‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ২৪
2023-06-27 19:35:52


 এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে  

১।  চীনের ৩৪টি প্রদেশ ঘুরেছেন বাংলাদেশী ড. কিশোর কুমার বিশ্বাস 

২। মহামারী কাটিয়ে আবার পর্যটনমুখর চীন

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ২৪তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।  

১। সাক্ষাৎকার পর্ব-

চীনের ৩৪টি প্রদেশ ঘুরেছেন বাংলাদেশী ড. কিশোর কুমার বিশ্বাস 

 

ড. কিশোর কুমার বিশ্বাস প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, গবেষক ও লেখক। ২০০০ সালে তিনি চীন সরকারের বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে উচ্চশিক্ষার্থে চীনে পাড়ি জমান। তিনি বেইজিং-এ ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সফটওয়্যার বিভাগে স্নাতকোত্তর এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—ভাষা প্রক্রিয়াকরণ  বিষয়ে পি. এইচ. ডি সম্মান লাভ করেন। লেখাপড়া শেষে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় চার বছর শিক্ষকতা ও গবেষণা করার পর বর্তমানে চীনের প্রথম সারির একটি আন্তর্জাতিক আই. সি. টি কোম্পানিতে আই. টি ট্রেনিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত রয়েছেন।

তিনি প্রায় ২৩ বছরের চীন প্রবাস জীবনে চীনা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন মিডিয়ায় অংশগ্রহণ ও লেখালেখির পাশাপাশি ২০০৯ সালে জাতীয় চীনা ভাষা-সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক লাভ করেন। ড. কিশোর কুমার বিশ্বাস ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি চীনা ভাষার বই বাংলায় এবং বাংলা ভাষার বই চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছেন।

 

·      প্রশ্ন- ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি? – 

কিশোর কুমার -  অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।  আমি ভালো আছি।

ড. কিশোর কুমার বিশ্বাস

 

·      প্রশ্ন-  আপনি তো প্রায়  দুই যুগ ধরে চীনে আছেন। পড়ালেখা শেষ করে ,  সেখানেই নিজের ক্যারিয়ার গড়েছেন। এতো বছর ধরে চীনে থাকছেন, নিশ্চয়ই অনেক প্রদেশ, শহর কিংবা গ্রামে ঘুরেছেন।  আমরা জানতে চাই কোথায় কোথায় ঘুরেছেন  আর কেমন ছিল সেসব জায়গায় ঘুরার অভিজ্ঞতা ?

 

কিশোর কুমার – আসলে চীনে প্রায় দীর্ঘ ২৩ বছরের বেশি প্রবাস জীবনে চীনে     আমার এখনো কোথায় কোথায় যাওয়া হয়নি সেই প্রশ্ন করলেই আমার তালিকা ছোট হতো। এখানে আমার ছাত্রজীবন ও কর্মজীবনের ফাঁকে ফাঁকে আমি এদেশের ৩৪টি প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, এবং ছোট-বড় শহরের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। আমারা বেইজিং শহর ও এর আশেপাশের অঞ্চলের পাশাপাশি থিয়ানচিন,নানিং,হুপেই,সুচৌ, চিয়াংসু,নানচিং, কুয়াংচৌ,শেনচেন, ইয়ুননান প্রদেশের কুনমিং শহরসহ আরও বিভিন্ন শহরে, সাংহাই,চিয়াংসু, তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, কানসু, ছিংহাইসহ উত্তর, পূর্ব,পশ্চিমের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেছি। 

স্ত্রী ও সন্তানের সাথে ড. কিশোর কুমার বিশ্বাস

 

পর্যটক হিসেবে এসব জায়গায় ঘুরার অভিজ্ঞতা ভালো ছিল। চীন একটি বিশাল দেশ। এর একেক অঞ্চলের একেক বৈশিষ্ট্য। তবে দেশজুড়ে বিশেষকরে শহরগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ উন্নত। এবং একই ধাঁচে নির্মিত হওয়ায় প্রথমদিকে খুব বেশি পার্থক্য চোখে নাও পড়তে পারে। এখানকার এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা ও খাবার ভিন্ন । আমার মতে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দিক থেকে চীনের দক্ষিন-পূর্ব অঞ্চল হাংচৌ, সুচৌ অঞ্চল আর দক্ষিণের ইয়ুননান প্রদেশ। আর আন্তর্জাতিক জাঁকজমক ও কর্মচাঞ্চল্যের বৈশিষ্ট্যে, বেইজিং, শেনচেন, সাংহাই ,কুয়াংচৌ আমার বেশি প্রিয়।

·      প্রশ্ন-  এই যে দীর্ঘ সময় ধরে চীনে আছেন, সেখানকার কোন বিষয়টা আপনাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে?

কিশোর কুমার- প্রবাস জীবনের দীর্ঘসময়ে চীনের বেশকিছু বিষয় আমাকে আকৃষ্ট করেছে। বিশেষ করে চীনের ভাষা সংস্কৃতি, এর দীর্ঘ ইতিহাস, চীনাদের বন্ধুত্বসুলভ আচরণ, বাহারি খাবার, ছিমছাম শহুরের জীবনের নানা সুবিধা এবং শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুযোগ সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য।

ড. কিশোর কুমার বিশ্বাস

·      প্রশ্ন-  চীন একটি ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা ভিন্ন ,খাবার ভিন্ন, এতো ভিন্নতায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন কিভাবে?

কিশোর কুমার- আমি নিজেকে একজন মুক্ত মনের মানুষ বলে মনে করি। আমার কাছে মনে হয় বৈচিত্যেই  উপভোগ্য সৌন্দর্য্য। আমি উনিশ বছর বয়সে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করার পর চীনে বৃত্তি নিয়ে চলে আসি। ওই বয়সটায় বদ্ধ ঘরে না থেকে বিশ্বটাকে উল্টেপাল্টে দেখার সূচনা। আমি সেই সুযোগ পেয়েছি আর সেই সুযোগ কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। নতুন একটি ভাষা শিক্ষা, নতুন একটি সংস্কৃতির সংস্পর্শ নতুন একটি বিশের দুয়ার খুলে দেয়। আমি মুক্তমনে দু হাত উজার করে একাধিক দুয়ার খোলার চেষ্টা করেছি। তা আমার শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন ও সংসারজীবনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

 

·      প্রশ্ন-  আমরা জানি আপনি লেখালেখিও করেন। এরইমধ্যে আপনার বেশকিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখনো চীনের পর্‍্যটন নিয়ে বই লিখেন নি। জানতে চাই, সামনে লিখবেন এমন কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?

কিশোর কুমার- প্রযুক্তি আমার পেশা আর সাহিত্য আমার নেশা। এই দুয়ের সমন্বয়ে আমি আমার চিন্তা চেতনা,অভিজ্ঞতাকে  লিপিবদ্ধ করে রেখে যেতে চাই। আমার অনেক ইচ্ছা আছে চীনের পর্‍্যটন নিয়ে লেখার। 

·      প্রশ্ন-  বাংলাদেশ থেকে যারা  চীনে ঘুরতে যেতে চায় কিংবা পড়তে যেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?

কিশোর কুমার- যারা চীনে ঘুরতে আসতে চান তাদের প্রাথমিক চীনা ভাষা শিখে আসলে ভালো। তবে প্রযুক্তির এই যুগে অনুবাদক মোবাইল অ্যাপস দিয়েও দৈনন্দিন কাজ হয়ে যাবে।  যদি সাথে একজন স্থানীয় কেউ থাকেন তবে সবচেয়ে ভালো।

আর যারা চীনে পড়তে আসতে চান তারা আসার আগে শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের সুস্পষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে আসবেন। তবে ইংরেজি ভাষার দক্ষতাসহ চীনাদের মতো করে চীনা ভাষা শিখে থাকলে ভালো। আর তা নাহলে চীনে এসেও মূল পড়ালেখার পাশাপাশি চীনা ভাষাকে ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে।

·      প্রশ্ন-   আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

কিশোর কুমার- আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম

 

২। মহামারী কাটিয়ে আবার পর্যটনমুখর চীন

মহামারীর পর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চীনের পর্যটন শিল্প। কড়াকড়ি আর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় আবার ঘুরতে বের হচ্ছেন পর্যটকরা। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই চীনের পর্যটকরা মহামারির আগের দিনগুলোর মতো অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ শুরু করেছেন। 

ইয়ুননান প্রদেশ

চীনের ইয়ুননান প্রদেশের ছুসিয়ং ই জাতির স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের মোওতিং কাউন্টিতে লোকজ ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন পর্যটকরা। ই জাতির ঐতিহ্যবাহী রঙিন পোশাকে চলছে নৃত্য পরিবেশন। তাদের সঙ্গে নাচছেন পর্যটকরাও।

ছোংছিং থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক মিস চেন বলেন, তারা নাচ পরিবেশন করছিল। এই সময় আমাকে দেখে তারা চিৎকার করে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বলে। এখানকার ঝংকার এমনই মজার যে, আমার মতো তালকানা মানুষও তাদের সঙ্গে পা মিলিয়ে দিব্যি নাচে মেতে ওঠে।

সিনচিয়াং

চীনের সিনচিয়াং। উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। মরুভূমির মধ্য দিয়ে উটের পিঠে চলেছেন পর্যটকরা। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগের জন্য অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের খুব পছন্দের গন্তব্য সিনচিয়াং। মরুভূমির মধ্যে উটে চড়া, বালিতে স্লাইডিং উপভোগ করা ইত্যাদি বিশেষ আয়োজন খুব উপভোগ করেন পর্যটকরা।

উহান থেকে আসা ঘুরতে আসা পর্যটক চেং চিং বলেন, প্রথমবারের মতো আমি সিনচিয়াং এসেছি। এখানে মরুভূমি দেখেছি। শতবর্ষী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলেছি। উহান থেকে এখানকার পরিবেশ একদম আলাদা। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোমুগ্ধকর।

সিনচিয়াংয়ের প্রকৃতি এবং সংস্কৃতি উপভোগ করতে চীনের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন এখানে।

হাইখোও সিটি

দক্ষিণ চীনের দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের রাজধানী হাইখোও সিটি। সমুদ্র সৈকত এবং নানা রকম উৎসব উদযাপন পর্যটকদের দারুণ প্রিয়।

গেল মাসে চায়না টুরিজম ডে উপলক্ষ্যে এখানে নানা রকম আয়োজন করা হয় । এখানকার সংগীত উৎসব এবং সুস্বাদু খাবার উপভোগ করেন পর্যটকরা। স্থানীয় বাজার ও মেলাগুলো উপভোগ করেন তারা। কেনাকাটা, উৎসব আর প্রকৃতি সব মিলিয়ে হাইখোও হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন ,এখানে একাধিক সংগীত উৎসব হয়েছে, সুস্বাদু খাবার পরিবেশিত হয়েছে। পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা সকলেই এগুলো উপভোগ করছেন। হাইনান বা হাইখোওর আতিথেয়তা আমরা তুলে ধরছি।

চীনের পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদযাপিত এবারের পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সুন্দর চীন, আনন্দময় ভ্রমণ’। এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে চীনের ভ্রমণপ্রিয় মানুষ এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাদের দেশের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানে। উপভোগ করছেন মহামারি থেকে মুক্ত হয়ে গ্রীষ্মের উদার সূর্যের আলোয় ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

 

 

 

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী