চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-06-30 20:42:37

 

চলতি বাণিজ্যের ২৪তম পর্বে থাকছে:

১. ‘চীনের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ব্যাপক সম্ভাবনার’

২. বতসোয়ানায় ড্রেজিং প্রকল্প হস্তান্তর করেছে চীন

৩. চীনে সংযোজন করা এয়ারবাসের বিমান গেলো ইউরোপে

 

‘চীনের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ব্যাপক সম্ভাবনার’

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ব্যাপক সম্ভাবনার জানান দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোরগে ব্রেন্ড। চীন সরকারের নেওয়া নানা ধরনের সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ফলেই এমন প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। সম্প্রতি চীনা গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সংস্থাটির এই শীর্ষ কর্তা জানান, ফোরামের সম্মেলনে চীনা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি ও বিশ্বের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তার সংলাপ চীনে বিদেশি বিনিয়োগ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা তৈরি করেছে।

সম্প্রতি উত্তর চীনের তিয়ানচিন মিউনিসিপ্যালিটিতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ১৪তম নিউ চ্যাম্পিয়ন্স অ্যানুয়াল মিটিং বা এএমএনসি। মেইচিয়াং কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী এই বার্ষিক সম্মেলনের আরেক নাম ‘সামার দাভোস’।

প্রতি ৪ বছর পর অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি যেহেতু এবার অনুষ্ঠিত হলো চীনে। এবারের বার্ষিক সম্মেলনের মূল স্লোগান, উদ্যোক্তা: বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি। আর একারণেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার চীনের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতার দিকে নজর ছিলো বিশ্বের অন্তত ৯০টি দেশ থেকে আসা দেড় হাজার বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীর। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর সারা বিশ্বের জন্য নতুনভাবে উন্মুক্ত হওয়া চীনের বাজার নিয়ে আগ্রহ ছিলো সরকারি ও বেসরকারিখাতের এসব বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের।

সম্মেলনের সাইডলাইনে চীনা গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোরগে ব্রেন্ড। নিজস্ব মূল্যায়নে তিনি তুলে ধরেন, সারা বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে চীনের অর্থনীতি।

বোরগে ব্রেন্ড, প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম

“চীনের অর্থনীতির এখনো ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিলো ২ দশমিক ৮ শতাংশ। চীনের প্রবৃদ্ধি এর প্রায় দ্বিগুণ, অন্তত ৪ শতাংশের বেশি। কাজেই বিশ্বের যে কোন দেশের অর্থনীতির তুলনায় চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশি। আমি মনে করি চীন সরকার এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আরও পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা এও দেখেছি, চীন এরইমধ্যে সুদের হার কমিয়েছে। আরও দেখছি, চীন সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম এখনও চলছে।“

ফোরামে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীন বিদেশি বিনিয়োগের একটি চমৎকার জায়গা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদর নজর ছিলো চীনের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দিকে। চীন এসব বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পেরেছে বলেও মনে করেন তিনি। দাভোসে চীনের প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ ও সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তার সরাসরি আলোচনায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি চীনের ব্যবসার পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ইতিবাচক বার্তা দেয় বলেও মন্তব্য করেন ফোরাম প্রেসিডেন্ট।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে দেওয়া চীনের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আরও সংস্কার কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার, বিদ্যুৎচালিত গাড়ির মতো শিল্পে চীন এগিয়ে থাকায় এসবখাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন।

“বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা অনেক শক্তিশালী। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানী, সোলার বা উইন্ডের কথা, এক্ষেত্রে চীন খুবই ভালো করছে। এমনকি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে চীন সবার চেয়ে এগিয়ে। চীনে তৈরি করা বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে চীনের অংশীদারিত্বই বেশি।“

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো ও সারা বিশ্বের জন্যই একটি টেকসই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করার ব্যাপারে চীন ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করেন তিনি।

 

ভিনদেশে চীন:

বতসোয়ানায় ড্রেজিং প্রকল্প হস্তান্তর করেছে চীন

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় নির্মাণ শেষে একটি ড্রেজিং প্রকল্প হস্তান্তর করেছে চীন। বতসোয়ানার রাজধানী গ্যাবোরোনে শহরে এ প্রকল্প হস্তান্তর করা হয়। চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বতসোয়ানা গ্যাবোরোনে সিটি কাউন্সিলের কাছে এই সেগোডিতশানে ড্রেজিং প্রকল্প হস্তার করে।

চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানী শহরটির পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নততর করা হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের অন্যতম প্রধান জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে। 

গ্যাবোরোনে শহরের মেয়র অস্টিন আব্রাহাম জানান, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে চীনের এই সংস্থাটি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেয়। এ জন্য তিনি চীনের ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

১ মিটার গভীর এই পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে শহরের বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হবে। আগামী ২ বছর এই ড্রেনেজ ব্যবস্থা কোন রকম সংস্কার ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে বলেও জানান মেয়র।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনে সংযোজন করা এয়ারবাসের বিমান গেলো ইউরোপে

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: এই প্রথমবারের মতো চীনে স্থাপন করা পুনঃসংযোজন কারখানা থেকে উৎপাদন করা বিমান পাঠানো হলো ইউরোপে। উত্তর চীনের তিয়ানচিন মিউনিসিপ্যালিটিতে স্থাপন করা এয়ারবাসের বিমানটি কিনে নিয়েছে হাঙ্গেরির বিমান পরিবহন সংস্থা উইজ এয়ার।

উত্তর চীনের তিয়ানচিন মিউনিসিপ্যালিটিতে স্থাপন করা হয়েছে ইউরোপের জায়ান্ট এয়ারক্র্যাফ্ট এয়ারবাসের পুনঃসংযোজন কারখানা। ২০০৮ সালে এই কারখানা স্থাপনের পর এখানে শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে বিমান তৈরির প্রক্রিয়া। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি পুনঃসংযোজন কাজ শেষ হয় এ-থ্রি টু ওয়ান-নিও মডেলের বিমানের।

প্রথম দফার পুনঃসংযোজন কাজ শেষে এই মডেলের বিমানটি হস্তান্তর করা হয় ইউরোপের অন্যতম দেশ হাঙ্গেরির বিমান পরিবহন সংস্থা উইজ এয়ারের কাছে। এর আগে চলতি বছর এ-থ্রি-টু-ওয়ান-নিও মডেলের বিমানটি পুনঃসংযোজন করার প্রথমেই মার্চ মাসে হস্তান্তর করা হয় চীনা ব্যক্তিমালিকানাধীন বিমান পরিবহন সংস্থা জুনিয়াও এয়ারের কাছে। এয়ারবাস জানায়, এই বিমানটির বিশেষত্ব হলো, এটি ওজনে হালকা ও দামে কম।

এ-থ্রি-টু-জিরো ফ্যামিলির সবচেয়ে বড় এয়ারক্র্যাফ্ট এই এ-থ্রি টু ওয়ান-নিও মডেলের বিমান। বিমানটি দেখতে সরু তবে ওয়াইড বডি বিমানের তুলনায় এই বিমানটির বহন ক্ষমতা অনেক বেশি। সংস্থাটি জানায়, এটি সর্বোচ্চ ২৪৪ জন যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম।

ইউরোপের বাইরে এয়ারবাস কোম্পানির এয়ারক্র্যাফ্ট পুনঃসংযোজন কারখানাটি চীনের তিয়ানচিনেই প্রথম ও একমাত্র কারখানা। এর আগে ২০০৯ সালে এ-থ্রি টু জিরো মডেলের বিমান পুনঃসংযোজন শুরু করে এয়ারবাস। এখন পর্যন্ত ওই মডেলের অন্তত ৬’টি বিমান হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০২১ সালে পুনঃসংযোজন করা হয় এ-থ্রি টু ওয়ান মডেলের বিমান।