সিনচিয়াংয়ের নান বা ‘নাং’ (২)
2023-06-23 19:16:10

এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।

 

‘নান’ শব্দটির উত্স বিদেশে। গবেষণা অনুসারে, ফার্সি ভাষা থেকে ‘নান’ শব্দটির উত্পত্তি। ইতিহাসে এই খাদ্যটির অন্যান্য নামও রয়েছে। ‘তার্কিক অভিধান’-এ ‘নান’কে ‘ইউহা’ ও ‘আইটমেইকে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সমভূমির লোকেরা একে ‘হুবিং’ বলে। ‘নান’  শব্দটি আরব উপদ্বীপ, তুরস্ক, মধ্য-এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ায় জনপ্রিয়। দেখা যায় যে, ‘নান’ নামের উত্পত্তি প্রাচীন পারস্যে। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে, উইগুরদের পূর্বপুরুষরা নানকে ‘আইমাক’ নামে ডাকতো। সিনচিয়াংয়ে ইসলামের আগমনের পর আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রভাবে খাবারটির নাম বদলে হয়ে যায় ‘নান’।

সিনচিয়াংয়ে  নাং-এর একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা চীনের অনেক ঐতিহাসিক উপকরণে লিপিবদ্ধ আছে। সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তুর্পানে থাং রাজবংশ আমলে (৬১৮-৯০৭) ‘নান’-এর অস্তিত্বের কথা জানা যায়। যাদুঘরে এর প্রমাণ সংরক্ষিত আছে। তুর্পানের লোকেরা হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে সূক্ষ্ম ও সুস্বাদু নান তৈরি করতে জানত।

চীনের অনেক প্রাচীন বিখ্যাত কবি তাদের কবিতায় নানের কথা উল্লেখ করেছেন। পাই চু ই এবং চিয়া সি সিয়েসহ কয়েকজন বিখ্যাত কবির লেখায় নানের উল্লেখ আছে। সিনচিয়াংয়ে একটি জিঙ্গেল আছে যা এইরকম: ‘আপনি যদি একদিন নান না খান, তবে বিরক্ত বোধ করবেন; আপনি যদি দুই দিন নান না খান, তবে আপনার পা তুষের মতো মনে হবে; যদি আপনি পাঁচ দিন নান না খান, তবে আপনি মাঝা (সমাধি) রাজার পূজা করবেন’। এতে দেখা যায়, সিনচিয়াংয়ের জনগণের জীবনে নান কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

প্রাচীন আমলে গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত গাধার গাড়িতে বা পায়ে হেঁটে দূরের ক্ষেতে যেতেন। দুপুরের খাবারের জন্য বাড়ি যেতে তাদের অসুবিধা হতো। তাই তারা সঙ্গে নান নিয়ে যেতেন, দুপুরের খাবার হিসেবে। খাওয়ার আগে কৃষকরা শক্ত নান থিয়ান শান পর্বতমালার গভীর থেকে প্রবাহিত নালার বিশুদ্ধ পানিতে চুবিয়ে রাখতেন। নান নরম হয়ে ফুলে ওঠার আগ পর্যন্ত তারা পপলার গাছের নীচে বসে বিশ্রাম নিতেন, আড্ডা দিতেন।  শুকনো নান পানির প্রভাবে নরম হবার পর তা খাওয়ার উপযুক্ত হতো। নানের সাথে তারা আরও খেতেন কাচা খাওয়ার যোগ্য শাকসবজি, তরমুজ, বা অন্যান্য ফলমূল। খাওয়ার পর তারা খানিকটা সময় কাটাতেন গাছের ছায়ায় গান গেয়ে।

নান কেন মানুষের পছন্দ? আপনি যদি সিনচিয়াংয়ে ভ্রমণে যান, তখন বুঝবেন যে, নান সেখানকার মানুষের অনেক প্রিয় একটি খাবার। সিনচিয়াংয়ের পরিবেশের সাথেও এই খাবার খাপ খায়। একবার সিনচিয়াংয়ের একদল ব্যবসায়ী শাংহাইয়ে যান। দলের সবাই সঙ্গে করে প্রচুর নান ও ইন্সট্যান্ট নুডুলস নিয়ে গিয়েছিলেন। পথে তাদের প্রধান খাবার ছিল নান। নানের সঙ্গে তাঁরা আরও খেতেন ডিম বা তাজা ফলমূল। খাওয়ার সাথে সাথে তারা স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় সিনচিয়াংয়ের লোকগান গাইতেন। ‘সিনচিয়াং আমাদের ভালো জায়গা’, ‘আনাল খান, আমার কালো চোখ’ এবং ‘দাবানচেংয়ের মেয়ে’ ইত্যাদি গান। শাংহাইয়ে তখন হালাল খাবার পাওয়া যেত না সহজে। তাদের সঙ্গের নান ছিল তাদের হালাল খাবারের উত্স।


সিনচিয়াংয়ের মানুষের মতে, জীবনে যতদিন নান ও চা আছে, ততদিন জীবন অর্থপূর্ণ। তাদের কাছে নান নিয়ে অন্য শহরে যাওয়া মানে, নিজের শহরকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া, নিজের জন্মস্থানের স্বাদ সঙ্গে নিয়ে যাওয়া। এ এক আশ্চর্য অনুভূতি।

এখন দিন বদলেছে। সমাজে অনেক নতুন নতুন অনেক জিনিসের মতো, নতুন নতুন খাবারও এসেছে। সিনচিয়াংয়ের মানুষ এখন আর আগের মতো শুধু নানের ওপর নির্ভরশীল নয়। কিন্তু নান তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আগেও ছিল, এখনও আছে।

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn  আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)