বন্ধুরা, চীনের সিনচিয়াংয়ের আকসু এলাকার কুচা জেলার ছিমান থানার ইয়ংকুথুয়ানচিয়ে গ্রামের মামুতি এইদেরেসি হলেন নিজ এলাকার একজন বিখ্যাত গরুপালক। পৌর সরকার তাঁকে একটি নতুন গরুর খামার নির্মাণ করে দিয়েছে। তিনি গরুপালন সমবায় প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং এলকার বাসিন্দাদের নিয়ে গরুপালন শুরু করেন। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে আমি তাঁর গল্প বলব।
৭৯ বছর বয়সী মামুতি ছোটবেলা থেকে গরুপালন শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর মোট ৩৮টি গরু আছে। তিনি সাংবাদিককে জানান, আগে তিনি থুয়ানচিয়ে গ্রামের ৩০০ কিলোমিটার দূরে গরুপালন করতেন। দুই বা তিন মাসে একবার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পেতেন তিনি। গরুপালনের সেই কঠিন সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমার গরুর সংখ্যা বেশি। অন্যদের যেখানে এক বা দুটি গরু আছে, সেখানে আমার আছে ৩০টিরও বেশি। আসলে গরুপালন খুবই কঠিন ও ক্লান্তিকর কাজ। সবাই এ কাজ পারেন না। কিন্তু আমি থামিনি। আমি কখনও এ কাজ পরিত্যাগ করিনি।‘
যত পরিশ্রম, তত অর্জন। মামুতি'র গরুর ব্যবসা ক্রমশ জমে উঠছে। তিনি গরু বিক্রির আয় দিয়ে নিজের জীবনমান উন্নত করেছেন। তিনি মনে করেন, দেশের ব্যবস্থা ও পৌর সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা ছাড়া তাঁর পরিবার ধনি হতে পারত না। তিনি জানান, আগে গরুপালনের নির্দিষ্ট এলাকা ছিল না। বর্তমানে নির্দিষ্ট আধুনিক এলাকা আছে। এলাকার আয়তন বড় এবং পরিবেশ পরিষ্কার। তিনি এর জন্য স্থানীয় পৌর সরকার ও সিনচিয়াংয়ের সহায়ক-শহর নিংপোকে ধন্যবাদ জানান।
ইয়ংখুথুয়ানচিয়ে গ্রামের চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কমিটির সম্পাদক সুন চি পাও বলেন, ২০১৮ সালে চীনে গ্রাম চাঙ্গা করে তোলার কৌশল বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার কৃষকদের আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করতে থাকে। থুয়ানচিয়ে গ্রামে, স্থানীয় বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী, সমবায়ের কাঠামোয় বাসিন্দাদের চাষ ও পশুপালনের আকার বাড়ানো হয়েছে। বাসিন্দারা সমবায়ে অংশ নিতে পারেন। এ সম্পর্কে সুন চি পাও বলেন, ‘কারণ, বর্তমান সমাজে একা কাজ করা যায় না। সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন স্বার্থ অর্জন করতে হয়। মামুতি'র ৩০টিরও বেশি গরু আছে। কিন্তু তাঁর গরুর গোয়ালের অবস্থা খারাপ ছিল। সেজন্য আমরা নিংপো শহরের সিনচিয়াং সহায়ক গ্রুপের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় তাঁকে আধুনিক গোয়াল নির্মাণ করে দিয়েছি।’
সুন চি পাও বলেন, সমবায়-ব্যবস্থা আসলে থুয়ানচিয়ে গ্রামে জনপ্রিয়। থুয়ানচিয়ে গ্রাম হলো একটি বহু জাতির আবাসস্থল। গ্রামে উইগুর, হান, হুই, কাজাখ ও চুয়াং জাতির মানুষ বাস করে। বিভিন্ন জাতির মানুষ একসঙ্গে খাবার খায়, একই জমি চাষ করে এবং একসঙ্গে নাচ-গান করে। তাঁরা পরস্পরের রীতিনীতি ও ধর্মকে সম্মান করেন। পারস্পরিক সহায়তা ও সম্মানের ভিত্তিতে তারা চলে। সমবায় প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে মামুতি তাঁর হান জাতির দু'প্রতিবেশী ওয়াং স্যিয়াও চুন ও লিউ তা লি-কে নিয়ে গরুপালন শুরু করেন।
বর্তমানে ৫৩ বছর বয়সী ওয়াং স্যিয়াও চুনের বাবা হলেন মামুতি'র ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওয়াং স্যিয়াও চুন জানান, তাদের দু'টি পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ওয়াং স্যিয়াও চুনের পরিবার দরিদ্র। তাঁর স্মৃতিতে ছোটবেলা থেকে চাচা মামুতি তাঁদেরকে সহায়তা করে আসছেন। ওয়াং স্যিয়াও চুন বলেন, “আমাদের কাছে চাচা মামুতি নিজের বাবার মতো। আমরা দু'টি পরিবার পরস্পরের প্রতিবেশী। আমাদের মধ্যে কখনও অপ্রীতিকর সম্পর্ক ছিল না। চাচা মামুতির চোখের সামনে আমি বড় হয়েছি। আমার বাবা ও চাচা মামুতির বয়স ৮০ বছরেরও বেশি।”
ওয়াং স্যিয়াও চুন চাচা মামুতিকে অনেক ধন্যবাদ জানান এবং তার গবাদিপশু পালনের দক্ষতাকে স্বীকৃতি দেন। তিনি মামুতি'র সমবায়েও অংশ নিয়েছেন। এ সম্পর্কে ওয়াং স্যিয়াও চুন বলেন, “২০১৮ সালে মামুতি'র সমবায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে আমার দু'টি গরু আছে। যে-পরিবারের গরু আছে, সে-পরিবার মামুতি'র সমবায়ে অংশ নিতে পারে। আমরা নিজেদের গরুর সংখ্যা অনুযায়ী মুনাফা ভাগ করে নিই।”
ওয়াং স্যিয়াও চুএর একই বয়সের লিউ তা লিও মামুতি'র সমবায়ে অংশ নিয়েছেন। তিনি ১৯৮১ সালে থুয়ানচিয়ে গ্রামে আসেন। তিনি মামুতি'র প্রতিবেশী। লিউ তা লি'র কঠিন সময়ে মামুতি তাঁকে সহায়তা করেন। মামুতি সমবায় প্রতিষ্ঠা করার পর সময়মতো লিউ তা লিকে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
ওয়াং স্যিয়াও চুন ও লিউ তা লির গরুর সংখ্যা কম। সেজন্য তাঁরা অন্য কাজও করেন। মামুতি সমবায়ে তাঁদের অতিরিক্ত কাজ দিয়েছেন। তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করেন মামুতি।
মামুতি'র সমবায়ের সদস্যরা ভাল আয় করেন। গত বছর সমবায়টি গরু বিক্রি থেকে আয় করে প্রায় ১ লাখ ইউয়ান আরএমবি। এ বছরের প্রথম চার মাসে তাঁদের আয় ১ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। ভবিষ্যৎ নিয়েও মামুতি ও তাঁর অংশীদাররা আশাবাদী। তাঁরা বিশ্বাস করেন, সরকারের নীতি ও সুযোগ-সুবিধায় তাঁদের গরুপালনের ব্যবসা অবশ্যই আরও ভালো হবে। (ছাই/আলিম)