সি চিন পিং-এর তরুণ জীবন
2023-06-23 16:08:29

সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জবাবি চিঠিতে এমন কথা বলেছেন: তোমরা চিঠিতে বলেছো যে, চীনের একদম তৃণমূল পর্যায়ের গ্রামে গেলে সত্যিকার অর্থে বাস্তব তথ্যাবলী থেকে সত্যের সন্ধান করা এবং জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করা বোঝায়। তরুণ মানুষের উচিত ‘সক্রিয়ভাবে কঠিনতাকে চ্যালেঞ্জ করা’। এই কথা খুব ভালো। নতুন যুগে চীনা যুবকদের উচিত এমন চেতনা পোষণ করা।

‘সক্রিয়ভাবে কঠিনতাকে চ্যালেঞ্জ করা’ এই কথাটা সি চিন পিং বার বার উল্লেখ করেছেন। যা শুধু তার উত্থাপিত দাবি নয়, বরং এটা নতুন যুগে তরুণদের প্রতি তাঁর আকাঙ্ক্ষা।

১৯৬৯ সালে যখন সি চিন পিং-এর বয়স ১৬ বছরও হয় নি, তখন তিনি চীনের শায়ানসি প্রদেশের লিয়াং চিয়া হ্য নামে এক গ্রামে গিয়ে কৃষকের জীবন শুরু করেন।

ক্ষেতের কাজ, কয়লা পাঠানো...লিয়াং চিয়া হ্যতে সি চিন পিং প্রায় সব ধরনের কৃষিকাজ করেছিলেন, সব কঠোর কাজ করেছিলেন, তিনি হলেন কৃষকের চোখে ভালো ছেলে।

 

তখনকার কথা স্মরণ করে সি চিন পিং বলেন, নিজের প্রতি তাঁর প্রথম দাবি ছিল ‘সক্রিয়ভাবে কঠিনতাকে চ্যালেঞ্জ করা’।

তাহলে তিনি কিভাবে কঠিনতাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন? তরুণ সি চিন পিং-এর জীবনী থেকে হয়তো এর উত্তর পাওয়া যাবে।

১৯৮৫ সালের শীতকালে, তখন সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চাং হুং লিয়াং একটি চিঠির মাধ্যমে তত্কালীন সিয়া মেন শহরের উপ-মেয়র সি চিন পিং-এর সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি সবসময় সি চিন পিং-এর সাহায্য পেয়েছেন।

সি চিন পিং তখন চাং হুং লিয়াংকে লিয়াং চিয়া হ্যতে কৃষকের জীবনের অনেক গল্প শেয়ার করেছিলেন। অন্যতম একটি হল শীতকালে জৈব সার ব্যবস্থাপনা। এজন্য মলের ট্যাংক থেকে মল সংগ্রহ করে জমিতে সার হিসেবে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। এটা ছিল সে সময় গ্রামের সবচেয়ে কঠিন কাজ।

শীতকালে আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা থাকে, পানি মুহূর্তে বরফ হয়ে যায়। মলমূত্রের ট্যাংকে গেলে জুতা পরা যায় না, খালি পায়ে বেলচা দিয়ে কাজ করতে হয়। তখন সি চিন পিং-এর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর, যথেষ্ঠ লম্বাও ছিলেন না, শরীরও যথেষ্ঠ শক্তিশালী ছিল না। কাজ করতে অনেক ঘাম হতো, তারপর ঠান্ডা বাতাসে ঘাম আবার বরফ হয়ে যেত, এ যেন শরীর ও মনের কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে, এই কাজ তিনি সবচেয়ে বেশি করেছেন, প্রতিদিন তিনি সবার আগে সেই মলমূত্রের ট্যাংকে নামতেন।

সি চিন পিং বলেন, গ্রামে কৃষিকাজ করতে হলে শ্রমের চ্যালেঞ্জ পরাজিত করতে হয়। এভাবে আরো দ্রুত কৃষকের কাছে আসা যায়, কৃষকরা আপনাকে আরো বিশ্বাস করে।

 

এভাবে, সি চিন পিং খুব তাড়াতাড়ি কৃষকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। ২০ বছর বয়সে তিনি গ্রামের সিপিসি’র শাখা সম্পাদক হন।

পরে শিক্ষার্থী চাং হুং লিয়াং বিশেষ করে একবার লিয়াং চিয়া হ্যতে গিয়ে স্বচক্ষে দেখেন যে, সি চিন পিং সেখানে পুরো প্রদেশের প্রথম মিথেন গ্যাস আধার তৈরি করেছেন, তিনি নিজের কানে শুনেছেন, কৃষকের মুখে সি চিন পিং-এর লিয়াং চিয়া হ্যতে থাকার গল্প। চাং হুং লিয়াং বলেছেন, তিনিও অনেক শিখতে পেরেছেন, জীবনের পথে কঠিনতাকে চ্যালেঞ্জ করা মানেই শেখার সুযোগ, বেশি শিখলে, বেশি অর্জন করা যায়। বেশি করে কঠোর জায়গায় গিয়ে নিজের যোগ্যতা চর্চা করা যায়।

সক্রিয়ভাবে কঠিনতাকে চ্যালেঞ্জ করা, জনসাধারণের জন্য কাজ করা হল সি চিন পিং-এর কাজের নিয়ম ও দৃঢ় আস্থা। এ আস্থা দিয়ে তিনি যখন চেং তিং জেলায় কাজ করেন, তিনি সাইকেল চালিয়ে পুরো গ্রামের প্রতিটি অংশ পরিদর্শন করেন, বিস্তারিতভাবে জেলার অবস্থা, জনগণের মতামত জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, শুধুই আরামদায়ক জীবন কাটাতে চাওয়া, অনেক সাদামাটা চাহিদা। আমি কিন্তু ‘কঠিনতার সমুদ্রে’ ঢোকার প্রস্তুতি নিয়েছি।

 

নিজের আচরণ দিয়ে দৃষ্টান্ত রাখা, সি চিন পিং সবসময় নিজের জীবনের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তরুণ মানুষদের অনুপ্রেরণা দেন।

সিপিসি ও দেশের নেতা হওয়ার পর সি চিন পিং সবসময় তরুণ মানুষদের গুরুত্ব দেন, তাদের ‘সক্রিয়ভাবে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করায়’ উত্সাহ দেন।

২০১৩ সালের ৪ মে, সি চিন পিং যখন বিভিন্ন মহলের শ্রেষ্ঠ তরুণদের সঙ্গে আলোচনা করেন, তখন তিনি বলেন: অনেক মানুষের সফলতার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, তরুণ বয়সে কঠিনতাকে চ্যালেঞ্জ করার পথ বাছাই করার অর্থ ‘অর্জনকে’ বাছাই করা। অবদান রাখাকে বাছাই করা মানে উন্নত হৃদয়-সম্পন্ন হওয়ার পথ বাছাই করা। তরুণ বয়সে বেশি ব্যর্থতা, পরীক্ষার অভিজ্ঞতা পেলে সারা জীবনের পথ সুষ্ঠু হয়।

 

‘সক্রিয়ভাবে কঠিনতাকে চ্যালেঞ্জ করা’ মানে হতোদ্যম অবস্থায় কঠিনতার সামনে দাঁড়ানো নয়, বরং সক্রিয়ভাবে কঠিন অবস্থায় নিজের মানসিক অবস্থার সমন্বয় করা।

সি চিন পিং বলেন, তরুণ মানুষের উচিত সমাজের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ রাখা, শুধু বইয়ের জ্ঞান শেখাই যথেষ্ঠ নয়, বরং বাস্তবতার সঙ্গে অর্জিত জ্ঞান সংযুক্ত করলে বোঝা যায়, কিভাবে জনগণের জন্য কিছু করা যায়।

‘সক্রিয়ভাবে কঠিনতাকে চ্যালেঞ্জ করা’ তবে নিজের আসল অবস্থা অনুযায়ী, বিশেষ করে শারীরিক অবস্থা নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত পূরণ করতে হয়।

 

সি চিন পিং একবার বলেছিলেন যে, যখন তিনি চেং তিং-এ কাজ করতেন, তখন তিনি অনেক তরুণ ছিলেন এবং ভালো কিছু কাজ করতে অনেক আগ্রহী ছিলেন। প্রায় এক মাস পর একবার অসুস্থ হন। কেন? সবসময় রাত জাগার কারণে। তিনি বলেন, পরে তিনি বুঝতে পেরেছেন, এভাবে চলবে না, এটা দীর্ঘস্থায়ীও হবে না। তাই তিনি ভালোভাবে মানসিক অবস্থা সমন্বয় করেছেন। রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করা এবং আর দেরি না-করা। পরদিন আবার কাজ শুরু করা যায়।

 

ঠিক যেন সি চিন পিং এভাবে বলেন, ভবিষ্যত তরুণ মানুষদের, আশাও তাদের হাতে!