আকাশ ছুঁতে চাই ২৪
2023-06-29 18:43:02


১. ঈদ মোবারক

২. ফুচিয়ানে পঞ্চদশ প্রণালী নারী ফোরাম

৩. জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তারা মমতাময়ী বন্ধু  

 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনের মুসলিম নারীরাও এখন ঈদুল আজহার উদযাপনে ব্যস্ত। চীনের মুসলিম নারীরা কিভাবে ঈদ উদযাপন করেন চলুন জেনে নেই একটি প্রতিবেদনে।

 

ঈদ মোবারক

 

চীনা ভাষায় ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা  জানাতে হলে বলতে হয় কু আর পাং চিয়ে।  চীনের মুসলিমরা এখন পরষ্পরকে এই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। চীনের দশটি জাতির মানুষ ইসলাম ধর্ম পালন করেন। চীনের মুসলিমরা ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা উদযাপন করেন বিশ্ব মুসলিম উম্মার সঙ্গে একই সময় এবং একই রীতিতে। তবে সেইসঙ্গে নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। চীনে যেখানে মুসলিম বসতি রয়েছে সেখানেই একই নিয়ম। ঈদের নামাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন। তবে তারা পৃথক  সারিতে নামাজ পড়েন।

কোরবানি ঈদে উইগুর নারীরা তৈরি করেন বিশেষ কিছু খাবার। পিলাফ এবং হাতে ধরা মাংস হলো ঈদের বিশেষ খাবার। পিলাফ হলো চাল, ভেড়ার মাংসের টুকরো ও কিসমিস দিয়ে রান্না করা এক ধরনের পোলাও।

হাতে ধরা মাংস হলো ভেড়ার মাংসের একটি বিশেষ ডিশ। একটি ভেড়াকে বারো টুকরো করে নানা রকম মসলা দিয়ে সিদ্ধ করা হয়। মাংসের টুকরোগুলো এতবড় যে চপস্টিকে ধরা যায় না। হাতে ধরে খেতে হয়।

ঈদের দিন সিনচিয়াং সিল্কের তৈরি পোশাক পরেন উইগুর নারীরা।  তাজিক, হুই কিরগিজসহ বিভিন্ন জাতির মুসলিম নারীরাও তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন। ঈদের দিনে কাশগরসহ বিভিন্ন শহরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে ঈদের নামাজের পর। সেসব অনুষ্ঠানে নারীরা অংশ নেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

শিশুরাও ঈদ উৎসবে মেতে ওঠে নতুন জামা পরে।

বিভিন্নস্থানে ঈদের মেলাতেও নারী ও শিশুদের আনন্দমুখর পদচারণা চোখে পড়ে।

আর ঈদে গৃহসজ্জার দায়দায়িত্বও পালন করেন নারীরাই। সবমিলিয়ে চীনের মুসলিম নারী শিশুসহ সকলের জন্য  ঈদ বয়ে আনে আনন্দের বার্তা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

ফুচিয়ানে পঞ্চদশ ‘প্রণালী নারী ফোরাম’

তাইওয়ান প্রণালীর উভয় তীরের নারীদের সম্পর্ক আরও গভীর করতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চদশ প্রণালী নারী ফোরাম।

চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়ামেন শহরে সম্প্রতি, পঞ্চদশ প্রণালী ফোরাম এবং প্রণালী নারী ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য ছিল:  "গৃহের জন্য গান এবং ভবিষ্যতের জন্য একাগ্রতা"।

ফোরামে চীনের তাইওয়ান, হংকং ও ম্যাকাওয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৪০০ জন নারী অংশগ্রহণ করেন। চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসের ভাইস চেয়ারম্যান ও নিখিল চীন নারী সমিতির চেয়ারম্যান শেন ইউয়ে ইউয়ে ফোরামে উপস্থিত ছিলেন।

ফোরামে শেন ইউয়ে ইউয়ে আশা করেন, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের নারীরা ইতিহাসের সাধারণ প্রবণতা উপলব্ধি করবেন; জাতির ন্যায়পরায়ণতার চেতনাকে সমুন্নত রাখবেন; ‘এক-চীন নীতি’ ও "১৯৯২ মতৈক্য" মেনে চলবেন; দুই তীরের সম্পর্ক আরও গভীর করতে সচেষ্ট থাকবেন; চমত্কার চীনা সংস্কৃতির প্রচার ও স্বদেশীদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা পালন করবেন; চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন প্রচারে ও মাতৃভূমির পুনর্মিলনের পক্ষের শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখবেন।

ফোরামে তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের নারীদের এবং হংকং ও ম্যাকাওয়ের নারী সমাজের মধ্যে আরও বেশি করে যোগাযোগ ও বিনিময় বৃদ্ধিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তারা মমতাময়ী বন্ধু

মানুষের জীবন যখন শেষ ধাপে এসে পৌছায়। মরণাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে কাটাতে হয় তখন মমতার স্পর্শ নিয়ে যিনি এগিয়ে আসেন তিনিই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে আপন। মৃতুপথযাত্রী মানুষদের জন্য সেবা ও স্বান্তনার স্পর্শ দিচ্ছেন কয়েকজন নারী। এই মমতাময়ী নারীদের কথা শুনবো একটি বিশেষ প্রতিবেদনে।

চীনের চেয়িাং প্রদেশের হাংচৌ সিটি। চেচিয়াং হাসপাতালের একজন রোগী জীবনের শেষ প্রান্তে উপস্থিত হয়েছেন। মৃত্যুশয্যায় তার পাশে বসে তাকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছেন, তার হাত ধরে আছেন একজন মমতাময়ী বন্ধু। এই বন্ধু হলেন নার্স হোং ডানডান। তিনি হোসপাইস পরিষেবা দলের একজন সদস্য।

হোং তার ক্যারিয়ার নিয়ে সুখী। কারণ তিনি মনে করেন এটা তার শুধু চাকরি নয়, বরং তিনি মানুষের সেবা করতে পারছেন। রোগীরা তার কাছে পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের মতোই আপনজন হয়ে ওঠেন।  

চীনের হাসপাতালগুলোতে এখন এ ধরনের পরিষেবা ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। চেচিয়াং হাসপাতালের ৪৪ বছর বয়সী নার্স সিয়াং ছিয়াওচেন জানান, একজন রোগী যখন মৃত্যুর প্রান্তে উপস্থিত হন তখন তিনি শুধু চিকিৎসা নয় পাশাপাশি মমতা, ভালোবাসা , সহানুভূতি ও সাহস প্রত্যাশা করেন। রোগীর কি ধরনের কষ্ট হচ্ছে, তিনি কি বলতে চান সেটা বোঝার চেষ্টা করেন তিনি। কারণ এই সময় রোগীর কথা অনেক সময় বোঝা যায় না। তিনি বুঝতে চেষ্টা করেন তাদের কথা। তার মনে কিভাবে একটু ভালো অনুভূতির সৃষ্টি করা যায় সর্বক্ষণ সেই চেষ্টা করেন মমতাময়ী সিয়াং।

সিয়াং জানান এই হাসপাতালে তার মতো ২৬ জন নার্স আছেন যারা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সেবা, মমতা, যত্ন, স্নেহ ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের জীবনের শেষ অবস্থাকে একটু সহনীয় করে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন।

সিয়াং কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেন। মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের সঙ্গে গল্প করে, তার অতীতের সুন্দর স্মৃতিচারণ করে, গান শুনিয়ে কিংবা তার মন ভালো করার জন্য আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে কিভাবে তাদের শেষ সময়কে কিছুটা হলেও আনন্দের করে তুলেছেন তিনি।

চল্লিশ বছর বয়সী লি ইয়ানফাং আরেকজন মমতাময়ী নার্স। তার কাছে মনে হয় মৃত্যু হলো হেমন্তে সোনালি পাতা ঝরে পড়ার মতো।

লি জানান, যখন তারা কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন পরষ্পরকে স্বান্ত্বনা দেন এবং ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দেন, উৎসাহ দেন।

হাসপাতালে একটি ফেয়ারওয়েল কক্ষ আছে। এখানে মৃত্যুবরণকারীকে রোগীকে সকলে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানান। তার আত্মীয়রা আসেন। তাদের সামনে প্রয়াত রোগী বিষয়ে স্মৃতিচারণ ও ভালো কথা বলা হয়। এতে আত্মীয়রাও বুঝতে পারেন তাদের মৃত স্বজন এখানে শেষ সময়টা কিভাবে কাটিয়েছেন এবং ভালোবাসা পেয়েছেন।

এমনিভাবে এই মমতাময়ী নারী নার্সরা স্নেহভালোবাসার স্পর্শে মৃত্যুপথযাত্রীদের শেষ যাত্রায় সাহস ও ভালোলাগার অনুভূতি স্মৃতিতে নিবেদিত রয়েছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঈদ মোবারক

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল