সি চিন পিং ও সবুজ মহাপ্রাচীরের গল্প
2023-06-15 16:59:30

সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইনার মঙ্গোলিয়ার পাইয়াননাওর শহর পরিদর্শন এবং সেখানে মরুকরণ রোধ-বিষয়ক এক সভায় সভাপতিত্ব করেছেন।

 

এসময় তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সবার উচিত পরিবেশের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, যাতে উত্তর চীনের সীমান্ত অঞ্চলে ‘সবুজ বেষ্টনী’ আরও সুসংবদ্ধ হয় এবং মরুকরণ রোধে নতুন বিস্ময় সৃষ্টি করা যায়।

 

 

তিনি বলেন, মরুকরণ রোধ মানব জাতির অস্তিত্ব ও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বিষয়। চীন বিশ্বের মরুকরণ কবলিত বৃহত্ দেশগুলোর একটি। মরুকরণ প্রধানত চীনের উত্তর-পশ্চিম, উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে হয়ে থাকে। এসব অঞ্চলকে সংক্ষেপে ‘তিনটি উত্তর’ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এর একটি। এখানে রয়েছে ৫টি মরুভূমি এবং ৫টি বালি-ভূমি।

 

তিনি বলেন, মরুকরণ রোধ করতে গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকের শেষ দিক থেকে চীন সরকার এ ‘তিনটি উত্তরাঞ্চলে’ মনুষ্য তৈরি বন প্রকল্প শুরু করেছে। যার মোট আয়তন ৪৩.৫ লাখ বর্গকিলোমিটার। তা চীন দেশের আয়তনের ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তাই একে ‘সবুজ মহাপ্রাচীর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ প্রকল্প ৭০ বছর ধরে চলবে এবং ৮ পর্বে নির্মিত হবে। বর্তমানে ষষ্ঠ পর্বের কাজ চলছে।

 

 

চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, গত ৪০ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় মরুকরণ কবলিত অঞ্চলে অর্থনীতি, সমাজ ও প্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। তিনটি উত্তরাঞ্চলের প্রকল্পে জড়িত অঞ্চলে বনের হার ১৯৭৭ সালের ৫.০৫ শতাংশ থেকে ২০২০ সালের ১৩.৮৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত দশ বছরে চীনের অর্ধেক মরুভূমিতে এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

 

 

সি চিন পিং মনে করেন, চীন প্রকৃতির নিয়ম, সামাজিক ব্যবস্থা এবং ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি মরুকরণ রোধের পথ অনুসন্ধান করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও গুতেরহিস বলেন, ‘চীন সর্বপ্রথম বিশ্বজুড়ে জমির অবক্ষয়ের নিরপেক্ষতা, মরুকরণ কবলিত জমি এবং বালির আয়তন কমানোসহ নানা অগ্রগতি অর্জন করেছে। তা এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে।’

 

 

উত্তর চীনে অবস্থিত মহাপ্রাচীর দেশে-বিদেশে বিখ্যাত। যা দু’হাজার বছর আগে নির্মিত সামরিক প্রতিরোধ প্রকল্প। বর্তমানে তিনটি উত্তরাঞ্চলে মনুষ্য তৈরি বনাঞ্চল একটি সবুজ প্রাচীরে পরিণত হয়েছে, যার উত্তর চীনের প্রাকৃতিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে। একে ‘সবুজ মহাপ্রাচীর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন সি চিন পিং।

 

সি চিন পিং বরাবরই পরিবেশগত নির্মাণকাজের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মনে করেন, গত দু’বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাবে উত্তর চীনে ধুলুময় আবহাওয়া অনেক বেশি পরিমাণে দেখা দিয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে এ কাজ সুসংহত করা হবে বলে মনে করেন সি চিন পিং। তাই তিনি বেশ কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। প্রথমত: পাহাড়, পানি, বন, ক্ষেত, ঘাস ও বালির একত্রে সংরক্ষণ এবং মোকাবিলা করা প্রয়োজন। সব উপকরণের সমন্বয়ে বন, তৃণভূমি, জলাভূমি ও মরুকরণের ইকোসিস্টেম তৈরি করা হবে। ফলে ১০ বছরের মধ্যে তিন উত্তরাঞ্চলের প্রকল্প উত্তর সীমান্ত অঞ্চলে সবুজ প্রাচীর প্রতিষ্ঠা করবে। দ্বিতীয়ত: বিজ্ঞানভিত্তিক মরুকরণ মোকাবিলায় অবিচল থাকতে এবং উপযুক্তভাবে জলজ সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। তৃতীয়ত: ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক আদান-প্রদান ও সহযোগিতা চালাতে হবে।

 

তিনি বলেন, জাতিসংঘের মরুকরণ প্রতিরোধ ও মোকাবিলা চুক্তি পালন এবং মরুকরণের পরিবেশগত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার এবং ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মরুকরণ রোধের সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈঠক ও তথ্য শেয়ার করার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যৌথভাবে ধুলোবালির আবহাওয়া প্রতিরোধ করতে হবে।

 

(রুবি/এনাম)