চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-২১: বর্ণাঢ্য আয়োজনে চীনে সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য দিবস উদযাপন
2023-06-17 17:02:37

রাজধানী বেইজিং থেকে শুরু করে উত্তরপশ্চিম চীনের ছ্যংতু, সিনিং, দক্ষিণের তংকুয়ান, হাইখৌ, কিংবা পূর্বের হুচৌ-সর্বত্র- এককথায় গোটা চীন জুড়েই ১০ জুন জাতীয় সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য দিবস উদযাপনে ছিল বর্ণাঢ্য সব সাংস্কৃতিক আয়োজন।

‘অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষ জোরদার এবং টেকসই উন্নয়নের প্রসার’ প্রতিপাদ্যে এ বছরের আয়োজনের লক্ষ্য ছিল সাংস্কৃতিক নিদর্শন সুরক্ষায় অধিকতর সচেতনতা তৈরি।

চীনের সাংস্কৃতিক নিদর্শন বিভাগ ও অন্যান্য সংস্থা এ উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে ৭ হাজার ২০০ সাংস্কৃতিক নিদর্শনের প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

শুধু রাজধানী বেইজিংয়েই প্রদর্শন করা হয় ৫০০ সাংস্কৃতিক নির্দশন; ছিল নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন।

রাজধানী বেইজিংয়ের দক্ষিণে ইয়ংতিং গেট থেকে উত্তরের ড্রাম টাওয়ার ও বেল টাওয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত সেন্ট্রাল এক্সিসে অবস্থিত ৩২টি কালচারাল হেরিটেজ সাইট উদ্বোধন করা হয় এ’দিন।

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ছ্যংতুতে হোমসিটি ইভেন্ট ও সাংস্কৃতিক নির্দশন নিয়ে ফোরাম আয়োজিত হয়। মধ্যচীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে জাতীয় স্তরের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক নিদর্শন প্রকল্পের অধীনে ১০০টি লোকসংস্কৃতি বিষয়ক পারফরমেন্সের আয়োজন করা হয়।

দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের তংকুয়ান সিটিতে ড্রাগন বোট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। কুয়াংতং, হংকং ও ম্যাকাওয়ের ১৮টি নৌকা বাইচদল এতে অংশ নেয়।

তংকুয়ানের সংস্কৃতি, বেতার, টেলিভিশন, পর্যটন এবং স্পোর্টস ব্যুরো বিষয়ক কমিউনিস্ট পার্টি সেক্রেটারি সি ছি ব্যাখ্য করলেন এর গুরুত্ব।

তিনি বলেন ‘আকর্ষণীয় এ ড্রাগন বোট প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কুয়াংতং, হংকং ও ম্যাকাও আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সুরক্ষা এবং বিনিময় আরও ভালোভাবে করতে পারবে’।

দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশের হাইখৌ সিটিতে তিন হাজার বছরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ লি জাতিগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতিকে তুলে ধরে আয়োজন করা হয় সিরিজ ইভেন্টের।

চীনের জাতীয় অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকার প্রথম ব্যাচে স্থান পাওয়া লি জাতিগোষ্ঠীর অনন্য বুনন কৌশল তুলে ধরা হয় এ আয়োজনে।

বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক চীনা বিশেষজ্ঞ কমিটি সদস্য সং ফেং উচ্চ মূল্যায়ন করেন লি জাতিগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতির।

তিনি বলেন, ‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এ দ্বীপে বসবাস করছেন। তারা নিজেদের অনন্য বৈশিষ্টসম্পন্ন সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সাংস্কৃতিক- দু’দিক থেকেই হাইনানের গ্রীষ্মণ্ডলীয় রেইনফরেস্ট এবং লি জাতিগোষ্ঠী এখানকার উচ্চ প্রতিনিধিত্ব করে’।

লি জাতিগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে চীনের নতুন প্রজন্মের। একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী যেমন বলছিলেন তার গভীর আগ্রহের কথা:

‘লি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যিবাহী গ্রামগুলোর অপূর্ব সৌন্দর্য এবং প্রকৃতির কোলে তাদের বসবাস আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে চাই। ভবিষ্যতে আমি তাদের এ গ্রামগুলো এবং সংস্কৃতি রক্ষায় কাজ করতে চাই’। 

বর্তমানে বিশ্বে রেকর্ড, চীনের ৫৬টি সাইট বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। লি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যিক সংস্কৃতিও বিশ্বের সাংস্কৃতিক্ ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নেওয়ার প্রক্রিয়ার রয়েছে।

২. জমজমাট ২৫তম সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চীনের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র আয়োজন। সাংহাই গ্র্যান্ড থিয়েটারে চলছে এ উৎসব। 

চায়না ফিল্ম অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নির্দেশনায় চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি এবং সাংহাই মিউনিসিপ্যাল পিপলস গভর্নমেন্টের যৌথ পৃষ্ঠপোষকতায়, উৎসবটি আনুষ্ঠানিকভাবে সাংহাই গ্র্যান্ড থিয়েটারে গেল ৯ জুন একটি জমকালো উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এতে দলে দলে যোগ দেন দেশ বিদেশের চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পী ও নির্মাতারা। 

২০২২ সালে অফলাইন বা সরাসরি আয়োজন বাতিল হওয়ার পর এবারের এই সরাসরি আয়োজন ছিলো চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র প্রেমীদের অধীর আগ্রহের প্রত্যাশিত ফল।

 চীনা অভিনেতা সিয়া ইউ আনন্দ প্রকাশ করেন সরাসরি উৎসবে যোগ দিতে পেরে। তিনি বলেন, ‘এ বছরের ইভেন্টে যোগ দেওয়া আনন্দদায়ক। অনেক পুরানো বন্ধু এবং পরিচিতদের সাথে দেখা হয়েছে। আমি খুব খুশি’।

এ বছরের গোল্ডেন গবলেট অ্যাওয়ার্ড এবং ৩৬টি চলচ্চিত্রের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ৫৩টি কাজ আগে নির্বাচন করা হয়। উৎসব চলাকালীন ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার করার জন্য দেশ-বিদেশের প্রায় ৪৫০টি অসামান্য চলচ্চিত্র, সাংহাইয়ের ৪১টি সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়।  

২৫তম সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের গোল্ডেন গবলেট অ্যাওয়ার্ডের জন্য পাঁচটি বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ফিচার-লেংথ ফিল্ম, নিউ এশিয়ান ট্যালেন্টস, ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেটেড ফিল্ম এবং শর্ট ফিল্ম৷ এবারের উৎসবে ৮ হাজার ৮ শ’টি চলচ্চিত্র নিবন্ধন করে।

চলমান এই উৎসবে চীনের ক্রমবর্ধমান বিজ্ঞান কল্পকাহিনী চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য জ্ঞান প্রদর্শন করতে প্রথম সাই-ফাই ফিল্ম সপ্তাহ চালু করে।

নয় দিনব্যাপী এ উৎসব আগামী ১৮ জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

 

৩. চীনের পরিবর্তন ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে এবং পাঠকদের জানাতেই চীনা বই প্রকাশ করি: মেসবাহউদ্দীন আহমেদ

প্রকাশক মেসবাহউদ্দীন আহমেদ

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘সিএমজির নতুন অগ্রযাত্রা: চীনা বই প্রকাশ’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী গোলটেবিল বৈঠক। চীন বিষয়ক বইয়ের লেখক ও প্রকাশকদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের সাংস্কৃতি কাউন্সিলর ইউয়ে লি ওয়েন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা। বেইজিং থেকে অনলাইনে যুক্ত হন সিএমজি বাংলা বিভাগের পরিচালক ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দি।

অনুষ্ঠানে অন্য অতিথি ও আলোচকদের পাশাপাশি চীন বিষয়ক বই প্রকাশের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশের নামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অঙ্কুর প্রকাশনীর প্রকাশক মেসবাহউদ্দীন আহমেদ।

বললেন চীনের পরিবর্তন ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে এবং পাঠকদের জানাতেই চীনা বই প্রকাশ করেন তিনি। চীনা বই নির্বাচন ও প্রকাশে তার সমস্যা হয়নি বলে জানান বর্ষীয়ান এ প্রকাশক।

তবে, অনুবাদ ও চীনের বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্থানের নামের বানানে কিছুটা সমস্যা হয় বলে জানান তিনি। চীনের প্রকাশকদের কাছ ভালো সহযোগিতা পান বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রকাশক মেসবাহউদ্দীন আহমেদ।

 

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: মাহমুদ হাশিম, রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।