চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
2023-06-26 20:32:27

 

২৪তম পর্বে যা থাকছে:

* শেনচেনের রাস্তায় নামতে যাচ্ছে মানববিহীন স্ব-চালিত রোবোট্যাক্সি

* তিন হাজার প্রতিষ্ঠানে ফাইভ-জি সুবিধা দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিলো চীন

* 'নেট শূন্য' কার্বন নিঃসরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চীনের মোটরযান খাত 

 

 

শেনচেনের রাস্তায় নামতে যাচ্ছে মানববিহীন স্ব-চালিত রোবোট্যাক্সি

সায়েন্স-ফিকশন মুভিগুলোতে দেখানো শহরের দিকেই বুঝি এগুচ্ছে শেনচেন। শহরজুড়ে স্বচালিত রোবোট্যাক্সি যদি চালক ছাড়াই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বটি পুরোপুরি তাদের কাধে নেয়, তখন বোধয় বলাই যাবে যে কল্পনা অবশেষে বাস্তবে রূপ নিলো।

সেই দিন আর বেশি দূরে নয়। স্ব-চালিত গাড়ির ধারণা চীনের জন্য নতুন কিছু নয়। বেইজিংয়ে ইতোমধ্যে স্বল্প পরিসরে চলছে স্বচালিত রোবোট্যাক্সির কার্যক্রম। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে শেনচেনের নাম। খুব শিগগিরই চালকবিহীন স্বচালিত রোবোট্যাক্সির পাইলট প্রজেক্ট শুরু হতে যাচ্ছে এখানে। এ বিষয়ে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে স্বায়ত্তশাসিত ড্রাইভিং পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানি পনি ডট এআই, ভ্রমণ প্লাটফর্ম ‘অনটাইম’ ও ছিয়ানহাইয়ের শেনচেন-হংকং মডার্ন সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি কো-অপারেশন জোনের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে।

চুক্তি অনুযায়ী পনি ডট এআই ও অনটাইম যৌথভাবে ছিয়ানহাইয়ে একটি প্রফেশনাল রোবোট্যাক্সি অপারেশন টিম গঠন করবে। এ টিমের কাজ হবে, চালকবিহীন রাইড-হেইলিং সেবার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, দায়িত্ব ভাগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি স্বায়ত্তশাসিত ড্রাইভিং প্রযুক্তির বাণিজ্যিক প্রয়োগ সম্প্রসারণের জন্য প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে সহায়তা করবে। অন্যান্য রোবোট্যাক্সি সার্ভিসের মতো এই রোবোট্যাক্সিগুলোতে সামনের সিটে কোনো মানুষের প্রয়োজন পড়বে না। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রোবোট্যাক্সি পরিষেবাগুলির বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য চীনব্যাপী অনেক শহরে রোবোট্যাক্সিবান্ধব নীতি চালু করা হয়েছে৷

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে শেনচেনে ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টেড যানবাহন পরিচালনার উপর একটি প্রবিধান কার্যকর হয়। যার ফলে শেনচেনই চীনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে চালকবিহীন স্বায়ত্তশাসিত ড্রাইভিং পরিষেবার অনুমতিপ্রাপ্ত প্রথম শহর।

বিগত সময়ে পাইতু এপোলো, পনি ডট এআই, অটো এক্স ও ডিপরুট এআইয়ের মতো চীনের স্বায়ত্তশাসিত ড্রাইভিং কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের রোবোট্যাক্সি সেবা প্রমোট করছে। ছংছিং, উহান ও বেইজিং পুরোপুরিভাবে চালকহীন গাড়ি রাস্তায় নামানোর অনুমতি দেওয়ায় এ শহরগুলোতেই প্রথম কার্যক্রম শুরু করবার পরিকল্পনা নিয়েছে কোম্পানিগুলো।

অনটাইমের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, এই প্রথম শেনচেনে পুরোপুরি চালকহীন রোবোট্যাক্সি সার্ভিস নিয়ে কোন ভ্রমণ পরিষেবা সংস্থা কাজ করছে।

জিএসি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ফেং সিংইয়া বলেন রোবোট্যাক্সি সেবা এখন বাণিজ্যিকসেবা খাতে প্রবেশ করছে।

তিনি বলেন, “রোবোট্যাক্সি সারা দেশে বাণিজ্যিক পরিষেবার পর্যায়ে প্রবেশ করছে। ভ্রমণ পরিষেবা হিসাবে রোবোট্যাক্সির টেকসই উন্নয়নের একটি মূল কারণ হয়ে উঠেছে এই বাণিজ্যিক কার্যক্রম।”

ফরওয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোবোট্যাক্সির উন্নয়নের উপর গতবছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রায় ৪২.৬ শতাংশ ব্যবহারকারী নতুন প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা গ্রহনের জন্য রোবোট্যাক্সিতে ভ্রমণ করবেন।

 

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

 

তিন হাজার প্রতিষ্ঠানে ফাইভ-জি সুবিধা দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিলো চীন

 

শিল্পখাতের বিকাশে নানা রকম উদ্যোগ নিয়ে থাকে চীন সরকার। এবার কারখানাগুলোকে ফাইভ-জি ইন্টারনেটের আওতায় আনার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। এতে করে উৎপাদন কার্যক্রমে গতি আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চীনের শিল্পখাতে ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠানে ফাইভ-জি সুবিধা দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে দেশটির শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৫৪ টি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কর্মপরিকল্পনায় রাখা হয়েছে ৫১২টি প্রকল্প, যেখানে ফাইভ-জি প্লাস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টারনেট সুবিধার দিকটি গুরুত্ব পাবে।

এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এবং ক্লাউড প্ল্যাটফর্মগুলোকে  চায়না টেলিকম, চায়না মোবাইল এবং চায়না ইউনিকমের সঙ্গে  সংযুক্ত করা। 

গ্লোবাল ডিজিটাল ইকোনমি কনফারেন্স সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়, এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ৩০ হাজার ফাইভ-জি বেস স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক সব প্রিফেকচার-স্তরের শহরগুলোতে পৌঁছে গেছে এবং এই নেটওয়ার্কে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬৩ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে।

এই আধুনিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টারনেট জাতীয় অর্থনীতির ৪৫টি খাতকে সংযুক্ত করেছে, যার বাণিজ্যিক মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ইউয়ান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, "ফাইভ-জি প্লাস শিল্প ইন্টারনেট" হাজারো শিল্প কারখানায় প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিল্পের কাঠামোগুলো আরো প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে ।

ফাইভ-জি প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য চীনের টেলিকম কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম অনুমোদন  দেয় ২০১৯ এর জুনে এবং চীন এখন বিশ্বের বৃহত্তম ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের দাবিদার।

মন্ত্রণালয় জানায়, চীন পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোর দিকেও নজর রাখছে এবং ষষ্ঠ-প্রজন্মের যোগাযোগ প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নকে তরান্বিত করতে কাজ করছে।

 

|| প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি

|| সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

 

 

'নেট শূন্য' কার্বন নিঃসরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চীনের মোটরযান খাত 

 

সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল কার্বন-নিরপেক্ষতা প্রদর্শনীতে নানা মডেলের পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি প্রদর্শন করা হয়। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিপণ্যের প্রচারই ছিলো প্রদর্শনীটির মূল লক্ষ্য। ‘কার্বন-নিরপেক্ষতার পথ’ থিমকে সামনে নিয়ে সাজানো হয় এবারের প্রদর্শনীটি।

প্রদর্শনীটি গাড়ির। তবে অন্য সব গাড়ির প্রদর্শনী থেকে এটি একটু আলাদা। পুরো প্রদর্শনীটিই সাজানো হয়েছে পরিবেশবান্ধব মোটরযান দিয়ে। বিভিন্ন গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি ভিন্ন ভিন্ন মডেলের বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নিয়ে প্রদর্শনীতে এসে প্রমাণ করে দিলো সঠিক পথেই হাঁটছে চীনের মোটরযান খাত। ২০৬০ সালের মধ্যে 'নেট শূন্য' কার্বন নিঃসরণের দেশ হবার চীনের যে অঙ্গীকার, সেটিকে বাস্তবায়ন করতে মোটরযান খাতেও বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো প্রদর্শনীটিতে।  

চার-দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীটি ১ লাখ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীতে ৬শরও বেশি চীনা ও বিদেশি প্রদর্শক অংশ নেয়।

প্রদর্শনীতে নানা মডেলের গাড়ির পাশাপাশি চীনের আটটি গাড়ি কোম্পানির রাস্তা ধোয়া ও ঝাড়ু দেওয়ার বিদ্যুৎচালিত গাড়ি এবং বিদ্যুৎচালিত ময়লাবাহী ট্রাক প্রদর্শন করা হয়। এর মধ্যে কিছু গাড়ি ইতোমধ্যে সাংহাইয়ের রাস্তায় নামানো হয়েছে।   

সাংহাই ল্যান্ডস্কেপিং এন্ড সিটি এপিয়ারেন্স এডিমিনিস্ট্রেটিভ ব্যুরোর সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক ছেন ই চুন বলেন, বিদ্যুৎচালিত গাড়িগুলো খুবই কম শব্দ করে, ফলে নগরবাসীরা বিরক্ত হন কম।

তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ বা হাইড্রোজেনচালিত পাবলিক স্যানিটেশন যানবাহনগুলো কার্বন নিঃসরণ করে কম, শব্দও তেমন একটা করে না। যেহেতু এসব গাড়ির ইঞ্জিন তেমন শব্দ করে না, এতে পরিষ্কার কার্যক্রমের সময় নগরবাসীদের শব্দে তেমন অসুবিধা সহ্য করতে হয় না।”

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সূত্র বলছে, সাংহাইয়ে ৬ হাজার পাবলিক স্যানিটেশন যানবাহনকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত বাহনে রূপান্তরিত করা যাবে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাস অব্দী ৩২৪টি মোটরযানকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়িতে রূপান্তর করা হয়েছে।  

নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চীন ইতোমধ্যে ‘গ্রিন ইলেক্ট্রিসিটি সার্টিফিকেট’ নামের একটি লেনদেন স্কিমের কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। গ্রীন সার্টিফিকেট ট্রেডিং প্লাটফর্মের প্রজেক্ট টিম লিডার লিউ চুন বলেন, সিস্টেমটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ বিক্রয় কোম্পানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ করে দিয়েছে।

ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে চীনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সক্ষমতা বেড়েছে।

চীন ঘোষণা করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ‘কার্বন শিখর’এবং ২০৬০ সালের মধ্যে ‘কার্বন নিরপেক্ষতা’ অর্জন করবে।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী