চীনে ডুরিয়ান রপ্তানি জীবনমান পাল্টেছে ফিলিপাইনদের | শেকড়ের গল্প | পর্ব ২৩
2023-06-21 19:24:00

                                           



এবারের পর্বে রয়েছে

১. চীনে ডুরিয়ান রপ্তানি করে জীবনমান পাল্টেছে ফিলিপাইনদের

২. বাঁশ চাষে জীবনমান পাল্টেছে কৃষকদের

. চীনের কুনমিংয়ে এশিয়ার বৃহত্তম তাজা ফুলের বাজার

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেনশেকড়ের গল্পঅনুষ্ঠানে

 

. চীনে ডুরিয়ান রপ্তানি করে জীবনমান পাল্টেছে ফিলিপাইনদের

                                               


ডুরিয়ান ফল। দেখতে অনেকটা ছোটখাটো কাঠলের মতো। তবে এই ফলের উপরের কাটাগুলো কাঁঠালের কাঁটার চেয়ে বেশি থাকে। হলুদ রঙের এই ডুরিয়ান ফল মন মাতানো ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত। সামান্য গন্ধ থাকলেও ফলটি  সুস্বাদু।

এশিয়ায় হাতে গোনা কয়েকটি দেশে ডুরিয়ান ফল চাষ করা হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইন অন্যতম। দেশটিতে এ বছর ডুরিয়ানের ভালো ফলন হয়েছে। আর এই ফল সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় চীনে। ফিলিপাইনের কৃষকরা প্রত্যাশা করছেন এ বছর ভালো মুনাফা হবে তাদের।

ফিলিপাইনের অন্যতম বড় সিটি দাভাও মূলত পরিচিত ডুরিয়ান ফলের জন্য। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ ফল উপাদনের মৌসুম। পুরো দেশের ৮০ শতাংশ ডুরিয়ান উপাদন করা হয় এখানে।

ফিলিপাইনের ডুরিয়ান ফলচাষী বেঞ্জামিন মুসা। এরইমধ্যে এক্সপার্ট সাপ্লায়ার হিসেবে সার্টিফিকেট পেয়েছেন তিনি। এ স্বীকৃতি থাকার কারণে তিনি তার বাগান থেকে সরাসরি চীনে ফল রপ্তানি করতে পারবেন। 



এ বছরের শুরুতে ফিলিপাইন এবং চীনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। যেখানে রপ্তানি উপযোগী সতেজ ডুরিয়ান ফল উপাদনের জন্য শর্ত দেয়া হয়। সেই শর্ত মেনেই আলাদা পদ্ধতিতে এই ফল উপাদন করা হচ্ছে ফিলিপাইনে। বিষয়টিকে বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান মুসা। শুরু করেন চাষাবাদ এবং দিনশেষে ভালো লাভের মুখ দেখার প্রত্যাশা করছেন তিনি।



বেঞ্জামিন মুসা, ফিলিপাইনের কৃষক

"প্রান্তিক চাষী হিসেবে চীনের সঙ্গে এই চুক্তিটি আমাদের কাছে একটা উপহার বলতে পারেন। সত্যি বলতে এই চুক্তি হওয়ার পর থেকে আমরা ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি।  আমরা এখন স্বপ্ন দেখি ধনী হওয়ার।"

অন্যান্য দেশের ডুরিয়ান ফলের চেয়ে এখানকার ফলগুলো স্বাদে অনন্য এবং ফলনও ভালো। এমনকি এই ফলগুলো কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী।

"চীনের মানুষেরা এই ফল পছন্দ করেন। এ কারণে আমরা '' ক্যাটাগরি ডুরিয়ান ফল উপাদন করছি। ভালো মানের ফল উপাদন করতে গেলে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হয় এবং খুব খেয়াল করে যত্ন নিতে হয়।"

এবছর এ পর্যন্ত ৩৫০ টন ডুরিয়ান চীনে রপ্তানি করা হয়েছে। চুক্তি হওয়ার কারণে ফিলিপাইন থেকে চীনে রপ্তানির আকারও বাড়বে।

ইমানুয়েল বেলভিজ, দাভাও ডুরিয়ান সমিতি

"ডুরিয়ান ফল রপ্তানি করতে পেরে আমাদের কৃষকরা সত্যিই অনেক উচ্ছ্বসিত। বড় একটি মার্কেট তৈরি হওয়ায় নতুন নতুন সুযোগ আসছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে এবং তারা তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারছে।"

দাভাও ডুরিয়ান সমিতির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল বেলভিজ। তিনি বলেন, চীনে ফল রপ্তানি নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে তা কৃষকদের জীবনমান পাল্টে দেবে।

বেলভিজ প্রত্যাশা করছেন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো মিলে ডুরিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ চেইন গঠন করতে পারে, যাতে চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ এই ফলের স্বাদ নিতে পারে।

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

. বাঁশ চাষে জীবনমান পাল্টেছে কৃষকদের

বাঁশ চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলিয়েছেন চীন দেশের কৃষকরা। দেশটির চেচিয়াং প্রদেশের আনচি কাউন্টির বাসিন্দারা বিশেষ এক পদ্ধতিতে বাঁশ উপাদন করে থাকেন। মূলত বাশের ভেতরে নরম এক ধরনের অংশ রয়েছে, যাকে বলা হয় বাঁশের কোড়ল। এটা এক ধরনের সবজি, যার চাহিদা রয়েছে পুরো চীনজুড়েই। বিশেষ এই সবজি চাষ করে নিজেদের আয় রোজগার আগের চেয়ে বেড়েছে কয়েকগুণ। 



চীনে হুয়াংনিকং নামের বিশেষ জাতের বাশ পাওয়া যায়, যার ভেতরের অংশটা অসাধারণ স্বাদের হয়ে থাকে।

এগুলো সাধারণত পাহাড়ী মাটিতে হয়ে থাকে। তাই পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে ভালো মানের বাশের কোড়ল সংগ্রহ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়।



একজন স্থানীয় কৃষক ছাই চিহুই, যিনি পাহাড়ে উঠে ভালো মানের বাঁশের কোড়ল খুঁজে পেতে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের কাজগুলো কষ্টের। গ্রামবাসীরা একরকম সংগ্রাম করে পাহাড়ে উঠে এরপর কোড়ল সংগ্রহ করেন।

তিনি বলেন, “হুয়াংনিকং নামের বিশেষ জাতের এই বাঁশের কোড়লগুলো ভালো স্বাদের হয়ে থাকে। তবে মাত্র ২ থেকে ৩ দিন এর গুণমান ভালো থাকে। এরপর ধীরে ধীরে পঁচতে শুরু করে। তাই আমরা যদি সময়ের মধ্যে এগুলো বিক্রি করতে না পারি, তাহলে সবার বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।“

এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে আনচি কাউন্টির স্থানীয় সরকার দারুণ এক উদোগ হাতে নিয়েছে। বাশের কোড়লগুলো যেন সতেজ থাকে এজন্য তারা এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল দাড় করিয়েছে যেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সবজিগুলো সংরক্ষণ করা যায়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায় বাঁশের কোড়ল।  

মোসুমী ফল কিংবা সবজিগুলো যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিক্রি হয় এজন্য অনলাইনেও প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব এ্যাপও আছে। সব মিলিয়ে এ ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে আর্থিকভাবে ভীষণ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।  

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

 ৩. চীনের কুনমিংয়ে এশিয়ার বৃহত্তম তাজা ফুলের বাজার

ফুলের প্রতি এক ধরনের বিশেষ আকর্ষণ করে চীন দেশের মানুষের। যেকোন উসব আয়োজনে অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে ওঠে ফুল। দেশটিতে এখন  ভরা ফুলের মৌসুম। বাহারি জাতের ফুলে এক অন্যরকম ক্যানভাস তৈরি হয় চারিদিকে।  ফুল ফোটার এই সময়ে পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইয়ানচেং শহরে ফুটেছে প্রায় ৩ কোটি টিউলিপ।  সব মিলিয়ে ফুল চাষীদের মুখে এখন স্বস্তির হাসি। 


বিশাল জায়গাজুড়ে ফুলের বাজার। বাহারি জাতের ফুলে দারুণ এক আবহ তৈরি হয়েছে এখানে। শুধু ফুলই নয়, ফুল দিয়ে তৈরি নানা পণ্য পাওয়া যায় এই বাজারে। ক্রেতারা নিজেরদের পছন্দ মতো ফুল কিনছেন সেখান থেকে।

ফুলের এই বাজারটি চীনের ইউননান প্রদেশের কুনমিং শহরে অবস্থিত, যা পরিচিত তোনান ফুলের বাজার নামে। এটি এশিয়ার বৃহত্তম তাজা ফুলের বাজার।

চীনজুড়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফুল ও ফুলের তৈরি নানা পণ্যে। তাইতো বানিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে। 



ন্যাশনাল ফরেস্ট্রি অ্যান্ড গ্র্যাস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, চীনে চারা ফুলের বার্ষিক উপাদন মূল্য ৫০০ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। ফলে এই ফুল চাষে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের  কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইয়ানচেং শহরের একটি পার্কে চলতি মৌসুমে রোপণ করা হয়েছে ৩ কোটিরও বেশি টিউলিপ। এই ফুল এখন ফোটার মৌসুম। ফলে ফুল চাষীদের পাশাপাশি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর- দূরান্ত থেকে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। পার্ক কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ দর্শনার্থী আসছেন এই পার্কে।

গেল বছরের নভেম্বরে, ন্যাশনাল ফরেস্ট্রি এন্ড গ্র্যাস এডমিনিস্ট্রেশন  ও মিনিস্ট্রি অফ রুরাল এন্ড এফেয়ার্স যৌথভাবে ফুল শিল্পের উন্নয়নে একটি নির্দেশিকা জারি করে, যা ফুল উপাদনের বিকাশে ভালো সহযোগিতা করে।

নির্দেশিকায় বলা হয়, ২০২৫ সালের মধ্যে ফুলের চারা শিল্পের জন্য বিশেষ এক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে চীন, যাতে করে ফুলের বার্ষিক বিক্রি ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছায় ।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা : এইচআরএস অভি

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি

অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প

 

পরিকল্পনা প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী