চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব ২৩তম পর্ব
2023-06-19 19:37:07

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

২৩তম পর্বে যা থাকছে:

* একসঙ্গে ৪১টি স্যাটেলাইট পাঠিয়ে চীনের রেকর্ড

* আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তুলা চাষে সক্ষমতা বেড়েছে সিনচিয়াংয়ের

* চলচ্চিত্র শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া 

 

 

একসঙ্গে ৪১টি স্যাটেলাইট পাঠিয়ে চীনের রেকর্ড

একটি কিংবা দুটি নয়, মহাকাশে এক মিশনে ৪১টি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাল চীন। গত বৃহস্পতিবার একটি রকেট ব্যবহার করে এ সব উপগ্রহ কক্ষপথে পাঠানো হয়। যে রকেটটি এ মিশনে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির নাম ‘লং মার্চ ২ডি’। এর আগে এতগুলো কৃত্রিম উপগ্রহ এক মিশনে পাঠানো হয়নি। তাই এটা চীনের একটি নতুন রেকর্ড।

চীনের শানসি প্রদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থাইয়ুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টার থেকে এ রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে পাঠানো হয় রকেটটি। 

‘লং মার্চ’ সিরিজের রকেট এই প্রথম মহাকাশে গেল, এমনটা নয়; এর আগে ৪৭৫টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এই সিরিজের রকেট দিয়ে।

সর্বশেষ মিশনে যে ৪১টি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হয়েছে, সেগুলো মূলত বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হবে। নতুন করে পাঠানো এ সব উপগ্রহের মধ্যে ৩৬টি চিলিন-১ সিরিজের। এই সিরিজের উপগ্রহগুলোগুলোকে বলা হয়, রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট। কোনো সুনির্দিষ্ট এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য এ উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়। আর এই সিরিজের কৃত্রিম উপগ্রহগুলোও চীনের তৈরি।

বৃহস্পতিবার উৎক্ষেপণের পর  চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কর্পোরেশনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শাখা চায়না গ্রেট ওয়াল ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ফুচিহেং বলেন, একক মিশনে এতগুলো উপগ্রহ পাঠানো বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল তাদের জন্য ।

তিনি বলেন, “একটি রকেটে স্যাটেলাইট লোড করা এবং জ্বালানো একার পক্ষে সম্ভব না। এর জন্য অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার প্রয়োজন।” 

লং মার্চ  ২ডি রকেটের প্রধান ডিজাইনার লি চিয়ানছিয়াং বলেন, ‘সর্বশেষ মিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল স্যাটেলাইটগুলো রকেটের পেলোড ফেয়ারিংয়ের ভিতরে নিরাপদে সাজানো হয়েছে সেটা প্রকৌশলীদের নিশ্চিত করা।’ 

চিলিন-১ সিরিজের প্রথম উপগ্রহ ২০১৫ সালে পাঠিয়েছিল চীন। সেই সময় এর ওজন ছিল ৪২০ কেজি। প্রযুক্তির উন্নয়নে এ সিরিজের কৃত্রিম উপগ্রহ আরও আধুনিক হয়েছে। আর এই সিরিজের কৃত্রিম উপগ্রহের ওজন মাত্র ২২ কেজি বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

|| প্রতিবেদন: আফরিন মিম

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

 

 

আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তুলা চাষে সক্ষমতা বেড়েছে সিনচিয়াংয়ের

স্যাটেলাইট থেকে বিগ ডাটা অব্দী অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ব্যবহারে তুলা চাষে সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের। চীনের তুলা উৎপাদনের সবচেয়ে বড় অঞ্চল বলা হয়ে থাকে এই অঞ্চলটিকে।

সিনচিয়াংয়ের লেথুই শহরে তুলা চাষে যে ট্রাক্টর ব্যবহার হচ্ছে সেগুলোর সাথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে পেইতৌ নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের। 

কৃষি প্রযুক্তিবিদ শেন পু বলেন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলা গাছের পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যা হয়ে উঠেছে আরো সহজ। 

তিনি বলেন, “আমরা স্যাটেলাইটের সাহায্যে তুলার বৃদ্ধি ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করতে পারি। সেই সাথে সেচকাজ ও সার প্রদানের জন্য একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকি। পাশাপাশি গাছের ওপর আরো নিবিড়ভাবে নজর রাখতে রয়েছে বুদ্ধিমান বৈদ্যুতিক ভালভ।”

যেহেতু পানি ও সার তুলাগাছের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই এ বছর এই কাউন্টিতে নতুন একটি নতুন সেচ এবং সার দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় তুলাগাছের শেকড়ে সুনির্দিষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে পানি ও সার।

তুলা চাষী চৌ ইয়ংফেং বলেন সেচকাজ ও সার প্রদানে স্মার্টফোনের সাহায্য নেন তিনি। 

তিনি বলেন, “কাউন্টির কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, কী পরিমাণ পানি ও সার জমিতে দিতে হবে তা আমরা স্মার্টফোনের সাহায্যেই নিয়ন্ত্রন করি।” 

সংশ্লিষ্ট সূত্র মোতাবেক, সিনচিয়াংয়ের তুলা রোপণ ও ফসল কাটার প্রায় ৯৪ শতাংশ কার্যক্রম মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

শুধু সিনচিয়াংয়েই ৫.৩৯ মিলিয়ন টন তুলা চাষ হয়েছে ২০২২ সালে, যা চীনের মোট তুলার উৎপাদনের ৯০ ভাগেরও বেশি। সিনচিয়াংয়ের কৃষি কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরেও সিনচিয়াংয়ে ৫ মিলিয়ন টনের উপর তুলা উৎপাদন হবে। 

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: হাবিবুর রহমান অভি

 

চলচ্চিত্র শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া 

 

বিশ্বজুড়েই চলচিত্র শিল্প এখন ঝুঁকছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি ও এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটির দিকে। সেদিন হয়তো দূরে নেই যখন শতভাগ চলচিত্রই মানুষ উপভোগ করবে একটি ভিআর সেট চোখে লাগিয়ে। চলচিত্র শিল্পে ইতোমধ্যে লেগেছে বদলের হাওয়া। সেই বদলেরই এক ঝলক দেখা গেলো সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। 

সাংহাইয়ের ফুতুও জেলার পুশ আর্ট সেন্টারে ‘জার্নি টু দ্য ওয়েষ্ট নামে একটি টুয়িস্ট তৈরি করা হয়। সেখানে ১৭০ বছরের পুরনো গল্পের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সংস্করণটিকে আরও ভবিষ্যতমুখী হিসাবে ডিজাইন করা হয়।

মোশন ক্যাপচার সিস্টেম অভিনেতার গতিবিধি ও অঙ্গভঙ্গি নিরীক্ষণ করে এবং কম্পিউটারে ডেটা পাঠায়। এ সিস্টেমে মাত্র কয়েকটি কী-স্ট্রোক এবং মাউস-ক্লিকের মাধ্যমে কোনও অভিনেতার চেহারা ও কণ্ঠ পরিবর্তন করা যায়।

স্যান্ডম্যান স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা লুও ইয়ানসিন বলেন, প্রযুক্তি কী করতে সক্ষম তা বুঝতে হলে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, সাম্প্রতিক প্রযুক্তি চলচ্চিত্র শিল্প ও বিনোদন শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে৷ যদিও আমি বিশ্বাস করি, এআর, ভিআর বা মিক্সড রিয়েলিটি চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাবে, তবে পাশাপাশি আমি মনে করি এর বিভিন্ন ফরম্যাট রয়েছে এবং সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো - প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, যাতে করে আমরা বুঝতে পারি এসব প্রযুক্তি কী করতে সক্ষম।” 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি এবং এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষ অনুভব করতে পারে যেন তারা সমুদ্রের গভীরে ডুব দিচ্ছে এবং জেলি ফিশের সাথে নাচছে কিংবা আল্পস পর্বতে আরোহণ করছে বা মহাকাশে উড়ে যাচ্ছে।

প্রথমবারের মতো শুয়ে থেকে ভিআর ব্যবহার করে বেশ উচ্ছ্বসিত চীনা তরুণ ওউ হাওফেই।

তিনি বলেন, ”আমি আগে কখনই শুয়ে থেকে ভিআর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা পাইনি। আমি সত্যিই মনে করেছি, আমি মহাকাশে আছি। আমার বাড়িতে এটি ব্যবহার করার ইচ্ছে হচ্ছে।”

ছয়টি জাতীয় ডেব্যু চলচ্চিত্রসহ মোট ৩০টি চলচ্চিত্র দেখানো হয় উৎসবে। সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর একটি হলো চার-খেলোয়ারের মিক্সড রিয়েলিটি গেম 'এগস্কেপ'। গেমটি তৈরি হয়েছে স্যান্ডম্যান স্টুডিও এবং বুয়েনস আয়ারস-ভিত্তিক স্টুডিও থ্রিডার মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে।

এই ভিআর হেডসেটগুলো চলচ্চিত্রটিকে ৩৬০-ডিগ্রি ভিউ দেখায়, যাতে ব্যবহারকারীরা এতে একেবারে নিমগ্ন হতে পারে এবং শুধুমাত্র দেখার পরিবর্তে অ্যাকশনের অংশ হতে পারে। বেশি মানুষের ভিআর-এ আসার কারণ হতে পারে এখানকার ইন্টারঅ্যাকটিভিটি। দর্শকরা সিনেমার কাহিনী এবং ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে এখানে।

ভিশন ল্যাবের কিউরেটর চে লিন বলেন তারা দশটিরও বেশি ভিআর ডিভাইস প্রদর্শন করেছেন উৎসবটিতে।

তিনি বলেন, "আমরা দশটিরও বেশি ভিআর ডিভাইস প্রদর্শন করছি, যাতে দর্শনার্থীরা আরও বেশি সিনেমা ও গেমে নিমগ্ন হতে পারে। এখানে ডোম-স্ক্রিন চলচ্চিত্র দেখানো হয়। পাশাপাশি ইন্টারেক্টিভ নাচও দেখানো হয়। আমরা চাই দর্শকরা চলচ্চিত্রের মধ্যে প্রবেশ করুক এবং এর অংশ হোক।” 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওমডিয়া ধারণা করছে, ভিআর ডিভাইস ও কনটেন্টে ২০২৬ সাল নাগাদ ভোক্তাদের মোট ব্যয় ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছবে এবং বিশ্বব্যাপী ৭ কোটিরও বেশি ভিআর হেডসেট ব্যবহৃত হবে।

এ ইনস্টিটিউটের আরও ধারণা, ২০২৬ সালে ভিআর হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যারের বাজারমূল্য ১ হাজার ৬শ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে, যেখানে ২০২১ সালে এ বাজার ছিল ৬৪০ কোটি মার্কিন ডলার।

 

|| প্রতিবেদন: শিহাবুর রহমান

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী