জুন ৩০: সম্প্রতি চীনের বিজ্ঞান একাডেমির জাতীয় মানমন্দিরসহ বিভিন্ন বিভাগের গবেষকদের নিয়ে গঠিত পালসার টাইমিং অ্যারে (সিপিটিএ) গবেষণাদল, ৫০০ মিটার অ্যাপারচার স্ফেরিক্যাল রেডিও টেলিস্কোপ ‘চায়নিজ স্কাই আই’ নামে পরিচিত ‘ফাস্ট’ ব্যবহার করে, ন্যানোহার্টজ মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সনাক্ত করেছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র একাডেমিক জার্নাল ‘জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যায গবেষণা (আএএ)’-এ প্রকাশিত হয়।
ন্যানোহার্টজ মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করা খুবই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কারণ, এসব তরঙ্গের অত্যন্ত কম ফ্রিকোয়েন্সি, কয়েক বছরের সময়কাল এবং কয়েক আলোক-বছর পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্য। একটি বড় রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে অত্যন্ত নিয়মিত ঘূর্ণনসহ মিলিসেকেন্ড পালসারগুলোর একটি গ্রুপের দীর্ঘমেয়াদী সময় পর্যবেক্ষণ হল ন্যানোহার্টজ মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্তের একমাত্র পরিচিত পদ্ধতি।
এবারের গবেষণায় বৈজ্ঞানিক গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত চীনা পালসার টাইমিং অ্যারে দলটি ৫৭ মিলিসেকেন্ড পালসারের দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করতে ৫০০-মিটার অ্যাপারচার স্ফেরিক্যাল রেডিও টেলিস্কোপ ‘ফাস্ট’ তথা ‘চায়না স্কাই আই’ ব্যবহার করে ৫৭ মিলিসেকেন্ড পালসারের দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ করেন। এ সম্পর্কে জাতীয় মানমন্দির ও পিকিং ইউনিভার্সিটির গবেষক ও লেখক লি খ্য চিয়া বলেন,
(রে ১)
“যখন পালসারটি ঘোরে, তখন এটির খুব উচ্চ স্থায়িত্ব থাকে। কারণ, এটি খুব ভারী, দ্রুত ঘোরে এবং এর আয়তন ছোট, একে বিরক্ত করা খুব কঠিন। এই ঘূর্ণনশীল স্থিতিশীলতা ব্যবহার করে আমরা একে সংকেতের স্থান-কালের ব্যাঘাত পরিমাপের জন্য একটি মান হিসাবে ব্যবহার করতে পারি।’
গবেষকদলটি স্বাধীন সফ্টওয়ার ব্যবহার করে ‘ফাস্ট’ দ্বারা তিন বছর পাঁচ মাসে সংগৃহিত পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণা করে। লি খ্য চিয়া বলেন, ন্যানোহার্টজ মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্বের মূল প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন,
(রে ২)
‘আমরা প্রধানত এই সংকেতের কোয়াড্রপোল পারস্পরিক সম্পর্ক বৈশিষ্ট্য এবং হেলিংস-ডাউনস কার্ভ পরিমাপ করেছি। তত্ত্ব আমাদের জানায় যে, যদি এটি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট হয়, তাহলে আমরা এই ঘটনাটি দেখতে পাবো। যদি এটি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ না হয়, যেমন সৌরজগতের শব্দ, আমরা অন্য কিছু দেখতে পাবো। আমরা এখন যে জিনিসটি দেখছি তা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ দ্বারা পূর্বাভাসের মতো একই। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যা নিশ্চিত করে যে, আমরা যে সংকেত দেখি তা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ থেকে।’
ন্যানোহার্টজ মহাকর্ষীয় তরঙ্গের আবিষ্কার হল পদার্থবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়া ২০ বছর ধরে তাদের বড় রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ন্যানোহার্টজ মহাকর্ষীয় তরঙ্গ অনুসন্ধান করে আসছে।
চীনের বিজ্ঞান একাডেমির শিক্ষাবিদ ও জাতীয় মানমন্দিরের প্রধান ছাং জিন বলেন, চীন অব্যাহতভাবে ন্যানোহার্টজ মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্তকরণের ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে যাবে, দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ ডেটা সংগ্রহ করবে, ধীরে ধীরে উচ্চ-নির্ভুলতার সনাক্তকরণ ফলাফল প্রকাশ করবে, এবং মহাবিশ্বকে আরও ভালোভাবে বুঝতে ন্যানোহার্টজ মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ব্যবহার করার একটি নতুন জানালা খুলবে। (ছাই/আলিম)