এটি মাউন্ট ছোমোলাংমা (এভারেস্ট)-এর নিকটতম প্রাথমিক বিদ্যালয়—তিব্বতের শিগাতসে শহরের তাশি জংশিয়াং ওয়ানছুয়ান স্কুল, যা মাউন্ট ছোমোলাংমা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তেনজিন কিটজং, ক্লাস ৩, গ্রেড ৪, তার আঙ্গুল পিয়ানোর কিবোর্ডের ওপরে সাবলিল ভঙ্গিতে মুভ করে। সে যে পিয়ানো ক্লাসে অংশ নিচ্ছে, তা হল স্কুলের ১৬টি শখের ক্লাসের অন্যতম। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শখ মেটাতে, স্কুল তথ্যপ্রযুক্তি, চারুকলা, উপস্থাপনা, খেলাধুলা, নৃত্য এবং হস্তশিল্পের মতো শখের ক্লাস চালু করেছে।
"আমি সত্যিই শখের ক্লাস করতে খুব পছন্দ করি, বিশেষ করে পিয়ানো ক্লাস।" তেনজিন কিটজং সাংবাদিকদের বলেন, "আমি পিয়ানো শিখছি শুনে আমার বাবা-মা খুব খুশি হয়েছেন। আমাদের পরিবারে বা আমাদের গ্রামের কেউ কখনও পিয়ানো বাজায়নি।"
বর্তমানে, তাশি জংশিয়াং ওয়ানছুয়ান স্কুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র একটি পিয়ানো রয়েছে। যখন তেনজিন কিটজং এবং তার সহপাঠীরা পিয়ানোর পাঠ নেয়, তখন তারা মাঝে মাঝে ইলেকট্রনিক পিয়ানোও ব্যবহার করে। পিয়ানো-শিক্ষক বাসাং এতে খুশী। তিনি তিংরি জেলার স্থানীয় লোক। তিন বছর আগে তিনি শিক্ষক কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং পিয়ানো-শিক্ষক হিসেবে তাশি জংশিয়াং ওয়ানছুয়ান স্কুলে যোগ দেন। কলেজে যাওয়ার পর তিনি পিয়ানো বাজাতে শেখেন।
"যখন আমি প্রাথমিক স্কুলে ছিলাম, তখন স্কুলে পিয়ানো ছিল না, পিয়ানো শেখার প্রশ্নই উঠতো না", বাসং বলেন। তিনি বলেন, "আমাদের সময়ের সাথে তুলনা করলে, এখন এটি একটি বিশাল পরিবর্তন।"
প্রতিবেদকের সাথে কথা বলা সময় অনেকেই স্কুলের সাম্প্রতিক পরিবর্তন বর্ণনা করতে “বিশাল পরিবর্তন” টার্মটি ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে তাশি জংশিয়াং ওয়ানছুয়ান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪১ বছর বয়সী ভাইস প্রিন্সিপাল দানবা রেনছিংও রয়েছেন। "আমি অনেক জায়গায় স্কুল পরিদর্শন করেছি এবং অধ্যয়ন করেছি, বড় বড় শহরের অনেক ভালো স্কুলসহ; তবে বলা যায় যে, সেই স্কুলগুলোর তুলনায়, তিব্বতের আমাদের স্কুলগুলো হার্ডওয়্যারের দিক থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই," বলেন দানবা রেনছিং।
তাশি জংশিয়াং ওয়ানছুয়ান প্রাথমিক স্কুলটি ১৯৮৩ সালে নির্মিত হয়। ২০১০ সালে এর পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণে ৮০ লাখ ইউয়ান বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০১৬ সালে সরকার আবার ৪ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করে। আজ স্কুলে ৬টি গ্রেড ও ২০টি ক্লাসে ৯২১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আধুনিক শিক্ষার সরঞ্জাম এখানে সব আছে, এবং জাতীয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল স্মার্ট শিক্ষা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা প্রথম-স্তরের শহরের শিক্ষা নিতে পারছে। স্কুলটি বিজ্ঞানাগার, ক্যালিগ্রাফি ক্লাসরুম, কম্পিউটার ক্লাসরুম, লাইব্রেরি এবং আর্ট রুমে সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত। সেইসাথে কৃত্রিম টার্ফ ফুটবল মাঠ এবং ইনডোর জিমনেসিয়ামও রয়েছে এখানে।
সব ধরনের হার্ডওয়্যার সুবিধা ছাড়াও, তিব্বতের শিক্ষার্থীরা ১৯৮৫ সাল থেকে রাষ্ট্র কর্তৃক বাস্তবায়িত শিক্ষার "তিনটি গ্যারান্টি" নীতি (খাদ্য, আবাসন এবং মৌলিক শিক্ষার খরচসহ) উপভোগ করে। সুবিধাভোগীরা সবাই কৃষক ও পশুপালকদের সন্তান এবং শহুরে এলাকায় দরিদ্র পরিবারের শিশু।
"দুপুর ও সন্ধ্যায় খাবারে তিনটি তরকারি ও একটি স্যুপ থাকে," পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আওয়াং নিছু জানালো। সে বলল, "স্কুলে খাবার ও জামাকাপড় আনতে হয় না। স্কুল শীত ও গ্রীষ্মে ইউনিফর্মের দুটি করে সেট বিতরণ করে। পাশাপাশি স্কুলব্যাগ, কম্বল, বালিশ, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট এবং সাবান দেয়।"
২০২১ সাল পর্যন্ত, "তিন গ্যারান্টি" নীতি তিব্বতের প্রায় ৯০ লক্ষ শিক্ষার্থীর উপকার করেছে এবং সরকার মোট ২০০ কোটি ইউয়ানের বেশি বরাদ্দ দিয়েছে এ খাতে। বর্তমানে, তিব্বতে প্রি-স্কুল শিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষার "তিন গ্যারান্টি" নীতি সম্প্রসারিত হয়েছে।
তেনজিন কিটজং-এর দাদা-দাদি স্কুলে যাননি এবং সারাজীবন কৃষি উত্পাদনের কাজে নিযুক্ত ছিলেন; তার বাবা জুনিয়র হাই স্কুলে পড়েছেন এবং তার মা প্রাথমিক স্কুলে পড়েছেন। তারা গ্রামে পল্লী ডাক্তার হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। "আমার বাবা-মা আমাকে কঠোরভাবে পড়াশোনা করতে বলেছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ও আমার পরিবারের প্রথম কলেজছাত্রী হওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে বলেছিলেন।" তেনজিন কিটজং জানালো।
পিয়ানো ক্লাসরুমে আবার প্রফুল্ল সঙ্গীত বেজে উঠল। এটি ছিল শিক্ষক বাসাং তেনজিন কিটজং এবং তার বন্ধুদের একটি স্থানীয় গান "আমার বাড়ি শিগাৎসে" শেখাচ্ছেন: "তোমার বাড়ি কোথায়, শিগাতসে আছে...শিগাৎসে একটি ভালো জায়গা।"
সঙ্গীতটি সুরেলা এবং শ্রেণীকক্ষে প্রতিধ্বনিত হয়। জানালার বাইরে, পাতাগুলি সবুজ হয়ে উঠছে এবং বাতাস গরম হচ্ছে। একটু দূরে, মাউন্ট ছোমোলাংমা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে তার পায়ের নীচের জমির পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)