অ্যান্টোনি ব্লিনকেনের চীন সফর নিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
2023-06-20 15:36:55

    

জুন ২০ : গতকাল (সোমবার) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  উত্তর আমেরিকা এবং ওশেনিয়া বিষয়ক বিভাগের প্রধান ইয়াং থাও অ্যান্টনি ব্লিনকেনের চীন সফরের বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেছেন।


ইয়াং থাও জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন ১৮ ও ১৯ জুন চীন সফর করেছেন। 


১৯ জুন বিকালে, ব্লিনকেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। প্রেসিডেন্ট সি দু’দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীলভাবে উন্নয়নের খাতে চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং কৌশলগত দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।


এ ছাড়া  চীন সফরকালে অ্যান্টনি ব্লিনকেন সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কিমিটির বিদেশ বিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক ওয়াং ই ও দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন কাংয়ের সঙ্গেও  সাক্ষাত করেছেন। 


ইয়াং থাও জানান, এবারের সাক্ষাত ও বৈঠক হচ্ছে আন্তরিক, গভীর ও গঠনমূলক। চীন পক্ষ সাক্ষাত ও বৈঠকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জোর দিয়ে তুলে ধরেছে।


চীন-মার্কিন সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। তার কারণ, চীন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল ধারণা রয়েছে


১. দু’পক্ষের সম্পর্কে সমস্যার কারণ চীন ব্যাখ্যা করেছে। চীন জানিয়েছে, দু’দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান সম্পর্ক সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থা দু’দেশের গণকল্যাণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যা আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন প্রত্যাশার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। চীন-মার্কিন সম্পর্কের এ অবস্থার কারণ হলো চীন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভুল ধারণা করা এবং চীন বিষয়ে ভুল নীতি গ্রহণ করা।


চীন-মার্কিন সম্পর্ক অনেক সমস্যার মুখে পড়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আত্ম-পর্যালোচনা করা।


২. চীন-মার্কিন সম্পর্ক অনেক সমস্যার মুখে পড়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আত্ম-পর্যালোচনা করা। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীন বিষয়ক বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক ধারণা করা। চীনের সঙ্গে একযোগে দু’দেশের রাজনৈতিক ভিত্তি সুষ্ঠুভাবে রক্ষা করা এবং বিতর্কগুলো সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বালি দ্বীপের বৈঠকে পৌঁছানো মতৈক্য সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। একযোগে দু’দেশের সম্পর্ক সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কাজ করা উচিত।  


দু’দেশের নেতৃবৃন্দের ‘বালি দ্বীপ বৈঠকের’ গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য বাস্তবায়ন করা উচিত। 


৩. চীন দু’দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল করার দিক ও পথ উত্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে চীনের নীতি বরাবরই দীর্ঘমেয়াদী ও স্থিতিশীল। দু’দেশের উচিত দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে দু’দেশের সম্পর্ককে সুষ্ঠু স্থিতিশীল পথে ফিরিয়ে আনা। এখন দু’দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে জরুরি কাজ হচ্ছে দু’দেশের নেতৃবৃন্দের বালি দ্বীপ বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য বাস্তবায়ন করা। এর মৌলিক উপায় হলো প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উত্থাপিত পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সহযোগিতা ও উভয়ের জয়ের নীতি। যা দু’দেশের একযোগে অবিচল থাকার চেতনা হওয়া উচিত। 


‘দেশ শক্তিশালী হলে, তা অবশ্যই আধিপত্যবাদী হবে’ এমন বাঁধাধরা ধারণা চীনের উপর চাপানো উচিত নয়


৪. চীন পক্ষ ‘চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন’ ও ‘সার্বিক প্রক্রিয়ায় জনগণের গণতন্ত্র’ ধারণাটি ব্যাখ্যা করেছে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘দেশ শক্তিশালী হলে, তা অবশ্যই আধিপত্যবাদী হবে’- এমন বাঁধাধরা ধারণা চীনের উপর চাপিয়ে না-দেওয়ার জোর দাবি জানায় বেইজিং।


তাইওয়ান বিষয়টি হচ্ছে চীন-মার্কিন সম্পর্কের সবচেয়ে মৌলিক সমস্যা। 


৫. চীন আবারও মৌলিক স্বার্থ ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের সর্বোচ্চ সীমা ঘোষণা করেছে। তাইওয়ান, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসহ নানা খাতে নিজের অবস্থান ঘোষণা করেছে চীন। এতে জোর দিয়ে বলা হয় যে, তাইওয়ান বিষয়টি হলো চীনের মৌলিক স্বার্থ। যা চীন-মার্কিন সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সমস্যা, এটি সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ‘এক চীন নীতি’ ও ‘চীন-মার্কিন তিনটি যৌথ ইশতাহার’ মনে চলা, চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার প্রতি সম্মান করা এবং স্পষ্টভাবে ‘তাইওয়ান বিচ্ছিন্নতার’ বিরোধিতা করা। 


দু’পক্ষ কিছু ইতিবাচক মতৈক্য ও সাফল্য অর্জন করেছে


৬. দু’পক্ষ কিছু ইতিবাচক মতৈক্য ও সাফল্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দু’দেশের নেতৃবৃন্দের বালি দ্বীপের বৈঠকে পৌঁছানো মতৈক্য বাস্তবায়নের বিষয়ে দু’পক্ষ একমত হয়েছে। 


দু’ দেশের নেতৃবৃন্দের মতৈক্য অনুসারে, উচ্চ পর্যায়ের বিনিময় বাজায় রাখা এবং দু’দেশের ব্যক্তিগত পর্যায়ে ও শিক্ষা খাতের বিনিময় বাড়ানো-সহ নানা খাতে দু’পক্ষ একমত হয়েছে। 

(আকাশ/তৌহিদ/ফেইফেই)