কেন অনেক দেশ ব্রিকস সহযোগিতা নিয়ে আশাবাদী?
2023-06-26 10:34:34

 

বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের আবেদন করেছে

 

গত ১৯ জুন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায় যে, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসে যোগদানের জন্য আবেদন করেছে।

বাংলাদেশের ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ জানায়, ১৪ জুন জেনিভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠকের পর বাংলাদেশ আবেদনটি জমা দেয়।

DW বাংলা ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব মোমেন ১৯ জুন বলেন, বাংলাদেশ ব্রিকস দেশের জোটে যোগ দিতে পারলে খুব খুশি হবে। মোমেন বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, দেশটি ২০২১ সালে সফলভাবে ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পরিবারে যোগ দিয়েছে।

 

কেন ব্রিকস সহযোগিতা এত আকর্ষণীয়?

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ব্রিকস সহযোগিতার প্রভাব পাঁচটি দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। যা বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার উন্নতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণ উন্নত করার জন্য একটি গঠনমূলক শক্তি হয়ে উঠেছে, আরও বেশি দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

 

বাংলাদেশ ছাড়াও আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, ইরান, সৌদি আরব, কাজাখস্তানসহ আরও অনেক দেশ ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।

 

গত ১০ জুন, স্প্যানিশ "ইন্তিফাদা" ওয়েবসাইটএ প্রশ্ন করা হয়: কেন অনেক উন্নয়নশীল দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে চায়?

প্রতিবেদনে বলা হয় যে, অনেক দেশ এই সত্যে ক্লান্ত যে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিকভাবে পুরো বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, ডলার দিয়ে জোর করে লেনদেন করতে হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের নির্দেশনা না মানলে নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক ও আর্থিক ব্ল্যাকমেলের শিকার হতে হয়। বিপরীতে, ব্রিকস দেশগুলি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য উন্নয়নে সাহায্য করার জন্য উন্মুক্ত এবং কখনও পূর্বশর্ত আরোপ করে না।

 

"সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ব্রিকস দেশগুলি বহু-মেরুকরণ এবং বহুপক্ষবাদ রক্ষা করে। ব্রিকস দেশগুলি শীতল যুদ্ধের ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং বিশ্বের জন্য উপকারী আরও ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা উন্মুক্ত করছে।” সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল এ কথা বলেছেন।

 

রাশিয়ান ন্যাশনাল হায়ার স্কুল অফ ইকোনমিক্সের বহুপাক্ষিক কৌশলগত প্রকল্প উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা অফিসের প্রধান ভ্যালেরিয়া গর্বাচোভা লিখেছেন, ব্রিকস দেশগুলির প্রধান লক্ষ্য হল উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থের মুখপাত্র হওয়া। যা বেশিরভাগ দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর অর্থ ব্রিকস দেশগুলোর সম্প্রসারণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রিকস সহযোগিতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে, সহযোগিতা ফলপ্রসূ ফলাফল অর্জন করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট অনুসারে, অনুমান করা হয় যে, ২০২১ সালে পাঁচটি ব্রিকস দেশের মোট অর্থনীতির পরিমাণ বিশ্বের মোটের ২৫.২৪ শতাংশ। যা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জি-৭ জোটকে ছাড়িয়ে গেছে। তাদের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ বিশ্বের মোট বাণিজ্যের ১৭.৯ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালে, বিশ্বব্যাংকে পাঁচটি ব্রিকস দেশের ভোটের ক্ষমতা হয় ১৪.০৬ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে মোট শেয়ারের ১৪.১৫ শতাংশ হয়।

 

চীন ব্রিকস পরিবারে যোগদানে আরও অংশীদারদের স্বাগত জানায়

এ ছাড়া, এটি উল্লেখযোগ্য যে ফ্রান্স, জি-৭-এর সদস্য দেশও ‘ব্রিকস’-এ যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। গত ১৯ জুন, ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে, তারা ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নিতে চায়। ব্রিকস-এ যোগদানের জন্য কিছু দেশের ইচ্ছার বিষয়ে চীন বারবার বলেছে যে, ব্রিকস দেশগুলি একটি উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ব্রিকস সম্প্রসারণে সমর্থন করে এবং আরও অংশীদারদেরকে ব্রিকস পরিবারে যোগদানে স্বাগত জানায়। ২০ জুন, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ব্রিকস দেশগুলি উদীয়মান বাজার অর্থনীতির দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। সদস্য সম্প্রসারণ হল পাঁচটি ব্রিকস দেশের রাজনৈতিক ঐকমত্য। চীন সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীন আরও অংশীদারদের ব্রিকস পরিবারে যোগদানে স্বাগত জানায়।

 

(জিনিয়া/তৌহিদ)