মৃত স্বামীর ইচ্ছা পূরণে অশীতিপর বৃদ্ধার তিব্বত ভ্রমণ!
2023-06-22 11:29:35

আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে আশি বছর বয়সে আপনি কেমন এবং কোথায় থাকবেন এবং কার সঙ্গে কী রকম জীবনযাপন করবেন? আপনার জীবনের অপূরণীয় স্বপ্নগুলো কী?

 

আজকের আলোছায়ার দ্বিতীয় অংশের গল্পটি ২০১৭ সালের সি ছুয়ান প্রদেশের। গল্পের প্রধান চরিত্রের নাম চেং চিং ফেই। অশীতিপর এ বৃদ্ধা স্বপ্ন পূরণে অদম্য সাহস দেখিয়েছেন। ছেলের সঙ্গে মৃত স্বামীর স্বপ্ন নিয়ে তিনি তিব্বত ঘুরে বেড়িয়েছেন।

 

চেং চিং ফেইয়ের তিব্বত গমনের স্বপ্ন স্বামীর সঙ্গে প্রেমে পড়া থেকে শুরু হয়। তার পরিবার ছিল খুব ধনী এবং তিনি ছোটবেলা থেকেই নাচ করতে এবং গান গাইতে পারতেন। শুধু তা-ই নয়, চেং চিং ফেই নানা বাদ্যযন্ত্রও বাজাতে পারেন। ১৯৫৭ সালে ২৪ বছর বয়সী চেং চিং ফেই একটি পার্টিতে সোং কুয়াং খ্য’র সঙ্গে পরিচিত হন। তারা দু’জন প্রথম দর্শনে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। তারা খুব দ্রুত বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর তাদের দু’জনের সুখী জীবন শুরু হয়। চেং চিং ফেই স্বামীর সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তখন কেবলই আনন্দ ছিল, কোনো বেদনা আমাদেরকে স্পর্শ করেনি।’

 

এভাবেই অনেক সুখী জীবন কাটান তারা। অবসরগ্রহণের পর তাদের হাতে অফুরন্ত সময় আসে। তাই সোং কুয়াং খ্য স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নানা জায়গায় ভ্রমণ করতে যেতেন।

 

২০১৭ সালে যখন তারা তিব্বতে ঘুরে বেড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন সোং কুয়াং খ্য অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে থাকার সময় চেং চিং ফেই প্রতিদিন আগের মতো হাসিখুশি মেজাজ প্রদর্শন করতেন। কারণ তিনি স্বামীর সামনে নিজের বেদনার্ত ও ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে হাজির হয়ে স্বামীকে চিন্তায় ফেলতে চাননি। চেং চিং ফেই স্বামীকে সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘তুমি সুস্থ হলে আমরা একসঙ্গে তিব্বতে যাবো।’ কিন্তু সোং কুয়াং খ্য আর সুস্থ হননি, বরং মৃত্যুবরণ করেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর চেং চিং ফেই শোকে কাতর হয়ে পড়েন।

 

মা বাবাকে খুব মিস করছে দেখে ছেলে সোং চিয়েন হুই মায়ের জন্য কিছু করতে চান। তিনি মাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কোথাও ঘুরতে যেতে চান কি?’ মা উত্তরে বলেন, ‘তিব্বত’। সোং চিয়েন হুই বুঝতে পারেন, মা বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে চান।

 

তবে তিব্বত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত। সোং চিয়েন হুই মনে করেন, ওখানে গিয়ে মা উচ্চতা-জনিত অসুস্থতায় ভুগতে পারেন। কিন্তু মা তার নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

 

এমতাবস্থায় চেং চিং ফেই গোপনে তিব্বত যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে ছেলে তার সঙ্গে তিব্বত গেলে অনেক নিরাপদ বোধ করবেন তিনি।

 

সোং চিয়েন হুই একজন মোটরসাইকেল রাইডার। মাঝেমাঝে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। এবার তিনি মাকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে তিব্বতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজ উদ্যোগে মোটরসাইকেলের পিছনের সিটে একটি সিট-বেল্ট স্থাপন করেন, যাতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

 

পুরোটা পথ জুড়ে সোং চিয়েন হুই তার মায়ের দিকে খেয়াল রাখেন। মাকে বার বার জিজ্ঞেস করেন, শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা, মাথা ব্যথা আছে কিনা। তার মনে তখন মায়ের নিরাপত্তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই ছিলো না।

 

একবার নদী পার হওয়ার সময় মাকে রক্ষা করতে গিয়ে সোং চিয়েন হুই আঘাত পান। চেং চিং ফেই তা দেখে খুব কষ্ট পান। তিনি মনে করেন, তিনি ছেলের জন্য বিশাল ঝামেলা সৃষ্টি করেছেন। আরও সামনে এগিয়ে যাবেন কিনা – তা নিয়ে তিনি দ্বিধায় পড়ে যান।

 

সোং চিয়েন হুই মায়ের মানসিক পরিবর্তন বুঝতে পেরেছেন। তাই তিনি আগের চেয়ে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি ক্যামেরা দিয়ে মায়ের সঙ্গে তিব্বত যাত্রার অনেক অভিজ্ঞতা রেকর্ড করেছেন।

 

সতেরো দিন পর মোটরসাইকেল চালিয়ে দু’হাজারেরও বেশি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তারা তাদের জন্মস্থান ছেং তু থেকে তিব্বতে পৌঁছান।

 

তিব্বত থেকে ফিরে আসার পর তাদের গল্প অনেকের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক টিভি অনুষ্ঠানও তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে চেং চিং ফেই সবার সঙ্গে ছেলের সঙ্গে তিব্বতে ভ্রমণের এবং স্বামীর সঙ্গে প্রেমের গল্প শেয়ার করেন।

 

আস্তে আস্তে চেং চিং ফেই স্বামীর মৃত্যুর ছায়া থেকে মুক্তি পান। তিনি আবার বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শুরু করেন। তিনি এখন স্বামীর পছন্দের সঙ্গীত বাজান। পাশাপাশি, তিনি ডায়েরি লিখা এবং শরীরচর্চাও শুরু করেন।

 

স্বামী চিরদিনের জন্য চেং চিং ফেইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিলেও ছেলেসহ পরিবারের সকলের যত্নে তিনি আর একাকী বোধ করেন না।

 

গভীর রাতে তিনি মাঝেমাঝে আকাশের দিকে তাকাতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, তারাগুলো দেখা তার কাছে তার প্রিয় স্বামীকে দেখার মতো।

 

লিলি/এনাম