এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। ঘুরে আসুন ব্ল্যাক ড্রাগন পুল বা হেই লং থান পার্ক থেকে
২। চীনারা অনেক পরোপকারী: শারমীন সুলতানা
৩। ছোংছিংয়ের প্রাচীন শহর সিছিকৌ
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ২৩তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। ঘুরে আসুন ব্ল্যাক ড্রাগন পুল বা হেই লং থান পার্ক থেকে
কুনমিং শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ব্ল্যাক ড্রাগন বা হেই লং থান পার্ক। এখানে রয়েছে লোংছুয়ান পাহাড়। আর পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে মন্দির লোং ছুয়ানকুয়ান যাকে বলা হয় ড্রাগন ফাউন্টেন টেম্পল বা ড্রাগন ঝরনা মন্দির।
পার্কে মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পর দেখা যায়, পাহাড়ের নিচে রয়েছে দুটি পুকুর। দুটি পুকুরের মধ্যে সংযোগ রয়েছে নালার মাধ্যমে, উপরে ব্রিজ। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এক পুকুরের পানি কখনও অন্য পুকুরে যায় না। এক পুকুরের মাছও অন্য পুকুরে যায় না। দু্টি পুকুরের পানির রংও আলাদা। শত শত বছর ধরেও এই পুকুরের পানি কখনও শুকায় না। এই পুকুরের নিচেই জলের ভিতর এখনও ঘুমিয়ে আছে কালো ড্রাগন।
স্থানীয় জনগণ এমনই বিশ্বাস করেন। এই পুকুরের কাছেই রয়েছে ব্ল্যাক ড্রাগন প্রাসাদ। এই প্রাসাদটি তৈরি হয়েছিল মিং রাজবংশের(১৩৬৮-১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) সম্রাট হোংউর শাসনামলে ১৩৯৪ সালে। সম্রাট জিংথাই এর আমলে ১৪৫৪ সালে প্রাসাদটি পুনর্নিমিত হয়।
প্রাসাদের ভিতরে আছে তিনটা বিশাল কক্ষ বা হলরুম এবং দুটি দরবার প্রাঙ্গণ। এই প্রাসাদকে বলা হয় নিচের মন্দির। কারণ পাহাড় বেয়ে উঠলে ঠিক এর উপরেই রয়েছে আরেকটি প্রাসাদ বা মন্দির যাকে বলা হয় ড্রাগন ফাউন্টেন টেম্পল। প্রাচীন সব গাছের আড়ালে এই মন্দিরটি লুকানো রয়েছে। নিচের প্রাসাদটির ভিতর দিয়েই উপরের প্রাসাদটিতে পৌছুতে হয়। উপরের মন্দিরটি ৫৭০ বছরের পুরনো।
ব্ল্যাক ড্রাগনের মন্দিরের সামনে রয়েছে প্রাচীন কিছু গাছ। এগুলো দুই তিন হাজার বছরের প্রাচীন গাছেরই বংশধর। থাং রাজবংশের আমলের পাম, সং রাজবংশের আমলের সাইপ্রাস এবং মিং রাজবংশের আমলের ক্যামেলিয়া গাছ এখানে বিখ্যাত।
একটু আগালেই দেখা যায় পাথরে খোদাই করা একজন তাও সন্ন্যাসীর অমর বাণী। এই তাও সন্ন্যাসীর নাম লিউ ইয়ুয়ানরান। তিনি মিং সাম্রাজ্যের আমলে একজন বিখ্যাত তাও সন্ন্যাসী ছিলেন। ওয়ান, উ চি শাং কথাটি তিনি পাথরের উপর লিখেছিলেন। এর অর্থ হলো পৃথিবীর সকল বস্তু প্রচারিত, উন্নত, প্রস্ফুটিত, চিত্রিত হয়।
এখানে আরও রয়েছে স্থানীয় দেশপ্রেমিক শহীদদের স্মৃতিসৌধ। আর আছে একটি প্রাচীন পাম গার্ডেন। এই বাগানে ছয় হাজারের বেশি প্রাচীন পাম গাছ রয়েছে।
এই পাহাড়ের অন্যদিকে রয়েছে একটি চিল্ডরেনস পার্ক। সেখানে পাহাড়ের ধাপে ধাপে শিশুদের জন্য নানা রকম রূপকথার মূর্তি যেমন ব্যাঙের ছাতা, মৌমাছি, পরী ইত্যাদি বানিয়ে রাখা হয়েছে। পাহাড়ের নিচের দিকে রয়েছে আরেকটি বাগান। সেই বিশাল বাগানের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে ক্ষীণধারা পাহাড়ি নদী।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
২। চীনারা অনেক পরোপকারী: শারমীন সুলতানা
যেকোন জায়গায় ঘুরেতে গিয়ে , রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গিয়ে দেখেছি চীনারা অনেক পরোপকারী। চীন ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে এ কথা বলেন চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শারমীন সুলতানা।
শারমীন সুলতানা
শারমীন সুলতানা চীনের ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংযের সাউথওয়েস্ট ফরেস্ট ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করছেন। চারবছর ধরে কুনমিংয়েই বাস করছেন তিনি।
তিনি এই কয়েক বছরে ঘুরেছেন চীনের বিভিন্ন জায়গায়। কুনমিং শহরের পাশাপাশি নানচিং, ন্যানিং শহরে ঘুরেছেন। কুনমিং শহরের মধ্যে ঘুরেছেন থিয়ানচি লেন, ওয়াটারফল , বিভিন্ন পার্কে। এছাড়া স্টোন ফরেস্টেও ঘুরেছেন তিনি।
বন্ধুদের সাথে শারমীন সুলতানা
চীন ঘুরে বেড়ানোয় অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, “চীনের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। এসব জায়গায় ঘুরতে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে। এছাড়া তাদের ভাষা, খাবার ,আচার-আচরণ আমাকে আপন করে নিয়েছে। একটা ফোন হাতে থাকলেই নিশ্চিতে ঘুরে বেড়ানো যায় চীনে।
একজন নারী হিসেবে নিরাপদে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন শারমীন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ চীনে ঘুরার সময় আমি যে মেয়ে এই ফিলটা আমার কখনো হয়নি। এখানে একজন ছেলেকে যেভাবে দেখা হয় একজন মেয়েকেও সেভাবে দেখা। এটা ভালো লেগেছে। তাই আমি স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতেও পেরেছি” ।
যারা চীনে ঘুরতে আসতে চান তাদের উদ্দেশ্যে শারমীন বলেন , চীন ঘুরার জন্য বেস্ট জায়গা। কেউ শুধু আমার শহর কুনমিংয়ে আসলেও অনেক কিছু দেখতে পাবেন”।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম
৩। ছোংছিংয়ের প্রাচীন শহর সিছিকৌ
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের দারুণ এক জায়গা ছোংছিং। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও চমৎকার পরিবেশের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত চীনের এই নগরী। আর মিউনিসিপালটির দক্ষিণ অংশে অবস্থিত সিছিকৌ প্রাচীন শহর। এই প্রাচীন শহরের সাথে জড়িয়ে আছে ছোংছিং মিউনিসিপালটির ইতিহাস।
হাজার বছরের ইতিহাস আর ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ সিছিকৌ শহর, যার বিকাশ হয়েছিল ছিং রাজবংশের আমলে। এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চিয়ালিং নদী।
চীনামাটির বাসন তৈরী ও বাণিজ্যের জন্য একসময় জমজমাট ছিলো এই শহর। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসতেন এখানে। আর এভাবেই লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে এই প্রাচীন শহরের নাম।
গেল বছর জাতীয় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐহিত্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় সিছিকৌ শহর। এই ঘোষণা আসার পর এখানকার মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির স্বাদ নিতে আসেন অসংখ্য পর্যটক।
এই শহরের রাস্তা এবং সরু গলিপথে হাঁটলে পর্যটকদের মনে হয় তারা যেন প্রাচীন যুগে ফিরে যান। আর প্রাচীন স্থাপত্যগুলো একরকম বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেন তারা।
প্রতিবেদন- হাবিবুর রহমান অভি
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী