আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ২২
2023-06-15 14:06:33

কী রয়েছে এবারের পর্বে

১.  বাংলাদেশকে ভালোবাসেন চীনের তরুণী লিন

২. নতুন যুগের নারী আয়নাগুল

৩. নারী ও শিশু-বিষয়ে সি চিন পিংয়ের বক্তব্য নিয়ে বই প্রকাশ 

৪.  ফ্রেঞ্চ ওপেনে নারী ডাবলসে শিরোপা জিতলেন ওয়াং এবং সিয়ে

৫. এশিয়ার সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশের দুই নারী

 

 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

বাংলাদেশকে ভালোবাসেন চীনের তরুণী লিন

 

চীনের কুয়াংচৌ শহরের তরুণী লিন চিউ ওয়েন। তাকে চুইনা নামে ডাকা হয়। কুয়াংচৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন তিনি। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি আছেন বাংলাদেশে। এখানে তার বাবা একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। বাবার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন লিন ।

 

এক সাক্ষাৎকারে লিন বলেন, তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। বাংলাদেশের খাবার যেমন তার পছন্দ তেমনি বাঙালি নারীর পোশাক শাড়িও ভালোবাসেন তিনি।

বাংলাদেশের নারীরা খুব পরিশ্রমী বলে মনে করেন লিন। তিনি বলেন, চীনের নারীরা অনেক পরিশ্রম করে। তারা চীনের উন্নয়নে অনেক অবদান রাখছেন। তেমনি বাংলাদেশের নারীরাও অনেক পরিশ্রম করছেন এবং দেশের অগ্রগতিতে অনেক অবদান রাখছেন। তিনি

লিন বলেন, বাংলাদেশের নারী ও চীনের নারীরা অবশ্যই বন্ধু হতে পারেন।  চীনের তরুণী লিন বাংলাদেশকে ভালোবাসেন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: শান্তা মারিয়া

 

নতুন যুগের নারী আয়নাগুল

 

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের নারীরা এখন নতুনভাবে এগিয়ে চলছেন জীবনের পথে। তারা বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করছেন এবং গ্রামীণ পুনর্জাগরণে অবদান রাখছেন।

সিনচিয়াংয়ের নতুন প্রজন্মের একজন নারীর কথা শুনবো এখন যিনি শিকক্ষকতা পেশায় পেয়েছেন পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা।

চীনের ইউগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের এক তরুণী আয়নাগুল বাগজুলি।কিজিলসু কিরগিজ স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের  আকতো কাউন্টির জামাতরিকি মিডল স্কুলের সাহিত্যের শিক্ষিকা আয়নাগুল।

কিরগিজ জাতিগোষ্ঠীর নারী তিনি। ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় আয়নাগুল। কেন তার এই জনপ্রিয়তা? একদিন আয়নাগুল তার শ্রেণীকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন থাং রাজবংশের সময়কার বিখ্যাত কবিতা ‘শেষ বসন্ত। ক্লাসরুমের জানালা দিয়ে তার চোখে পড়লো বাইরের বাগানে সত্যিই সুন্দর ফুল ফুটেছে, নীল আকাশে ভেসে যাচ্ছে হালকা সাদা মেঘ। আয়নাগুল তার ছাত্রছাত্রীদের বললেন, চলো আমরা বাগানে গিয়ে লেখাপড়া করি। সবাইকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন বাগানে। সেখানেই সেদিন চললো সাহিত্যের পাঠ।

২৭ বছর বয়সী আয়নাগুলকে জীবনে সংগ্রাম কম করতে হয়নি। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। তাদের তিনভাইবোনকে বড় করে তোলেন মা। স্বামীকে হারিয়ে মা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি শুধু সন্তানদের কথা ভেবে।

কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত একটি সহায়তা প্রকল্পের অধীনে সিনচিয়াংয়ের এক লাখ দরিদ্র শিক্ষার্থীর অন্যতম ছিলেন আয়নাগুল। 

আয়নাগুল বলেন, ‘সরকারী সহায়তা না পেলে আমি সিনচিয়াংয়ের বাইরেই কখনও যেতে পারতাম না। লেখাপড়া শেখাও হতো না। রাজধানীতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তো অনেক দূরের কথা।

আয়নাগুল প্রথমে চেচিয়াং প্রদেশে পরে বেইজিং শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। তার লেখাপড়া এবং সিনচিয়াং যাতায়াত, শহরে থাকা খাওয়াসহ সবরকম খরচ দেয় সরকার।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর নিজের শহরে ফিরে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। তিন বছরের মধ্যেই তিনি সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পান।

আয়নাগুল তার শিক্ষার্থীদের শুধু গতানুগতিক শিক্ষাই দেন না, তিনি তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেন জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য। অন্যান্য অনেক বড় শহর থেকে তিনি চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন। কিন্তু নিজের শহরে শিক্ষার প্রসার ঘটানো তার লক্ষ্য। তাই তিনি ছোট্ট হোম টাউনের শিক্ষকতা পেশাতেই খুঁজে পান তৃপ্তি। আয়নাগুল হলেন চীনের সেইসব তরুণ প্রজন্মের নারী যারা নিজেদের গ্রামকে উন্নত করার এবং গ্রামীণ পুনর্জাগরণে কাজ করার মহান ব্রত গ্রহণ করেছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

নারী ও শিশু-বিষয়ে সি চিন পিংয়ের বক্তব্য নিয়ে বই প্রকাশ  

 

 ‘নারী ও শিশু-বিষয়ক সি চিন পিংয়ের বক্তব্য’ শীর্ষক একটি বই সম্প্রতি চীনে প্রকাশিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় পার্টি সাহিত্য প্রেসের উদ্যোগে তা দেশব্যাপী প্রকাশিত হয়।

নারীদের উন্নয়নে চীন সবসময় গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর, কমরেড সি চিন পিং-কেন্দ্রিক সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটি নারীদের উন্নয়নে উচ্চ মানের গুরুত্ব দিয়েছে এবং এ খাতে ঐতিহাসিক অর্জন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছে।

 নারী ও শিশুদের জন্য কমরেড সি চিন পিংয়ের ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য নতুন যুগে নারীদের উন্নয়ন, জেন্ডার সমতার মৌলিক জাতীয় নীতি নিশ্চিত করা এবং নারী ও শিশুর বৈধ স্বার্থ ও কল্যাণ রক্ষা করাসহ একাধিক খাতে তাৎপর্যপূর্ণ।

বইটিতে ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ৬ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত কমরেড সি চিন পিংয়ের ৫০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ, চিঠি ও দিক-নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

ফ্রেঞ্চ ওপেনে নারী ডাবলসে শিরোপা জিতলেন ওয়াং এবং সিয়ে

ফ্রেঞ্চ ওপেন টেনিস প্রতিযোগিতায় নারী ডাবলসে শিরোপা জয় করেছেন চীনের ওয়াং সিনইয়ু এবং চায়নিজ তাইপেইর সিয়ে সু-ওয়েই। রোববার প্যারিসে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় ৩৭ বছর বয়সী সিয়ে এবং ২১ বছর বয়সী ওয়াং সিমোন ম্যাথিউ ট্রফি তুলে নেন।

 

সিয়ে বলেন, ‘আমরা এখানে ফাইনাল খেলার আশা করিনি। আমরা মাত্র এক মাস আগে জুটি গঠন করেছি। তাই আমরা একে অপরকে বলেছিলাম ম্যাচটি উপভোগ করার জন্য।’

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

এশিয়ার সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় বাংলাদেশের দুই নারী

এশিয়ার একশজন সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের দুজন বিজ্ঞানী সেজুতি সাহা এবং গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে আনা এ দুজন কৃতী নারীর অর্জন বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

গবেষণা খাতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবার গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০২৩ সালে এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের দুই বিজ্ঞানী। তারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী ও অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা।

সম্প্রতি ‘দ্য এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ১০০’ শিরোনামে নিজেদের ওয়েবসাইটে তালিকার অষ্টম সংস্করণ প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট’। গবেষণা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০১৬ সাল থেকে বিজ্ঞানীদের তালিকা প্রকাশ করে আসছে সাময়িকীটি। প্রতিবছর ১৭ ক্যাটাগরিতে তালিকা প্রকাশ করে থাকে।

এ তালিকায় থাকা গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী প্লাস্টিকের দূষণ এবং প্রকৃতি ও মানুষের জীবনে এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন। জলজ প্রতিবেশ এবং বিপন্ন প্রাণী সুরক্ষায় অবদানের জন্য তিনি ওডব্লিউএসডি-এলসিভিয়ার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড পান ২০২২ সালে। উপকূলীয় নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছেন তিনি। ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী জুওলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সদস্য।

আরেক বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) পরিচালক। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের জিন নকশা উন্মোচন করেছেন। তবে এর আগে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ কাজ ছিল শিশুদের নিয়ে। তিনিই বিশ্বে প্রথম প্রমাণ করেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শুধু রক্ত নয়, শিশুর মস্তিষ্কেও বিস্তার লাভ করতে পারে।

শত বিজ্ঞানীর মধ্যে দুজন নারী বিজ্ঞানীর স্থান পাওয়ার সংবাদ ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরীর কাছে বড় খুশির।

তবে বিজ্ঞান গবেষণায় তহবিল একটা বড় সমস্যা বলে মনে করেন এই বিজ্ঞানী। নারীদের জন্যও এ পথ খুব মসৃণ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব প্রতিবন্ধকতা নিয়েই বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন—বিশ্বের কাছে এমন বার্তা যাবে বলে মনে করেন সেঁজুতি সাহা। তিনি আশা করেন বিজ্ঞান গবেষণায় বাংলাদেশের নারীরা আরও বেশি সংখ্যায় এগিয়ে আসবেন।

এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে মোট ১৭টি ক্যাটাগরিতে এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করছে সাময়িকীটি।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

 

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল