ইথিওপিয়ান কফি, মাদাগাস্কারের অপরিহার্য তেল, কেনিয়ার ফুল এবং আফ্রিকার অন্যান্য অনেক পণ্য মধ্য-চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র চাংশা শহরে চীনা গ্রাহকদের মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
২৯ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ওই শহরে অনুষ্ঠিত তৃতীয় চীন-আফ্রিকা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য এক্সপো- যা উচ্চমানের এবং কম দামের আফ্রিকান পণ্য চীনা ভোক্তাদের কাছে নিয়ে এসেছে। নতুন রপ্তানি বাজার খোঁজা আফ্রিকান উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য চীন-আফ্রিকা এক্সপো একটি সুবর্ণ সুযোগ।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং চীন-আফ্রিকা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য এক্সপো চালুর ঘোষণা দেন। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া দ্বিবার্ষিক এ মেলা এরই মধ্যে চীন ও আফ্রিকার দেশগুলোর আর্থ-বাণিজ্য খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এর আগে অনুষ্ঠিত দুটি মেলায় পণ্য-বাণিজ্যে সুবিধার পাশাপাশি ৪৩.০২ বিলিয়ন ডলারের ২১৬টি যৌথপ্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
সার্বিকভাবেই চীন-আফ্রিকা এক্সপো উভয়পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যে সূদুর প্রসারি প্রভাব রাখছে। টানা ১৪ বছর ধরে চীন আফ্রিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২২ সালে উভয়পক্ষের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮২ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের চেয়ে তা ১১.১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে আফ্রিকায় চীনের রপ্তানি ১৬৪.৫ বিলিয়ন ডলার আর আফ্রিকা থেকে আমদানি ১১৭.৫ বিলিয়ন ডলার- যা আগের বছরের চেয়ে যথাক্রমে ১১.২ ও ১১ শতাংশ বেশি।
আফ্রিকায় চীনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগও ক্রমশ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আফ্রিকায় চীনের নতুন প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ১.৩৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।
চাংশায় এবারের তৃতীয় চীন-আফ্রিকা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য প্রদর্শনী চীনে আরও ‘মেড ইন আফ্রিকা’ পণ্যকে বাজার সুবিধা দিয়েছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যবসায়িক সংযোগ বাড়িয়েছে।
‘একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের জন্য অভিন্ন উন্নয়ন’ থিমে চার দিনব্যাপী এ ইভেন্টে ৫৩টি আফ্রিকান দেশ এবং একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এবারের এক্সপোতে প্রদর্শকের সংখ্যা দেড় হাজারে পৌঁছেছে, যা আগের এক্সপো থেকে ৭০ শতাংশ বেশি। এক্সপোতে সম্মানিত অতিথি দেশ ছিল বেনিন, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, মাদাগাস্কার, মালাউই, মরক্কো, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া এবং জাম্বিয়া।
কোভিড-১৯ মহামারীর পরে আফ্রিকান দেশগুলোকে তাদের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করার জন্য, চীন আফ্রিকান পণ্য আমদানি বাড়িয়েছে। চীন আফ্রিকার কৃষি পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীনে আফ্রিকান কৃষি রপ্তানির গড় বৃদ্ধির হার ১১.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রেও চীন-আফ্রিকা এক্সপোর বড় ভূমিকা রয়েছে।
কৃষি পণ্যের মধ্যে, অ্যাভাকাডো চীন ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্যের জোরালো বিকাশের একটি উদাহরণ। গত জুলাই থেকে, কেনিয়া চীনে ৩ হাজার টনেরও বেশি তাজা অ্যাভোকাডো রপ্তানি করেছে। এতে লাভবান হয়েছেন ৩ হাজার ২০০ জনেরও বেশি কৃষক। পূর্ব আফ্রিকার দেশটির স্থানীয় কর্মকর্তারা আগামী বছরগুলোতে বার্ষিক ১ লাখ টন অ্যাভাকাডো রপ্তানি বাড়ানোর আশা করছেন৷
২০২১ সালে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ফোরামের চতুর্থ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে, চীন আফ্রিকান দেশগুলির কৃষিপণ্য সেদেশে প্রবেশের জন্য একটি ‘সবুজ চ্যানেল’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। তারপর থেকে, এক ডজনেরও বেশি আফ্রিকান দেশকে কৃষিজাত পণ্য, যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সাইট্রাস এবং তানজানিয়া থেকে তিল চীনে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
চীন-আফ্রিকা এক্সপোর পাশাপাশি, চীন আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি মেলা, অনলাইন শপিং ফেস্টিভ্যাল এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীন আফ্রিকান পণ্যকে চীনা ও বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করতে সাহায্য করছে।
কেনিয়ার সীমান্তবর্তী তানজানিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার পরে সাব-সাহারান আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম ওয়াইন উৎপাদনকারী। দেশটির উৎপাদিত ওয়াইন চীনসহ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রদর্শন এবং সরবরাহের সুযোগ করে দিয়েছে চীন। এভাবে আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি দেশের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে চীন।
কঙ্গোর বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী জিন-লুসিয়েন বুসা টংবা একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেন, চীন-আফ্রিকা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য মেলা কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের (ডিআরসি) জন্য দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি করেছে।
চীন-আফ্রিকা এক্সপোসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে চীন আফ্রিকার জন্য যে আর্থ-বাণিজ্যিক সুবিধা সৃষ্টি করেছে তাতে একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের চীন-আফ্রিকা কমিউনিটি গড়ে তোলার সম্ভাবনাকেই উজ্জ্বল করে।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।