জুন ২৯: চতুর্দশ গ্রীষ্মকালীন দাভোস ফোরাম মঙ্গলবার চীনের থিয়ানচিনে শুরু হয়। শতাধিক দেশ ও অঞ্চলের দেড় সহস্রাধিক প্রতিনিধি ফোরামে অংশ নেন। এবারের ফোরামের প্রতিপাদ্য হচ্ছে: ‘শিল্পপতির আত্মা: বিশ্ব অর্থনীতির চালক’। আর কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় ‘বৃদ্ধি পুনরুদ্ধার’।
ডেনমার্কের হেনরিক স্ট্যাম ক্রিস্টেনসেন (Henrik Stamm Kristensen) হলেন একটি খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। এবারের ফোরামে তিনি সাংবাদিককে বলেন, চীনের বিরাট বাজার ও শক্তিশালী পণ্যপরিবহনব্যবস্থা তাঁকে চীনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী করেছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে চীনের পণ্যবাণিজ্য টানা ছয় বছর ধরে বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। এটি অবশ্যই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গত দশ বছরে, চীনা অর্থনীতিতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৬.২ শতাংশ এবং বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান ছিল ৩০ শতাংশেরও বেশি। চীন বিশ্বের অর্থনীতি বৃদ্ধির বৃহত্তম ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছে।
এবারের ফোরামে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের চেয়ারম্যান বোর্জে ব্রেন্ডে বলেন, চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার সমগ্র বিশ্বের তুলনায় বেশি এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান চলতি বছর ৩৬ শতাংশে পৌঁছতে পারে।
এদিকে বেশ কয়েকজন অংশগ্রহণকারী মনে করেন, চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি আছে। কানাডার শিল্পপতিদের প্রতিনিধি অ্যালেক্স জাভোরনকভ বলেন, চীনের দক্ষ প্রশাসনিক মান এবং লক্ষ্যযুক্ত নীতিব্যবস্থা দেশকে ‘প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে প্রতিটি ক্ষেত্রে’ সক্ষম করে তুলেছে। পাশাপাশি, অংশগ্রহণকারীরা চীনের ভোক্তাবাজার, স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতিবিরোধী ক্ষমতা, ও উদ্ভাবনক্ষমতা নিয়েও আশাবাদী।
এবারের ফোরামের প্রথম দিনে ‘চীনে সবুজ হাইড্রোজেন শক্তি উন্নয়নের রোডম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সালের আগে ‘কার্বন শিখর’ অর্জনের জন্য চীন ৩৫টি পদক্ষেপ নিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী শূন্য-কার্বন রূপান্তরকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। ২০২২ সালে চীন বিশ্ব উদ্ভাবন সূচক নামতালিকার ১১ নম্বর স্থানে ছিল। আর, এক্ষেত্রে মধ্যম আয়ের অর্থনৈতিক সত্তাগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে ছিল চীন। যেহেতু চীন উচ্চ-মানের উন্নয়নের প্রচার করে এবং একটি উদ্ভাবন-চালিত উন্নয়নকৌশল প্রয়োগ করে, ভবিষ্যতে দেশটিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আরও নতুন চালিকাশক্তি দেখা যাবে।
গোটা বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চীন একটি অভিন্ন কল্যাণের সুযোগ। ২০১৯ সালে অ্যালেক্স জাভোরনকভ তাঁর কোম্পানির সদর দফতর চীনে স্থানান্তর করেন। কারণ, চীনের উচ্চ-মানসম্পন্ন প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার লক্ষ্য আর্থ-বাণিজ্যিক যোগাযোগ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও অভিন্ন কল্যাণ সৃষ্টি করা। অধিক থেকে অধিকরত বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাই চীনে বিনিয়োগ শুরু করেছে।
চীন বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ অব্যাহত রাখবে এবং বিশ্বের সাথে নিজের সাফল্য শেয়ার করে চলবে। চীন আধুনিক পরিষেবা শিল্প খাতকে বিদেশিদের জন্য ধীরে ধীরে আরও উন্মুক্ত করবে এবং মেধাস্বত্ব সুরক্ষাকাজকে আরও শক্তিশালী করবে। চীন বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নের জন্য আরও বেশি সুবিধাজনক পরিবেশ সৃষ্টি করবে। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার শীর্ষ ফোরাম, চীনের আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা, ও চীনের আন্তর্জাতিক সরবরাহচেইন ত্বরান্বিত মেলা, ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে চীন। (ছাই/আলিম)