"কে উড়ছে?"
"একজন চীনা মানুষ!"
১৮ মে। এক ব্যক্তিকে প্যারাগ্লাইডার নিয়ে মাউন্ট ছোমোলাংমা (মাউন্ট এভারেস্ট) থেকে উড়তে দেখে, মাউন্ট ছোমোলাংমা নেপালের দক্ষিণ ঢালে বেস ক্যাম্পে এই ধরনের কথোপকথন শোনা গিয়েছিল।
এই ব্যক্তি হলেন লি শেং থাও। তিনি চীনা বোসিডেং ২০২৩ ছোমোলাংমা পর্বতারোহণ দলের সদস্য। ১৮ তারিখ স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৪ মিনিটে, লি শেং থাও ৮০০০ মিটার উচ্চতায়, মাউন্ট ছোমোলাংমার দক্ষিণ ঢাল থেকে একটি একক আনপাউয়ার্ড প্যারাগ্লাইডার নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ওড়ার পর, তিনি ৫৪০০ মিটার উচ্চতায় মাউন্ট ছোমোলাংমার দক্ষিণ ঢাল বেস ক্যাম্পের কাছে সংরক্ষিত এলাকায় নিরাপদে অবতরণ করেন। এই বছর মাউন্ট ছোমোমাংমার দক্ষিণ ঢালে নেপাল সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রথম প্যারাগ্লাইডিং ফ্লাইট ছিল এটি। তা ছাড়া এবারই প্রথমবারের মতো কোনো চীনা মানুষ সফলভাবে এই উচ্চতায় প্যারাগ্লাইডিং করলেন।
৩৮ বছর বয়স্ক লি শেং থাও তিব্বতে থাকেন। তিনি একজন প্যারাগ্লাইডার প্রশিক্ষক। মাউন্ট ছোমোলাংমায় প্যারাগ্লাইডিং করার জন্য তিনি অনেক প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি গত কয়েক বছর ধরে চীনের অনেক বরফে ঢাকা পর্বতে আরোহণ করেছেন এবং সেখান থেকে প্যারাগ্লাইডিং করেছেন।
কেন তিনি এই চ্যালেঞ্জটি নিয়েছিলেন? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো প্যারাগ্লাইডার শেখার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন। ২০১৬ সালে, দৈবক্রমে, লি শেং থাও প্যারাগ্লাইডিং শিখতে হেনান প্রদেশের লিনচৌ শহরে যান। মাত্র অর্ধেক দিনের অনুশীলনের পর, তিনি স্বাধীনভাবে একটি প্যারাগ্লাইডার নিয়ে আকাশে উড়তে সক্ষম হন। "যে মুহূর্তে আমি আকাশে উড়েছি, ঠিক সেই মুহূর্তে আমি খুব মুক্ত বোধ করেছি।" তারপর থেকে তিনি তার হৃদয়ে মাউন্ট এভারেস্টে ওড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন।
প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি তিব্বতে স্বাধীনভাবে প্যারাগ্লাইডার নিয়ে উড়তে শুরু করেন। ২০১৮ সালে তিনি ইয়ামড্রোক হ্রদে তিব্বতের প্রথম প্যারাগ্লাইডিং বেস খোলেন। তিনি প্যারাগ্লাইডিং উত্সাহীদের তুষারে আচ্ছাদিত মালভূমিতে ওড়ার মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা গ্রহণের সুযোগ দেন।
২০১৯ সাল থেকে, উচ্চ উচ্চতায় তুষার-ঢাকা পাহাড়ে উড়ন্ত প্যারাগ্লাইডারের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য, লি শেং থাও ইউঝু পর্বত, হাবা তুষার পর্বত, জুয়েলাপু গাংরি পর্বত এবং অন্যান্য চূড়ায় আরোহণ করেন এবং ওড়ার চেষ্টা করেন।
একটি উচ্চ-উচ্চতার তুষার-ঢাকা পর্বতে প্যারাগ্লাইডার নিয়ে ওড়া খুব কঠিন কাজ। পাইলটকে কেবল পাহাড়ে আরোহণ করতে হয় না, কয়েক ডজন কিলোগ্রাম ওজনের প্যারাসুট ব্যাগও বহন করতে হয়। উচ্চ উচ্চতায় অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার কারণে, কখনও কখনও ওড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য কয়েক দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার চূড়ায় উঠতে হয়।
২০১৯ সালে প্রথমবার মাউন্ট ইউজু থেকে প্যারাসুট নিয়ে ওড়ার সময়, লি শেং থাও বাতাসের সঠিক দিকনির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন, এবং তিন বার ওঠেন। পর্বতের শীর্ষে শক্তিশালী অতিবেগুনি রশ্মির কারণে, নাকের ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তবে লি শেং থাও বলেন, তিনি উড়ে যাওয়ার মুহূর্তে সবকিছু করাই উপযুক্ত মনে করেছিলেন। "আকাশে ওড়া আমাকে শান্ত ও মুক্ত করে। আকাশে উড়লে কোন দিকে যাবো তা আমার নিজের হাতে।" লি শেং থাও বলেন।
কিন্তু উঁচু বরফে ঢাকা পর্বতে প্যারাগ্লাইডিং বিপজ্জনক। প্রতিটি টেক-অফের আগে, লি শেং থাও এবং তার দলকে অবশ্যই বিভিন্ন ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে হয়, প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন চালিয়ে যেতে হয়, প্রাথমিক চিকিত্সার জ্ঞান অর্জন করতে হয় এবং যতটা সম্ভব ঝুঁকি কমাতে হয়।
তার বহু বছরের প্যারাগ্লাইডিংয়ের অভিজ্ঞতার কারণে লি শেং থাও উড্ডয়নের আগে কখনও ভয় পান না। "যে মুহূর্তে আমি অবতরণ করি, আমি দৃঢ় ও খুশি। আমি বিশ্বাস করি যে, আমি যা করতে চাই তাতে দ্বিধা বা ভয় পাওয়া চলবে না। যদি আমি দৃঢ় না হই, তবে আমি টেক অফ করতে পারব না।"
এবারের ছোমোলাংমা ফ্লাইটেও এই দৃঢ়তা তার সঙ্গী ছিল। ১৮ মে সকালে, লি শেং থাও, ৮০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সি৪ ক্যাম্পে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন তাঁবুর বাইরের বাতাস কিছুটা শান্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু অনেকক্ষণ অতি উচ্চতায় থাকার পর, তিনি তার নিজের অনুভূতিকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাই তিনি তাঁবুর বাইরে ছুটে যান পর্যবেক্ষণ করার জন্য। তখন তিনি নিশ্চিত হন যে বাতাস কমে গেছে। তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। দৃঢ়ভাবে টেক অফ করেন।
"যখন আমি অবতরণ করতে যাচ্ছিলাম, আমি কয়েকবার বেস ক্যাম্পের চারপাশে প্রদক্ষিণ করেছি। পরে, আমার সতীর্থ আমাকে বলেছিল, তাঁবুর প্রায় সকল লোক দেখতে দৌড়ে বেরিয়েছিল এবং জিজ্ঞাসা করেছিল, 'কে উড়ছে?' তখন কেউ কেউ উত্তর দিল, 'একজন চীনা উড়ছে!' সেই মুহূর্তে আমি অত্যন্ত গর্বিত ছিলাম।" লি শেং থাও বলেন।
"প্যারাগ্লাইডিং অনুশীলনের বছরগুলোতে, আকাশে ওড়া আমাকে বেড়ে উঠতে দিয়েছে, ক্রমাগত নিজেকে নতুন করে তৈরি করতে ও নিজেকে আরও ভালো করে তুলতে দিয়েছে।" তিনি বলছিলেন, "ওড়ার সময় কেবল পাহাড়, প্যারাসুট এবং আমি থাকি। আমি আমার জীবন নিয়ন্ত্রণ করার চাবিকাঠি ধরে রাখি। আমি যে দিকে যেতে চাই সেই দিকে প্যারাগ্লাইডার ওড়ে। এভাবে যেন প্রমাণ করি যে, আমি এই পৃথিবীতে এসেছি এবং আমি গুরুত্ব সহকারে এই জীবন যাপন করছি।" (ইয়াং/আলিম/ছাই)