ড্রাগন নৌকা উৎসব উপলক্ষ্যে সি চিন পিংয়ের বক্তব্য ফিরে দেখা
2023-06-21 19:03:48

    

জুন ২১ : আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) চীনের ঐতিহ্যবাহী উৎসব- ড্রাগন নৌকা উৎসব। এ উৎসবে দেশের মহান দেশপ্রেমিক কবি ছু ইউয়ানকে স্মরণ করা হয়। যা চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। চীনাদের সংস্কৃতিতে, ঘর বা পরিবার হচ্ছে দেশের ভিত্তি। দেশ হচ্ছে একটি ‘বড় ঘরের’ মত। আসন্ন ড্রাগন নৌকা উৎসব উপলক্ষ্যে আমরা পরিবার ও দেশ বিষয়ে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিংয়ের কিছু আন্তরিক বক্তব্য পর্যালোচনা করব। যাতে পরিবার ও দেশের প্রতি চীনাদের ভালবাসা-সংক্রান্ত ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বোঝা যায়।


‘মমতাময়ী মা তার হাতে একটি সুই এবং সুতো নিয়েছেন, যে সন্তানটি অনেক দূরে যাবে, তার জন্য নতুন পোশাক তৈরি করায় তিনি ব্যস্ত।


যাওয়ার আগে, মজবুত করে একটি সেলাই করেন তিনি। তাঁর ভয় হয়েছিল যে, তাঁর ছেলে দেরিতে ফিরবে এবং তার পোশাক ছিঁড়ে  যেতে পারে।


কে বলেছে যে, মায়ের প্রতি ভালোবাসা একটি ছোট ঘাসের মতো- বসন্তের সূর্যালোকের মতো স্নেহময়ী মায়ের মমতা শোধ করতে পারে!?’


থাং রাজবংশের কবি মেং চিওর এ কবিতা ‘পরিব্রাজকের কথা’ পরিবারের প্রতি চীনাদের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ২০১৫ সালের বসন্ত উৎসবের একটি অনুষ্ঠানে, সি চিন পিং এই কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলেন।


প্রাচীনকাল থেকে চীনা মানুষ পরিবারের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ঘর হলো সবচেয়ে ‘ছোট দেশ’, দেশ গঠিত হয় হাজার হাজার ঘর দিয়ে। এ সম্পর্কে সি চিন পিং বলেন:‘পরিবার হচ্ছে সমাজের মৌলিক একক, যা জীবনের প্রথম স্কুল। যুগ ও জীবন পরিবর্তন হলেও, আমাদের পরিবারের উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে।’


তিনি জানান, শুধু হাজার হাজার পরিবারের উন্নতি ও সমন্বয় বাস্তবায়ন হলে, দেশ ও জাতির উন্নতি বা সমাজের সমন্বয় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। 


অনেক বছর ধরে, দরিদ্রতা মোকাবিলা করা হচ্ছে চীনাদের একটি স্বপ্ন। ২০২১ সালে এ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। চীনের বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী দেশের গ্রামাঞ্চলের ৯৮.৯৯ মিলিয়ন দরিদ্র মানুষ দারিদ্রমুক্ত হয়েছে। দারিদ্র্য নির্মূলের যুদ্ধে সার্বিক জয় ঘোষণা করার এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, সি চিন পিং কিছু কবিতার মাধ্যমে দরিদ্রতা মোকাবিলায় চীনাদের গভীর প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন।


তিনি ছু ইউয়ানের কবিতার এই কথাটি উল্লেখ করেছেন, ‘আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। জনগণের জীবন কতটা কঠিন তা নিয়ে আমি বিলাপ করছি।’


এই কবিতাসহ একাধিক কবিতায় দারিদ্র্যবিমোচনের বিষয়ে চীনাদের গভীর প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়।


‘চিং চং পাও কুও’, মানে ‘সর্বোচ্চ আনুগত্যের সঙ্গে দেশকে প্রতিদান দেওয়া’ । এই গল্প চীনের দেশপ্রেমিক সেনাপতি ইউ ফেই বিষয়ক। এই গল্প সব চীনারা জানেন। সি চিন পিং নিজে শিক্ষার্থীদের ‘চিং চং পাও কুও’র অর্থ বুঝিয়েছেন। ২০১৪ সাল আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের আগে, তিনি বেইজিংয়ের একটি প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দেখেছিলেন। তখন তিনি ছেলেমেয়েদের বলেন, “ ‘চিং চং পাও কুও,- এই চারটি শব্দ ছোটবেলা থেকে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার ৪/৫ বছর বয়সে মা আমাকে ছোটদের বই কিনে দেন। সেখান থেকে ‘চিং চং পাও কুও’র গল্প আমাকে বলেছেন। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘পিঠে সেলাই করলে ব্যথা লাগে না? ’ মা বললেন, ব্যথা হলেও, তা চিরকাল ইউ ফেইয়ের মনে থাকবে। কথাটি এখনও আমার মনে আছে। ‘চিং চং পাও কুও’ হচ্ছে আমার সারা জীবনের লক্ষ্য।”


২০২২ সালের মে মাসে, চীনের কমিউনিস্ট যুবলিগ প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকীর উদযাপনী অনুষ্ঠানে, আগের কবির কবিতা উল্লেখ করে তিনি তরুণ-তরুণীদের প্রতি প্রত্যাশা জানান।


তিনি বলেন, “পাঁচ হাজারেরও বেশি বছরের সভ্যতার ইতিহাসে, সবসময় চীনা জাতির মধ্যে ‘তরুণদের থেকে বীরের আগমনের’ ঐতিহ্য রয়েছে। চীনারা ‘ছাংচিয়াং নদীর পিছনের ঢেউগুলি সামনের ঢেউকে এগিয়ে দেয়’ চেতনা ধারণ করে। ‘যুবকরা শক্তিশালী হলে দেশ শক্তিশালী হবে, আর যুবকরা এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যাবে’- এই বিশ্বাস লালন করে এবং সবসময় ‘তরুণদের উপর আশা রয়েছে’ এমন প্রত্যাশা করে চীন।”


সি চিন পিং বলেন, দেশপ্রেম হচ্ছে সবচেয়ে গভীর ও স্থায়ী ভালবাসা। যা একজন মানুষের নৈতিকতার উৎস ও সাফল্যের ভিত্তি। ২০২৩ সালে নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তায় তিনি তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তরুণরা এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যাবে, চীনের উন্নয়নে ব্যাপক তরুণ-তরুণীর ওপর নির্ভর করে উচিত। তারুণ্য জীবনীশক্তিতে পরিপূর্ণ এবং যৌবন আশা জাগায়।’ পাশাপাশি, নববর্ষের শুভেচ্ছাবাণীতে তিনি তরুণদের কাছে অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন।

(আকাশ/তৌহিদ/ফেইফেই)