যভাবে পশ্চাত্পদতার দিকে ফিরে যাবে।
চালিকাশক্তি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। প্রশ্ন হচ্ছে: চালিকাশক্তি কোথা থেকে আসে? বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে চীনের পণ্যবাণিজ্য টানা ছয় বছর ধরে বিশ্বে প্রথম স্থানে ছিল। সেজন্য চীন অবশ্যই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অস্ট্রিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান কুর্জ এবারের ফোরামে বলেন, তিনি বরাবরই ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ সমর্থন করে আসছেন। তিনি বলেন, উদ্যোগটি চীন, এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্য-প্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করেছে ও করবে। এটি দেশে-দেশে অর্থনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করেছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোর একটি।
ফোরামে বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের চেয়ারম্যান ক্লাউস শোয়াব বলেন, এ বছর চীনের জিডিপি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের উন্নয়ন থেকে গোটা বিশ্ব উপকৃত হবে। চীনের বেশকিছু পদক্ষেপ বিশ্বায়নে আস্থা যুগিয়েছে।
আমরা জানি, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য বাস্তব উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি চালু হওয়া জাকার্তা-বান্দুং দ্রুতগতির রেলপথ ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ছয় বছর আগে চালু হওয়া মোম্বাসা-নাইরোবি স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলওয়ে ৭০ হাজার স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
বিশ্বায়নের তীব্রতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা নিয়ে ক্রমবর্ধমান হারে রাজনীতি করছে। এ ধরণের উন্নয়নের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতার মাধ্যমে সংঘাত মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে; দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা জোরদার ও আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করতে হবে; তৃতীয়ত, বিশ্বায়নে অংশ নিয়ে উন্নত প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা ও অর্থ অর্জন করতে হবে।
এবারের গ্রীষ্মকালীন দাভোস ফোরাম চীনে আয়োজিত হয়। চীন পুনরায় অব্যাহতভাবে উচ্চস্তরের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ উন্নয়নের কথা জোর দিয়ে বলেছে। এটি দুর্বল বিশ্ব অর্থনীতিতে আশার সঞ্চর করেছে। অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, চীন বাজারের আকার আরও প্রসারিত করবে, সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে, এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও প্রবৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী প্রেরণা যোগাবে। (ছাই/আলিম)