বন্ধুরা, মার্কিন কুহন তহবিলের চেয়ারম্যান ও চীনা সংস্কার মৈত্রী পদক লাভকারী রবার্ট লরেন্স কুহন হলেন চীনা জনগণর পুরানো বন্ধু। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৭৪ বছরে নয়াচীন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য লাভ করেছে। চীন বিশ্বের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আবদান রেখে আসছে। তিনি মনে করেন, বিশ্বের সামনে আধুনিক চীনের গল্প প্রচার করার গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে।
কুহন বলেন, গত কয়েক দশক ধরে তিনি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যাওয়া-আসা করছেন। তিনি সমসাময়িক চীনের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, চীনের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বিশ্বের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। গোটা বিশ্ব-ই এর সাক্ষী। এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৭৪ বছরে, বিশেষ করে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যকর হওয়ার পরের ৪০ বছরেরও বেশি সময় চীন সমাজ ও অর্থনীতিতে বিরাট অগ্রগতি লাভ করেছে। গত ৭৪ বছরে নয়াচীনের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা এবং দেশটির ৪০ বছরেরও বেশী সময় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সাফল্যের দিকে ফিরে তাকালে আমরা মানব ইতিহাসের অন্যতম বড় পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করি। এ কয়েক দশকে চীনা অর্থনীতি ব্যাপকভাবে
বেড়েছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাফল্য থেকে বিশ্ব উপকৃত হচ্ছে। চীনা অর্থনীতির বিকাশের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। পাশাপাশি, দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে চীন বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে। চীন জাতিসংঘের দারিদ্র্যবিমোচন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। যেমনটি অনেকে বলেন, চীন তার সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে আসলে বিশ্বের কল্যাণ করছে।”
চীনবিশেষজ্ঞ হিসেবে কুহন এই দেশটিকে বুঝতে পারেন। তিনি হলেন বিশ্বের কাছে আধুনিক চীনা গল্প বলা একজন বিদেশী বন্ধু। কুহন বলেন, চীন হলো একটি বহুমুখী উন্নয়নশীল দেশ। চীনের সামাজিক কাঠামো খুবই জটিল এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়ন ভারসাম্যহীন। সেজন্য একতরফাভাবে চীনা সামাজিক উন্নয়ন ও সমস্যাকে ব্যাখ্যা করা যায় না।
পশ্চিমাদের সামনে কুহন আসল চীনকে তুলে ধরার কাজ করছেন। তিনি চীনের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের অনেকের নেতিবাচক মনোভাবেই পরিবর্তন আনতে পেরেছেন। তিনি চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সাফল্য ছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্য তুলে ধরেছেন।
২০১৯ সালের ৩১ জুলাই কুহন পরিচালিত 'সম্মুখভাগের কন্ঠ: চীনের দারিদ্র্যবিমোচন' শীর্ষক তথ্যচিত্র মার্কিন গণ টেলিভিশন নেট ক্যালিফোর্নিয়া টিভিতে প্রথম বারের মতো সম্প্রচারিত হয়। তথ্যচিত্রে একজন বিদেশীর দৃষ্টিতে চীনের দারিদ্র্যবিমোচন নীতিমালা ও কর্মসূচির সাথে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তিনি চীনের পাঁচটি দরিদ্র পরিবারের দারিদ্র্য থেকে মুক্তি গল্প দিয়ে ২০২০ সালের মধ্যে গোটা দেশের দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্য বাস্তবায়নকে ব্যাখ্যা করেন। তথ্যচিত্রে চীনের বিভিন্ন সমস্যাও তুলে ধরেন তিনি।
এ তথ্যচিত্র তৈরীর জন্য কুহন দু’বছর ব্যয় করেছেন। তিনি চীনের কানসু, সিনচিয়াং, শানস্যি ও স্যিছুয়ানের দরিদ্র পরিবারগুলোর অবস্থা সরেজমিন তদন্ত করেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে চীনের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমের সাথে বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্ব এ অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারে। তিনি বলেন, “তথ্যচিত্রটি কার্যকরভাবে বিশ্বের সামনে আসল চীনতে তুলে ধরেছে। কোনো কোনো বিদেশীর চীন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব এতে বদলে গেছে। কোনো কোনো মার্কিন দশর্ক বলেন, আমার তথ্যচিত্র দেখার পর তাঁরা ভীষণভাবে হতবাক হয়েছেন। কারণ, তাঁরা ভাবতেই পারেননি যে, চীন এতোটা শক্তি ও সামর্থ্য ব্যয় করে দারিদ্র্যবিমোচনের চেষ্টা করছে। আসলে আমি চীনের সাফল্য
ছাড়াও চীনের বিভিন্ন সমস্যার কথাও তথ্যচিত্রে বলেছি। আপনারা আমার তথ্যচিত্র দেখে চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের পরিকল্পনা ও চীনা সমাজউন্নয়নের মৌলিক নীতি বুঝতে পারবেন। আসলে, চীন একটি কার্যকর দারিদ্রবিমোচনব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এটি একটি মহান কাজ। আমি এই গল্প তুলে ধরতে পেরে গর্বিত।”
কুহন বলেন, চীন শুধু যে নিজের উন্নয়ন দিয়ে বিশ্বের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য অবদান রাখছে তা নয়, পাশাপাশি বৈশ্বিক দারিদ্র্যবিমোচন প্রচেষ্টায় অংশও নিচ্ছে। চীন বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজের বুদ্ধি ও শক্তি সরবরাহ করছে। এ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, “চীন বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। চীন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে অংশ নিয়ে আসছে। চীন বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অংশ নিচ্ছে। চীন মাদক ও সংগঠিত অপরাধ দমন, মহামারী প্রতিরোধ এবং বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও বেশি উন্নয়নের সুযোগ দিতে কাজ করে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, নয়াচীনের উন্নয়ন মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে। চীনা জনগণের পরিশ্রম ও সংগ্রামের চেতনা চীনের উন্নয়নের সকল প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হয়েছে। (ছাই/আলিম)