চীনা শিক্ষার্থীদের তৈরি অ্যানিমেশন ফিল্ম ‘হাতির শোকগাথা’
2023-06-30 15:17:24

সম্প্রতি স্টুটগার্ট ফেস্টিভাল অব অ্যানিমেটেড ফিল্মে কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটি অব চায়নার (সিইউসি) উদ্যোগে নির্মিত ‘হাতির শোকগাথা’ শ্রেষ্ঠ শিশু অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে।

 

মাত্র আট মিনিটের এই অ্যানিমেশনে মানুষ এবং পশুদের ৩০ বছরের মৈত্রী ও ভালোবাসা তুলে ধরা হয়। এতে কোনো কথোপকথন না থাকলেও বিশ্বজুড়ে দর্শকদের মধ্যে একটি আবেদন সৃষ্টি করেছে।

 

‘হাতির শোকগাথা’ নামের অ্যানিমেশনে বলা হয়েছে যে ‘নানা’ নামের একটি বাচ্চা হাতি শিকারিদের হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছে এবং ঘটনাক্রমে চীনের দাই জাতির একজন বৃদ্ধের সাথে দেখা হয় তার। সেই বৃদ্ধ লোক ছোট হাতি নানা’র ভাল যত্ন নেন এবং এর শরীরের দাগ সারিয়ে তুলেন। নানা ধীরে ধীরে মানুষের ভয় থেকে মুক্তি পেয়ে বৃদ্ধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তবে বৃদ্ধ স্পষ্টভাবেই জানেন যে শুধুমাত্র প্রকৃতিই নানার আসল বাড়ি, তাই তিনি একে জঙ্গলে ছেড়ে দেন। ত্রিশ বছর পর নানা একটি বড় হাতি হয়ে ওঠে। অন্ধকারে নানা বৃদ্ধের শবযাত্রা অনুধাবন করেছে এবং দৃঢ়তার সাথে পাহাড় ও নদী পার হয়ে হাতিদের নেতৃত্বে বৃদ্ধের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

লু সি চিয়ে নামে এই অ্যানিমেশনের প্রধান সৃষ্টিকারী সিইউসির শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্টুটগার্ট ফেস্টিভাল অব অ্যানিমেটেড ফিল্মের জুরি বোর্ডের সদস্যরা আমাদের এ শিল্পকর্মের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন যে এই মুভিতে কোনো কথোপকথন নেই, তবে এর তথ্য বিশ্ব বুঝতে পারছে, যা সত্যিই সহজ কাজ নয়।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘এই পুরস্কার প্রমাণ করেছে যে আমরা কেবল চীনা গল্প বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি না, বরং আমাদের শিল্পকর্ম সাংস্কৃতিক পার্থক্য অতিক্রম করে সবার স্বীকৃতিও পেতে পারে।’

 

লি চিন চে এই অ্যানিমেশনের আরেকজন প্রধান সৃষ্টিকারী সিইউসির শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই পুরস্কার এবং সারা বিশ্বের তরুণ দর্শকদের সমাদর পাওয়া নিঃসন্দেহে উত্তেজনাপূর্ণ এবং তৃপ্তিদায়ক। আমি আরও বেশি ভাল অ্যানিমেশন তৈরি করতে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাব।’

 

‘হাতির শোকগাথা’ নামের অ্যানিমেশনে মানুষ এবং প্রকৃতির সম্প্রীতিমূলক সহাবস্থানের সুন্দর দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাতে চীনের সংখ্যালঘু দাই জাতির বৃদ্ধ এবং হাতির আবেগ অনেক মনোমুগ্ধকর উপায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

এ অ্যানিমেশন তৈরিতে অত্যাধুনিক থ্রি-ডি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এটি একটি সূক্ষ্ম এবং বাস্তব শিল্পকর্মের চেহারা এবং অনুভূতি চিত্রিত করেছে। শিল্পকর্মের চরিত্রের পারফর্মেন্স সমৃদ্ধ এবং চমৎকার হয়েছে। বিশেষ করে মানুষ এবং প্রাণীদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং চোখের যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি আন্তরিক এবং স্পর্শকাতর বর্ণনামূলক উত্তেজনা দেখা গেছে। এ শিল্পকর্ম নির্বাক কৌশল এবং অ্যানিমেশন ভাষা ব্যবহার করে চীনা চরিত্র এবং বিশ্ব দর্শকদের মধ্যে দূরত্ব গুছিয়েছে।

 

এই অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্মটি তৈরি হয়েছে এশিয়ান হাতির আকর্ষণ সবাইকে দেখানোর জন্য। এবং আশা করা হচ্ছে যে আরও বেশি লোক এশিয়ান হাতির জীবনযাত্রার দিকে মনোযোগ দেবে। পাশাপাশি, এটি প্রিয়জন হারানোদের কিছুটা সান্ত্বনা এবং উষ্ণতা দেবে।

 

এই অ্যানিমেশন সৃষ্টিতে অংশগ্রহণকারীরা চীনের ইউননান প্রদেশের স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও লোক রীতিনীতিসহ আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় ‘চীনা উপাদান’ সৃষ্টি করেছেন এবং দাই জাতির অনন্য মূল্যবোধ ও জীবনযাপন পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

 

ভবিষ্যৎ নিয়ে লু সি চিয়ে এবং লি চিন চে বলেন, তাদের দল অ্যানিমেশন সৃষ্টির পথে অবিচল থাকবে। পরবর্তীতে আরও প্রভাবশালী শিল্পকর্ম সৃষ্টি করার আকাঙ্ক্ষায় রয়েছেন তারা। তারা আশা করেন, ভবিষ্যতে চীনের অ্যানিমেশনে আরও বৈচিত্র্যময় শিল্প শৈলী এবং সমৃদ্ধ গল্পের থিম যোগ হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অ্যানিমেশন শিল্পের বিভাজন ধীরে ধীরে পরিপক্ব হয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে এবং বিষয়বস্তুর গুণগত মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। নেটিজেনরা প্রায়ই ‘চীনা কমিকের উত্থান’ শব্দটি উচ্চারণ করেন এবং স্বীকার করেন যে চীনা অ্যানিমেশন আলোর দিকে এগুচ্ছে।

 

লিলি/এনাম