এ সময় চীনের উত্তরাঞ্চলের হেই লুং চিয়াং প্রদেশের হ্য কাং শহরের ছোং রেন উপজেলার ক্ষেতের পথ ধরে হাঁটলে দেখা যায় যে বসন্তের রোপণ শেষ হয়েছে। সমতল উর্বর মাটিতে ভুট্টার বীজ বড় হচ্ছে। সবার কাছে অজ্ঞাত এ সীমান্ত উপজেলায় সোনালী ভুট্টা নানা রূপ নিয়ে স্থানীয়দের উপার্জন বাড়ানোর সোনায় পরিণত হয়েছে। লাইভ স্ট্রিমের মাধ্যমে সোনালী ভুট্টা কৃষকদের উপার্জন বাড়ানো এবং শিল্পের রূপান্তরসহ নানা ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে।
হেই লুং চিয়াং প্রদেশের ল্যু মেই খাদ্য গ্রুপের প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় শ্রমিকরা ভুট্টার চামড়া ছাড়ানো, পরিষ্কার ও প্যাকেট করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এসবের মাধ্যমে ভুট্টাকে তাজা ও সুস্বাদু রাখা যায়।
এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনেক ভুট্টা পণ্য রয়েছে। তাজা ভুট্টা ছাড়াও ভুট্টা দিয়ে তৈরি ড্রাগন বোট ফেস্টিভালের বিশেষ খাবার ছোং চি, ভুট্টার পানীয় ও ভুট্টার আটাসহ নানা পণ্য রয়েছে। উৎপাদনের পিক সিজনে এখানে ৮০ জন কর্মী কাজ করেন। তাদের অধিকাংশই স্থানীয় অধিবাসী।
এ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক চিন ছিং ফেং কারখানার কক্ষে পণ্যের প্যাকেটিং পর্যবেক্ষণের সময় আমাদের সাংবাদিকদের কাছে স্থানীয়দের জন্য ভুট্টার গুরুত্ব এবং বাজারে বিক্রির অবস্থা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি এবং বড় হয়েছি। ছোট বেলায় প্রায় প্রত্যেক পরিবারকে নিজেদের আঙ্গিনায় ভুট্টা চাষ করতে দেখেছি। ভুট্টা পাকার পর তুলে নিয়ে সিদ্ধ করে বাজারে বিক্রি করতেন স্থানীয়রা। কিছু কিছু ভুট্টা প্রক্রিয়া করে ময়দা তৈরি করা হতো। আঙ্গিনায় ভুট্টা দেখে আমি মাঝেমধ্যে ভাবতাম যে ভুট্টা দিয়ে কী কী খাবার তৈরি করা যায়। বড় হওয়ার পর উপলব্ধি করেছি যে অধিকতর কৃষক ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন। উত্তর-পূর্ব চীনের ভুট্টা কৃষি পণ্য বাজারে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে। ভুট্টা শিল্পের সুন্দর সম্ভাবনা রয়েছে। এ শিল্পে যোগ দেওয়ার পর আমরা পণ্যের উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ করছি। বর্তমানে আমাদের ভুট্টা অনলাইনে ভালো বিক্রি হয়। তিনবেলা খাবারের পরিবর্তে এসব পণ্য খাচ্ছেন তরুণরা। এসব পণ্য নিখিল চীনের ভিন্ন স্থানে জনপ্রিয় হয়েছে।’
এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এক সময় হিমাগার এবং কর্মীর অভাব ছিল। ছোং রেন উপজেলার সরকারের সাহায্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি কারখানার আয়তন বাড়িয়ে শ্রমিক নিয়োগে স্থিতিশীলতা এনেছে। তাছাড়া উপজেলাটির ই-কমার্স কেন্দ্রের মাধ্যমে অনলাইন বিক্রি সম্প্রসারণ করেছে।
স্থানীয় সরকারের সাহায্যে ল্যু মেই’র মতো অনেক কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এখানে। বিভিন্ন পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় স্থানীয় অধিবাসীদের উপার্জন বেড়েছে। পুরো উপজেলায় চলতি বছর ভুট্টা চাষের আয়তন ১২০ হেক্টর ছাড়িয়েছে। প্রত্যেক অধিবাসীর গড় আয় বেড়েছে ৫ হাজার ইউয়ান।
ছোং রেন উপজেলার খাং ল্য গ্রামবাসী চিন পাও ইয়ান আনন্দের সঙ্গে বলেন, ‘আগে আমি আঙ্গিনায় শাকসবজি চাষ করে নিজে খেতাম। খেতে না পারলে ফেলে দিতাম। অনেক অপচয় হয়েছে। বর্তমানে আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আঙ্গিনায় শাকসবজির পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করি। এ থেকে বছরে অতিরিক্ত ২০০০ ইউয়ান উপার্জন করি।’
তাজা ভুট্টা শুধু কৃষিক্ষেতে থেকে নয়, বরং বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের আঙ্গিনা থেকেও আসে। কৃষকরা নিজেদের বাড়িঘরের সামনে ও পিছনে মাটি ব্যবহার করে ভুট্টা চাষ করেন, যা তাদের উপার্জন বাড়ানোর বিশেষ পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় কৃষিপণ্যের বিক্রি জোরদারের লক্ষ্যে ছোং রেন উপজেলার সরকার ‘সুন্দর ছোং রেন’ নামক লাইভস্ট্রিমে কক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছে। পাশাপাশি, ই-কমার্স সম্পর্কে বেশি জানেন এমন একদল কৃষক লালন করছে সরকার। তারা লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে স্থানীয় ভুট্টা ও ভুট্টা পণ্যকে নিখিল চীনের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।
পরবর্তীতে ছোং রেন উপজেলা অব্যাহতভাবে ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠান যোগ ই-কমার্স যোগ কৃষক যোগ ঘাঁটি’র পদ্ধতিতে ভুট্টা শিল্প চেইন জোরদার এবং অতিরিক্ত মূল্যের কৃষি পণ্য গবেষণা করবে। পাশাপাশি, উচ্চ পর্যায়ের ব্র্যান্ড তৈরি করবে, যাতে স্থানীয় কৃষকদের উপার্জন বাড়ার পাশাপাশি গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন বেগবান হয়। (রুবি/এনাম)