দেহঘড়ি পর্ব-০২৩
2023-06-18 13:10:18

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসায় টিসিএম

কোষ্ঠকাঠিন্য ব্যাপক-বিস্তৃত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। জীবনের কোনও না কোনও সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেনি এমন মানুষ নেই। অল্প সময়ের কোষ্ঠকাঠিন্য তেমন চিন্তার কারণ না হলেও এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে জটিলতা ডেকে আনতে পারে এবং জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।

প্রতিদিনই অন্তত একবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগ সবচেয়ে বেশি সুস্থতার লক্ষণ। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রতিদিন ৩ বার থেকে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৩ বার পর্যন্ত মলত্যাগ স্বাভাবিক। এর কম সংখ্যক বার মল ত্যাগ হলে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে ধরে নিতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যান্য উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকে পেট ফেঁপে যাওয়া, শক্ত বা দলা পাকানো মল এবং মলত্যাগ অসম্পূর্ণ রয়েছে এমন অনুভূতি।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া; প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পান করা; মলত্যাগের চাপ সত্ত্বেও টয়লেটে না যাওয়া; এন্ডোক্রাইন বা স্নায়বিক রোগ যেমন থাইরয়েড রোগ, পারকিনসন্স রোগ বা স্ট্রোক; কোলন বা মলদ্বারে প্রতিবন্ধকতা; কিছু কিছু ওষুধ গ্রহণ যেমন ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা অ্যান্টাসিড ওষুধ, যাতে অ্যালুমিনিয়াম বা ক্যালসিয়াম থাকে; ভ্রমণে থাকা, গর্ভাবস্থা এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন।

তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিসিএমে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য তিনটি বিষয়কে প্রধানত দায়ী মনে করা হয়। সেগুলো হলো শরীরে অতিরিক্ত শীতলতা বা অতিরিক্ত উষ্ণতা এবং মূলশক্তি বা ‘ছি’য়ে ভারসাম্যহীনতা। অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্য উপশমে জোলাপ গ্রহণ করেন এবং তাতে ফলও পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘাদিন জোলাপের ব্যবহার কোলনে পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা পরবর্তীতে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। টিসিএম চিকিৎসকরা প্রতিটি ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য আলাদা আলাদা ভেষজ ফরমুলেশন প্রেসক্রাইব করেন। কোষ্ঠকাঠিন্যের সঠিক চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের উপর। যারা অতিরিক্ত ঠান্ডায় ভুগছেন তাদের জন্য ভেষজ প্রতিকার বিশেষভাবে কার্যকর। এ ভেষজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে রবার্ব বা রেউচিনি লতা, ঘৃতকুমারী ও তেতো কমলা। জার্নাল অব অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত ২০১১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মলত্যাগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জোলাপ বা রেচক টিসিএমের প্রাচীন ‘ছয়-ভেষজ ফরমুলেশন’ ৮২ শতাংশ বেশি কার্যকর ছিল।

আকুপাংচারও কোষ্ঠকাঠিন্য উপশমে দারুণ কাজ করে। সঠিক পয়েন্টে আকুপাংচার দেহের ‘ছি’ প্রবাহের চ্যানেলগুলোর প্রতিবন্ধকতা দূর করে। রোগীর লক্ষণের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের আকুপাংচার পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় থিয়ানশু (পেটের মাঝখানে), তা চাং শু (পিঠের নিচের দিকে), তাহেং (পেটের বাইরে মাঝখানে) এবং নেইথিং (দ্বিতীয় পায়ের আঙ্গুলের গোড়া)। এসব পয়েন্টে আকুপাংচার অন্ত্রকে ঠান্ডা করতে এবং মল নরম করতে সাহায্য করে।

প্রাকৃতিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়:

•        নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস করুন। প্রতিদিন সকালে একই সময়ে টয়লেটে যান এবং টয়লেটে যাওয়ার বেগ এলে উপেক্ষা করা এড়িয়ে চলুন। টয়লেটে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বা কিছু পড়া থেকে বিরত থাকুন কারণ এটি অন্ত্রের গতি বিঘ্নিত করতে পারে।

•        খাদ্যতালিকায় ওটস ও ব্রাউন রাইসের মতো আঁশযুক্ত খাবার এবং অ্যামন্ড, তিল ও আখরোটের মতো তেলসমৃদ্ধ বাদাম বাড়ান। এগুলো জল শোষণ করে না, তবে মলের পরিমাণ বাড়ায়, যার কারণে নিয়মিত মলত্যাগের চাপ থাকে।

•        বেশি করে আপেল, কলা ও কমলার মতো ফল এবং গাজর, কালো ছত্রাক, সাদা মুলা ও আলুর মতো শাকসবজি খান। এসব খাবারের দ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় জল শোষণ করে। এটি মল নরম করতে সাহায্য করে, যার ফলে মলত্যাগ সহজ হয়।

•        বেশি করে পানি ও মধু পান করুন। জল অন্ত্রে লুব্রিকেন্টের মতো কাজ করে। একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করা উচিৎ। তবে যদি আপনার অন্য রকম পরামর্শ দেয়, সেটি মেনে চলুন।

•        বেশি ভাজা, মশলাদার বা ঠান্ডা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

•        নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

নানথুং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাসপাতাল

নানথুং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাসপাতাল চীনের চিয়াংসু প্রদেশের মধ্যাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১শ বছরেরও বেশি আগে, ১৯১১ সালে। ছিং রাজবংশের শেষভাগে দেশটির তখনকার শীর্ষ পণ্ডিত চাং চিয়ান এটি স্থাপন করেন। ১৯৯৪ সালে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ হাসপাতালটিকে একটি ক্লাস এ হাসপাতাল হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক জরুরী উদ্ধার কেন্দ্রগুলোর নেটওয়ার্কের আওতাধীন হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে স্বীকৃতি পায় নানথুং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাসপাতাল। সর্বাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে সজ্জিত ২ হাজার ১৬ শয্যাবিশিষ্ট  হাসপাতালটি হাওহে নদীর তীরে এক মনোরম পরিবেশ অবস্থিত। দেড় লাখ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে ৩৪টি ক্লিনিকাল বিভাগ, ১৭টি চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত বিভাগ এবং ২০টি গবেষণা কক্ষ ও পরীক্ষাগার।

সিমাঙ্গো ইন্সটিটিউশন র‌্যাংকিয়ে চীনের হাসপাতালগুলোর মধ্যে এটির অবস্থান ৯০তম। নানথুং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগ চিয়াংসু প্রদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এখানকার হ্যান্ড সার্জারি বিভাগ প্রদেশের একটি ক্লিনিক্যাল মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার হিসাবে কাজ করে। হ্যান্ড সার্জারি বিভাগের পাশাপাশি চক্ষুবিদ্যা ও নিউরোলজি বিভাগগুলো প্রদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা বিভাগ। তাছাড়া হাসপাতালের চক্ষুবিদ্যা, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিকস, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, হেমাটোপ্যাথোলজি, কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিন, নিউরোলজি, ডার্মাটোলজি ও ভেনেরোলজি, নেফ্রোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, প্রসূতি ও গাইনোকোলজি, ইমার্জেন্সি, ইমেজিং, নিউরোসার্জারি, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি এবং অঙ্কোলজি বিভাগ প্রদেশ-পর্যায়ের অন্যতম ক্লিনিক্যাল বিভাগ হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

 

#ভেষজের গুণ

মানসিক চাপ কমায় ম্যাগনোলিয়া বেরি

ম্যাগনোলিয়া বেরি নোনতা, মিষ্টি, টক, ঝাল ও তেতো স্বাদের একটি ফল। এই ৫টি স্বাদের সংমিশ্রণ থাকায় এটিকে ‘পাঁচ-গন্ধের ফল’ও বলা হয়। অপার ভেষজ গুণের কারণে ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ বা টিসিএমে ম্যাগনোলিয়া বেরি ব্যবহৃত হয় বহু কাল ধরে। চীনা ভাষায় এটাকে বলা হয় উয়ু ওয়েই চি। ম্যাগনোলিয়া বেরি অ্যাডাপ্টোজেন নামক ভেষজ পরিবারের অংশ, যেটি জন্মে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করে এই ফলটি।

মানসিক চাপ ও ক্লান্তি উপশমে গত প্রায় ১ হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ম্যাগনোলিয়া বেরি। নতুন এক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, এই বেরি ফুসফুসে অ্যাসিড তৈরি রোধ করার মাধ্যমে এ অঙ্গের সহনশীলতা উন্নত করে। এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হয় এবং বেশি সময় ধরে কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার সক্ষমতা অর্জন করে দেহ। এমনকি উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠার মধ্যেও শারীরিক ও মানসিকভাবে শান্ত থাকতে সহায়তা করে এ ফল।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।