‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ২৩
2023-06-21 19:36:58

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।     

১. তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পারের তরুণদের মধ্যে সংলাপ ও বিনিময় প্রচার প্ল্যাটফর্ম স্ট্রেইটস ইয়ুথ ফোরাম: বললেন অংশগ্রহণকারীরা

 



তাইওয়ান প্রণালীর দুই পারের সমন্বিত উন্নয়নের জন্য নতুন পথ অন্বেষণের প্রত্যাশা নিয়ে চীনের উপকূলীয় শহর সিয়ামেনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১৫তম স্ট্রেইটস ফোরাম।

 

এরই একটি অংশ ইয়ুথ ফোরাম। গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন এবং তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং অর্থের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এই সম্মেলনের লক্ষ্য।

 

তাইওয়ান প্রণালীর দুই পারের তরুণদের নিয়ে গত ১৫ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ ফোরাম।

 

ফুচিয়ান প্রদেশের প্রাদেশিক সরকার এবং স্টেট কাউন্সিল তাইওয়ান অ্যাফেয়ার্স কার্যালয়ের যৌথ-পৃষ্ঠপোষকতায় তাইওয়ান প্রণালীর উভয় প্রান্তের ৮৪টি সহ-আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।  দু'দিনের সম্মেলনে মোট ৫১টি ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়।  তাইওয়ান প্রণালী উভয় পারের মানুষে-মানুষে যোগাযোগ এবং সমন্বিত উন্নয়নকে আরও গভীর করা ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য।

 

গত বছরের ইয়ুথ ফোরামে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের কাছ থেকে পাওয়া চিঠির কথা স্মরণ করে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি এবং চীনা যুব বাণিজ্য উন্নয়নের চেয়ারম্যান লি ওয়েই ছুও জানান,  

 

আমিসহ তাইওয়ানের ৫০ জন তরুণ মিলে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলাম। তিনি সেই চিঠির উওর দিয়েছিলেন। আমি খুব অভিভূত হয়েছিলাম। আমরা এখন মূল ভূখণ্ডে বাস করি এবং কাজ করি। এটি দেখায় যে মূল ভূখণ্ড তাইওয়ানের তরুণদের, বিশেষ করে যারা মূল ভূখণ্ডে এসেছিল তাদের তারা খুব গুরুত্ব দেয়।‘’  

 

প্রেসিডেন্ট সির চিঠিটি গত বছরের স্ট্রেইটস ইয়ুথ ফোরামে বিতরণ করা হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে তাইওয়ানের আরও তরুণ-তরুণী মূল ভূখণ্ড সম্পর্কে জানতে পারবে বলে প্রত্যাশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

এবারের ফোরামেও একটি অভিনন্দন বার্তা পাঠান চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনচিপিং।

 

 

আয়োজকরা জানান, মূল ভূখণ্ডে বিনিয়োগ করার জন্য তাইওয়ানের স্বদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য এক নম্বরের গন্তব্য হিসেবে ফুচিয়ানের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই ক্রস-স্ট্রেইট বিনিময় এবং সহযোগিতাকে প্রশস্ত ও গভীর করা এবং উন্নয়নকে আরো গতিশীল করা এ কৌশলগত পদক্ষেপের লক্ষ্য।  


ফোরামটিতে তাইওয়ানের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিভিন্ন শিল্পের পেশাদার এবং সামাজিক সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৫ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী একত্রিত হন। এবারের ইভেন্টটি যথাক্রমে তৃণমূল স্তর, যুব স্তর, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক স্তরের উপর যোগাযোগ হাইলাইট করে চারটি বিভাগ নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।


এদিকে, সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্র বলছে, চীনের তাইওয়ান অঞ্চলের তরুণদের জন্য প্রায় দেড় হাজার চাকরি এবং ১ হাজার ইন্টার্নশিপ এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেয় এ বছরের স্ট্রেইটস ইয়ুথ ফোরাম।

 

 

 

২০০৯ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে স্ট্রেইট ফোরাম ও ইয়ুথ স্ট্রেইট ফোরাম। এখন পর্যন্ত স্ট্রেইট ফোরাম প্রায় সাড়ে তিন লাখ অংশগ্রহণকারীকে সমন্বিতভাবে আকৃষ্ট করেছে, যা স্থিতিশীলতা, বিনিময় এবং উন্নয়নের জন্য তাইওয়ান প্রণালী উভয় পাশের মানুষের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।

 

 

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম

২.  চীনাভাষার সেতু

 

বাংলাদেশের অনেক তরুণ শিক্ষার্থী চীনা ভাষা শিখছেন। চীনা সাংস্কৃতিক পরিবেশনাতেও তারা ভালো পারফরম্যান্স করছেন। সম্প্রতি চীনা দূতাবাস ও কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের আয়োজনে আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত হলো চীনাভাষার দক্ষতা-চীনা ভাষার সেতু নামের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ রাউন্ড।

 

 

বাংলাদেশ ও চীনের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেতু হয়ে উঠতে পারে চীনা ভাষা। বাংলাদেশের অনেক তরুণ তরুণী এখন চীনা ভাষা শিখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে সম্প্রতি আয়োজিত হয় ২২তম চীনা ভাষায় সেতু-চীনা ভাষায় দক্ষতা প্রতিযোগিতার প্রিলিমিনারি রাউন্ডের বর্ণাঢ্যঅনুষ্ঠান। এখানে অংশ নেন বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা।

অনুষ্ঠানটির মূল অয়োজক ছিল ঢাকার চীনা দূতাবাস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট। সহআয়োজক ছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট এবং শান্ত মারিয়াম হোংহ্য কনফুসিয়াস ক্লাসরুম।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের পরিচালক ইয়াং হুই বলেন, ‘এই আয়োজনে এত মানুষের সাড়া পেয়ে আমি অভিভূত। চীনাভাষার সেতু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে দুই দেশের বন্ধুত্বের সেতু গড়ে উঠছে।’

অনুষ্ঠানে অন্যতম বিচারক ছিলেন চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর ইউয়ে লি ওয়েন । তিনি বলেন,

 

‘’আজকের ইভেন্টটি ছিল রাষ্ট্রদূত যেমন বলেছেন খুব এক্সাইটিং। আমরা দেখেছি অনেক বাংলাদেশী তরুণ শিক্ষার্থী চীনাভাষা শিখছেন। আমরা এটা দেখে আনন্দিত। আপনি জানেন যে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। আমরা আশা করি আরও তরুণরা চীনাভাষা শিখবেন এবং দুইদেশের বিনিময় ও বাণিজ্যে আরও বেশি অংশ নিবে। ভবিষ্যতে এই তরুণ ভাষা শিক্ষার্থীরা দুই দেশের বন্ধুত্বের বীজ হিসেবে কাজ করবেন।‘’

 

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তরুণ শিক্ষার্থীদের সাফল্য কামনা করে বলেন,

‘এটি খুব চমৎকার ইভেন্ট। আমি আশাই করিনি যে এত তরুণ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী চীনাভাষা শিখছেন। তারা চীনা সংস্কৃতিকে ভালোবাসছেন। তারা দুই দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেতু গড়ে তুলছেন। আমি তাদের সাফল্য কামনা করি। আমি আশা করি আগামি বছর বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি প্রতিযোগী থাকবেন। তারা চীনে গিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। ‘

 

চায়নিজ ব্রিজ-চায়নিজ প্রোফিসিয়েন্সি কমপিটিশন একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম ও প্রতিযোগিতা। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিদেশি শিক্ষার্থীরা চীনা ভাষায় তাদের দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে। অনুষ্ঠানে চীনাভাষা শিক্ষার্থীরা এই ভাষায় বক্তব্য রাখে এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করে।

তাদের বক্তব্য ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার উপর ভিত্তি করে প্রিলিমিনারি রাউন্ডের প্রথম স্থানে  একজন, দ্বিতীয় স্থানে দুইজন এবং তৃতীয় স্থানে তিনজন বিজয়ী হন।

 

 

চীনাভাষা শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও চীনের মতো দুটি বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে সেতু গড়ে তুলছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

 

প্রতিবেদকঃ শান্তা মারিয়া

সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

৩.  চীন সরকারের বৃত্তি পেলো ৫৫ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী 

 

সম্প্রতি ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য চীন সরকারের বৃত্তি বা সিজিএস স্কলারশিপের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ সময় নতুন ভর্তির সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অভিনন্দনও জানায় চীনা দূতাবাস।

 

চীনা দূতাবাস জানায়, এ বছর প্রথম পর্যায়ে গেল ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, প্রায় ৫শ’ জন চীন সরকারের বৃত্তির জন্য আবেদন করে। তাদের মধ্য থেকে এবার এই স্কলারশিপ পেয়েছেন ৫৫ জন। বৃত্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৮জন স্নাতক শ্রেণী, ২৩ জন স্নাতকোত্তর ও ১৪জন পিএইচডি পর্যায়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন।

চীনা দূতাবাস আরো জানায়, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসার পর চীন সরকার এই প্রথম আবারও বৃত্তি ঘোষণা করলো। এর ফলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অনলাইনের পরিবর্তে চীনে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারবে। বৃত্তিপাওয়া শিক্ষার্থীরা পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়, সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়, তংচি  বিশ্ববিদ্যালয়সহ চীনের অন্য সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পাবে। চীন সরকারের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম এই সরকারি বৃত্তি। এটিকে চীন সরকারের সম্মানজনক বৃত্তি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

 

প্রতিবেদকঃ সাজিদ রাজু

সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী