ইউ সিয়েন লুং: তিব্বতের উজ্জ্বল তারার আকাশরক্ষক
2023-06-16 16:58:27

রাত ৯টায়, সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে, তিব্বতের এনগারি অঞ্চলের শিছুয়ানহ্য জেলার দক্ষিণে ৫১০০ মিটার উচ্চতার চিয়ামাআরদেং পর্বতের চূড়ায়, এনগারি মানমন্দিরের বেশ কয়েকটি বিশাল সাদা গম্বুজ সূর্যের আভায় জ্বলজ্বল করে। পাতলা ইউ সিয়েন লুং তার গাড়ি পার্ক করেন, গম্বুজের নীচে অফিসে ঢুকে তার কাজ শুরু করেন।

৩৬ বছর বয়সী ইউ সিয়েন লুং এনগারি মানমন্দিরের প্রকৌশলী। সাত জন সহকর্মীর সাথে তিনি মানমন্দিরের সরঞ্জাম পর্যবেক্ষণ, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। ইউ সিয়েন লুং এনগারি মানমন্দিরে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করা প্রকৌশলী। ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৭ বছর ধরে তিনি এখানে কাজ করছেন।

২০০৩ সালে চীনের জাতীয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরি বড় বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্প চালু হয়। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পর, ইউ সিয়েন লুং আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে দেখা করতে ও কাজের সুযোগ খুঁজতে সিনচিয়াংয়ে যান। দৈবক্রমে, তিনি জাতীয় জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান গবেষক ইয়াও ইয়ংছিয়াং-এর সাথে পরিচিত হন। তখন ইয়াও ইয়ং ছিয়ান উক্ত প্রকল্পের সাইট নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন এবং পশ্চিমাঞ্চলে সাইট নির্বাচন প্রকল্পের জন্য মালভূমির অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে ও মাঠে পরিমাপকাজ করার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে লেগে থাকতে পারে—এমন কর্মী খুঁজছিলেন। ইউ সিয়েন লুং এই চ্যালেঞ্জিং কাজের প্রতি কৌতূহলী ছিলেন।  

"সেই সময়ে, আমার কাছে এই কাজটি খুব আকর্ষণীয় ছিল।" ইউ সিয়েন লুং বলেন, "এবং আমি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি। এ কাজের জন্য আমি প্রায় পুরো চীন ভ্রমণ করেছি। অবশ্যই, সব কঠিন কঠিন এলাকায় ছিল তা।"

অতএব, ইয়াও ইয়ংছিয়াং-এর দলে যোগদান করেন ইউ সিয়েনলুং এবং এনগারি মানমন্দিরের সাথে তার আজীবন সম্পর্ক শুরু করেন।

একটি মানমন্দিরের জন্য সাইট নির্বাচন করা একটি দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়া। টপোগ্রাফি, ভূতত্ত্ব এবং পরিচালনার জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ খুঁজে বের করার পাশাপাশি, জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণের অনেক প্রাসঙ্গিক প্রভাবক কারণ বিবেচনায় রাখতে হয়। যেমন, পরিষ্কার রাতের সংখ্যা, জ্যোতির্বিদ্যাগত পর্যবেক্ষণ মাত্রা, আবহাওয়া সংক্রান্ত অবস্থা, ইত্যাদি এবং এর অবস্থান পরিমাপের কাজ কয়েক বছর ধরে চলতে পারে। তাই, চমত্কার মানমন্দিরগুলোর প্রায়শ সবই বেশি উচ্চতায় এবং মানুষের বসতি থেকে দূরে অবস্থিত।

"সাইট নির্বাচনের সময়, প্রতি ঘন্টায় মেঘের ছবি একবার তুলতে হয়, ২৪ ঘন্টা অব্যাহতভাবে তুলতে হয়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় জলীয় বাষ্প পরিমাপ করতে হয়। রাতে জ্যোতির্বিদ্যাগত পর্যবেক্ষণ মাত্রা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। এই কাজের অগ্রগতি সাইট নির্বাচনের সময়ের মধ্যেও অব্যাহত রাখতে হয়।” ইউ সিয়েন লুং জানান, সাইট নির্বাচন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যা ১০ বা ২০ বছর স্থায়ী হতে পারে এবং এটি ডেটা সংগ্রহের একটি পর্যায়।

একটি দীর্ঘ এবং শ্রমসাধ্য জরিপ ও স্থানীয় তদন্তের পর, ২০১১ সালে, একটি সাইট নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্ল্যাটফর্ম- জাতীয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল মানমন্দির এনগারি মানমন্দির শিছুয়ানহ্য জেলার দক্ষিণে তৈরি করা হয়।

আজ, ১০ বছরেরও বেশি সময়ের নির্মাণকাজের পর, কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন পরীক্ষা, মূল মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্তকরণ প্রকল্প, স্থান ধ্বংসাবশেষ এবং সময়-ডোমেন জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ... এনগারি মানমন্দির উত্তর গোলার্ধের অন্যতম সেরা জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ধারাবাহিক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জাতীয় স্থাপনা প্রকল্পগুলো সফলভাবে চালু হয়েছে।

জাতীয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির প্রধান গবেষক ইয়াও ইয়ংছিয়াং বলেন, এনগারি মানমন্দির নির্মাণের ফলে চীন তথা এশিয়াতেও বহির্জাগতিক জীবনের অস্তিত্ব অন্বেষণকে উত্সাহিত করবে, যা জ্যোতির্বিদ্যার সবচেয়ে আধুনিক বিষয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এনগারি মানমন্দির ভবিষ্যতে ১০ মিটার বা এমনকি ১০ মিটারেরও বেশি অ্যাপারচারের টেলিস্কোপ তৈরি করতে পারে।

এখন, ইউ সিয়েন লুং-এর স্ত্রীও শিছুয়ানহ্য জেলায় এসেছেন, কিন্তু তাদের ১০ বছরের ছেলে মিয়ানইয়াং-এ ইউ সিয়েন লুং-এর বাবা-মায়ের সাথে থাকে। ইউ সিয়েন লুং-এর সহকর্মীরা হ্যনান, হ্যপেই, সিচুয়ান, ছুংছিং এবং অন্যান্য জায়গা থেকে এসেছেন। তারা সকলেই উজ্জ্বল তারার আকাশ এবং বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলো রক্ষা করছেন, কিন্তু তারা তাদের প্রিয় মানুষদের থেকে অনেক দূরে থাকেন।

গভীর রাত, আকাশ তারায় ভরা, এনগারি মানমন্দিরের বিশাল গম্বুজটি তারা এবং চাঁদের মতো উজ্জ্বল। আমরা যখন তারার সমুদ্রের দিকে তাকাই এবং দূরের মহাবিশ্বের উপর দৃষ্টি রাখি, তখন ইউ সিয়েন লুং-এর মতো লোকেরা আমাদের অজানা বিশ্ব অন্বেষণের পথ প্রশস্ত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। প্রতিটি নতুন প্রযুক্তি বা উদ্ভাবনের পেছনে এমন একদল মানুষ আছেন যারা নীরবে জীবন উত্সর্গ করে যাচ্ছেন। (ইয়াং/আলিম/ছাই)