সম্প্রতি উজবেকিস্তানের প্রথম ডেপুটি স্পিকার এবং জাতীয় মানবাধিকার কেন্দ্রের মহাপরিচালক আকমল সাইদভ বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ে চলমান মানবাধিকার ফোরামে যে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন- তাতে বিশ্ব মানবাধিকার উন্নয়নে তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ ও চিন্তাভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে।’ সাইদভ বর্তমানে বিশ্ব মানবাধিকার প্রশাসন বিষয়ক ঊর্ধ্বতন ফোরামে যোগ দিতে বেইজিংয়ে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কর্তৃক ফোরামে উত্থাপিত উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা এবং উদ্যোগে সংযুক্ত নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও সহযোগিতাকে মানবাধিকার রক্ষার তিনটি স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করেন তিনি।
চলতি বছর হলো মানবাধিকার বিষয়ে ‘ভিয়েনা ঘোষণা ও কর্মসূচী’ গৃহীত হওয়ার ৩০তম বার্ষিকী। ভিয়েনায় গৃহীত এ দলিলে বর্ণিত সব ধরণের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার উন্নয়ন ও রক্ষায় জাতিসংঘ সনদ ও নীতি অনুসরণের করতে হবে। আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বেগবান এবং উন্নয়নের অধিকার বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের পথে বাধা নির্মূল করাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলা। এ দলিল মানবাধিকার উন্নয়নের ইতিহাসে মাইলফলক।
ত্রিশ বছর পর বর্তমানে বিশ্ব নতুন হাঙ্গামা ও বিপ্লবী সময়ে প্রবেশ করেছে। যুদ্ধ ও সংঘাত, ব্যাংকিং সংকট এবং বিশ্বায়ন বিরোধিতা সহ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ব মানবাধিকার। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্ব মানবাধিকার ব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হবে? ‘ভিয়েনা ঘোষণা ও কর্মসূচী’র উদ্যোক্তা ও অনুশীলনকারী দেশ হিসেবে এক্ষেত্রে চীন কী করবে?
গত ১৪ জুন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ের ফোরামকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দনবার্তায় সি চিন পিং নিরাপত্তার মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষা, উন্নয়নের মাধ্যমে মানবাধিকার উন্নয়ন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে মানবাধিকার বেগবানের পাশাপাশি বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগ, উন্নয়ন উদ্যোগ এবং সভ্যতা উদ্যোগ অনুশীলন করার প্রস্তাব দেন। এটি বিশ্ব মানবাধিকার ব্যবস্থায় চীনের নতুন প্রস্তাব, যা বাস্তবভিত্তিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সহযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেছে। তাই এটি ফোরামে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।
নিরাপত্তা মানবাধিকার নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত। বর্তমানে কোনো কোনো দেশ ‘বড় দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ নিয়ে অপপ্রচার চালায় এবং ক্ষুদ্র উপদল তৈরি করে বৈরিতা উস্কে দেয়, যা বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। অনেক দেশের জনগণের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে।
ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, চীনের উত্থাপিত বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাবের বিশ্ব মানবাধিকার ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে।
ফরাসি ‘ফ্রি থট’ ম্যাগাজিনের এডিটর জিন পিয়ার পেইজ মনে করেন, চীনের শান্তি বৈঠকে বসার গঠনমূলক প্রস্তাব খুব গুরুত্বপূর্ণ। সকল পক্ষের স্বার্থে সার্বিক নিরাপদ কাঠামো গঠন করলেই কেবল যে কোনো সংকট দ্রুত সমাধান হয়।
উন্নয়ন মানবাধিকার রক্ষার ভিত্তি। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ দিয়ে দেখানো যায়, চীন সাফল্যের সঙ্গে ৭৭ কোটি গ্রামবাসীকে দারিদ্রমুক্ত করেছে। ‘জাতিসংঘ এজেন্ডা ২০৩০’ অনুসারে দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের দশ বছর পূর্বে এটি সম্ভব করেছে চীন। বর্তমানে দেশটি সকলের অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ফরাসি শিল্পপ্রতিষ্ঠাতা আর্নড বেট্রান্ড চীনের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেছেন। চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের সফলতা তার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে। একে বিশ্ব ইতিহাসে বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রুত দারিদ্র্যমুক্তির ঘটনা বলে মনে করেন তিনি।
মানবাধিকার রক্ষা করা মানব জাতির অভিন্ন দর্শন। এ নিয়ে রাজনীতি করা এবং একে হীন স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু কিছু পশ্চিমা দেশ নিজ নিজ দেশের গুরুতর মানবাধিকারের লঙ্ঘনের ঘটনায় কান-চোখ বন্ধ রাখে। তারাই আবার মানবাধিকারের অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং অন্য দেশগুলোর উন্নয়ন রোধ করে।
চীন মনে করে, যে কোনো দেশ মানবাধিকারের বিচারক হতে পারে না। বিভিন্ন দেশের নিজেদের মানবাধিকার উন্নয়নের পথ বেছে নেওয়ার অধিকার আছে। সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণ সুন্দর দিন কাটাতে পারলেই সমৃদ্ধি স্থায়ী, নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং মানবাধিকারের ভিত্তি সুসংহত হবে। (রুবি/এনাম)