জুন ২৮: চীনের সিনচিয়াং আসলে কেমন? সেখানকার পরিস্থিতির আসল চিত্রটা কী? সম্প্রতি জাপানে চীনা দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত এক সফরে অংশগ্রহণ করেন একদল জাপানি নাগরিক। তাঁরা সবাই তাদের নিজের খরচে এ সফরে অংশগ্রহণ করেন। নয় দিনে ২০ জন জাপানি পরিদর্শন করেন উরুমুছি, তুর্পান, কোরলা ও কাশগর।
জাপানি দলে ৭০ ও ৮০ বছর বয়সী ব্যক্তি যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অফিসকর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। তাঁরা সফরকালে গভীরভাবে সিনচিয়াংয়ের সংস্কৃতি ও রীতিনীতি অনুভব করেছেন। তবে, সফরের আগে, জাপানি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সিনচিয়াং-সম্পর্কিত নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে, তাদের মনে সিনচিয়াং সম্পর্কে খুব একটা ভালো ধারণা ছিল না। এমন ধারণা নিয়েই তাঁরা সিনচিয়াং সফর করেন।
একটি উচ্চ মানসম্পন্ন তুলাক্ষেত পরিদর্শন করার সময় জাপানি পর্যটক আকিহিকো ইনোউ ‘খুবই মর্মান্তিক’ টার্মটি ব্যবহার করেন। কারণ, তিনি দেখেছেন ২০.২ হেক্টর তুলাক্ষেতে বীজ বপন করতে মাত্র ২ দিন এবং ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রে করতে মাত্র ৫ ঘন্টা সময় লাগে! তিনি বলেন, এটি জাপানি গণমাধ্যমে প্রচারিত তথাকথিত ‘জোরপূর্বক শ্রম’ আদায়ের অভিযোগের সম্পূর্ণ বেমানান। কারণ, তুলা চাষের ক্ষেত্রে সিনচিয়াংয়ে ইতোমধ্যেই যন্ত্রের ব্যবহার অনেক বেড়েছে।
সুতির টেক্সটাইল কারখানায় যখন ওয়াতানাবে ইউমি অত্যন্ত দক্ষ স্বয়ংক্রিয় স্পিনিং সরঞ্জাম এবং আত্মবিশ্বাসী ও শান্ত শ্রমিকদের দেখেন, তখনই তিনি জাপানি গণমাধ্যমে প্রচারিত তথাকথিত ‘সিনচিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন’ সম্পর্কিত খবরাখবরের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করেন। তিনি সামাজিক গণমাধ্যমে সিনচিয়াংয়ের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার কথা বলেন।
জাপানি পর্যটকদলের অনেক সদস্য সিনচিয়াংবাসীদের সাথে সকালের ব্যায়াম করেছেন, একসাথে বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, একসাথে নাচ-গান করেছেন, এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জেনেছেন। সবকিছু দেখেশুনে জাপানি প্রবীণ মম তারো সিনচিয়াংয়ের প্রেমে পড়েছেন।
অন্য একজন জাপানি পর্যটক সুগিয়ামা শুনজো বলেন, এবারের সিনচিয়াং সফর প্রাচীন রেশমপথ সফরের মতো মনে হচ্ছে। ইতিহাসের ওজন অনুভব করা খুবই অর্থবহ। জাপানি নেটিজেনরা তাঁদের পোস্ট দেখার পর বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর গণমাধ্যমে প্রকাশিত সিনচিয়াংসম্পর্কিত খবরের সাথে প্রকৃত সত্যের কোনো মিল নেই। সিনচিয়াং ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন’।
প্রকৃত সিনচিয়াং কেমন? গত কয়েক বছরে শতাধিক দেশ ও অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি কূটনীতিক ও সাংবাদিক সিনচিয়াং সফর করেছেন। তাঁরা সিনচিয়াংয়ের সৌন্দর্য, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন অনুভব করেছেন। ফরাসি লেখক ও সাংবাদিক ম্যাক্সিম ভিভাস তিনবার সিনচিয়াং সফর করেন এবং একটি বই লেখেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর গণমাধ্যমে সিনচিয়াং সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে বা হচ্ছে, তা সত্য নয়। তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চীনকে অপবাদ দিচ্ছে মাত্র।
পাশাপাশি, পরিসংখ্যানেও সিনচিয়াংয়ের সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রতিফলিত হয়। ২০২০ সালের শেষ দিকে সিনচিয়াং দারিদ্র্যমুক্ত হয়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সিনচিয়াংয়ের জিডিপি ছিল ৪১৪.৯৫২ বিলিয়ন ইউয়ান আরএমবি, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪.৯ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত সিনচিয়াংয়ে আসা পর্যটকের সংখ্যা ছিল গত বছরের চেয়ে ৩৪.৯১ শতাংশ বেশি। বর্তমান সিনচিয়াংয়ের অর্থনীতি অব্যাহতভাবে উন্নত হয়। সিনচিয়াংয়ের সমাজ সম্প্রীতিময় ও স্থিতিশীল। এখানে মানবাধিকার পরিস্থিতিরও ক্রমশ উন্নতি ঘটছে।
জাপানি সফরকারীদের অভিজ্ঞতা আরেকবার সিনচিয়াংসম্পর্কিত পশ্চিমা গুজবকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছে। চীন বেশি-বিদেশী বন্ধুদেরকে সিনচিয়াং ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তাঁরা নিজেদের চোখে একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ, সম্প্রীতিময় ও শান্তিপূর্ণ সিনচিয়াং দেখতে পারেন। (ছাই/আলিম)