‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ২২
2023-06-14 18:02:45

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।     

১. ফের নিয়োগ অভিযান শুরু করেছে চীন 

 

১ কোটির বেশি চাকরির সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে ১শ’ দিনের নিয়োগ অভিযান শুরু করেছে চীনের মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রনালয়। 

 

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি, উন্নত উত্পাদন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো প্রধান শিল্পগুলোতে সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন চাকরির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রচারাভিযানটি পরিচালিত হচ্ছে।

 

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, একটু ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে এবারের অভিযানটি। পৃথক পৃথক অঞ্চল নির্ধারণ করা হয়েছে। যেসব অঞ্চলে সদ্য পাশ করা স্নাতকের সংখ্যা অনেক বেশি সেসব অঞ্চলে চাকরির উচ্চ চাহিদা থাকায় ওই অঞ্চলগুলোকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

এরই মধ্যে শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করতে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পদ খুঁজে পাওয়ার উদ্যোগ নিতে স্থানীয় মানবসম্পদ ব্যুরোর প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

 

 

মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনায় প্রদেশগুলোকে চাকরির তথ্য পোস্ট করার জন্য প্রাদেশিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করতে বলা হয় এবং চাকরিপ্রার্থীদের সাথে ভার্চুয়াল মিটিং চালু করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করতে বলা হয়।

 

কর্মসংস্থান পরিষেবা প্রদানকারী, শিল্প সমিতি এবং সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রিয়েল-টাইম নিয়োগের তথ্য প্রকাশ করতে চাকরি মেলার আয়োজন করতেও বলা হয়। 

 

চীন এই বছর রেকর্ড ১ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার নতুন স্নাতককে চাকরিতে নিয়োগ দিতে এই অভিযান পরিচালনা করছে। এর আগে চলতি বছরের প্রথম তিনমাস বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের চাকরি দিতে এমন একটি নিয়োগ অভিযান পরিচালনা করে দেশটির সরকার।  

 

 

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান

২.  এআই শিল্পে চাহিদা বৃদ্ধি অপার কাজের সুযোগ তৈরি করেছে চীনা স্নাতকদের জন্য

 

চীনে স্নাতকদের জন্য এআই শিল্পে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এআইজিসি-সম্পর্কিত ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদের উদ্ভব হয়েছে। সম্প্রতি দেশটির চাকরি-বিষয়ক ওয়েবসাইট লিয়েপিন এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

 

চীনের চাকরি-বিষয়ক ওয়েবসাইট লিয়েপিন প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে বেরিয়েছেন এমন তরুণ-তরুণীদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই শিল্পে নতুন চাকরির সুযোগ বেড়েছে দেশটিতে। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

 

চলতি বছর চীনে নতুন স্নাতকের সংখ্যা রেকর্ড ১ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

 

 

নিয়োগ, চাকরি ও শিক্ষা সংক্রান্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বস চিপিনের উপাত্তে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে এআই প্রোডাক্ট ম্যানেজার, কন্টেন্ট অপারেটর এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা-বৃদ্ধি ৩০০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কন্টেন্ট বা এআইজিসি এআই পেইন্টিং, এআই লেখা, এআই প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্ন কন্টেন্ট উৎপাদনের এক নতুন মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

 

বস চিপিনের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২২ সাল থেকে এআইজিসি-সংক্রান্ত চাকরির ৮০ শতাংশ সুযোগ তৈরি হয়েছে ইন্টারনেট শিল্পের উন্নয়নের কারণে। তবে ২০২৩ সালে বিনোদনের পাশাপাশি ওষুধ ও চিকিৎসা শিল্পেও এআইজিসি-সম্পর্কিত চাকরির সংখ্যা বেড়েছে দ্রুত গতিতে।

 

একই সময়ে এআইজিসি-সম্পর্কিত ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদের উদ্ভব হয়েছে, যেমন প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার, থ্রিডি-এআইজিসি অ্যালগরিদম ইঞ্জিনিয়ার, চ্যাটজিপিটি অপ্টিমাইজার, চ্যাটজিপিটি অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ার, ইত্যাদি।

 

লেইপিনের তথ্য বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় উৎপাদন, এআইজিসি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেল তৈরি-সংক্রান্ত পদে যেসব নবীন গ্রাজুয়েট চাকরি করছেন তাদের গড় বেতন নতুন চাকরিতে যোগদানকারীদের মধ্যে জাতীয়ভাবে সর্বোচ্চ।

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় উৎপাদন খাতে চাকরিতে গড় বেতন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ২শ ইউয়ান, এআইজিসি খাতে ২ লাখ ৩ হাজার ৬শ ইউয়ানএবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেল তৈরি-সংক্রান্ত খাতে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯শ ইউয়ানে।

 

২০২২ সাল থেকে এআইজিসি-সম্পর্কিত চাকরির সুযোগগুলো সৃষ্টি হয়েছে প্রধানত ইয়াংজি নদীর অববাহিকা এবং বেইজিং-থিয়ানজিন-হেবেই অঞ্চলে। আর এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে বেইজিং, সাংহাই ও চেচিয়াং প্রদেশ।

 

বস চিপিনের মতে, এআইজিসি-সম্পর্কিত চাকরির জন্য উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশের বেশি চাকরির জন্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাগে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেল তৈরি-সংক্রান্ত বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের চাহিদাও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বছরে এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ৪৩০ শতাংশ।

 

 

লেইপিনের মতে, ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের কাছ থেকে যে তিনটি ক্ষেত্রে চাকরির আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে সেগুলো হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় উৎপাদন, এআইজিসি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেল তৈরি। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হলো যথাক্রমে ৩০৩ দশমিক ১২ শতাংশ, ২৯৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ২৩৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।

 

চাকরির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন, কুয়াংচৌ-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টেলিজিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ছান তিংতিং। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ এবং এর ব্যাপক প্রয়োগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ ক্ষেত্রে প্রতিভার চাহিদা বাড়তে বাধ্য বলেও বিশ্বাস করেন তিনি। এ কারণে চীনের  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি সম্ভাবনা ও সুযোগ অপেক্ষা করছে বলেও মনে করেন ছান। 

 

প্রতিবেদকঃ শিহাবুর রহমান

সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

৩.  আনন্দঘন পরিবেশে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা ‘কাওখাও’ সম্পন্ন


চীনের তরুণ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা কাওখাও। চলতি মাসের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হয় এই পরীক্ষা।  চীনে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত পরীক্ষার নাম কাওখাও। একে বলা হয় ‘কলেজ এন্ট্রান্স এক্সাম’।

 

কলেজ এন্ট্রান্স এক্সাম বা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের এই পরীক্ষা চীনের তরুণ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা বলে বিবেচিত কারণ এর উপরে নির্ভর করে তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে।

 

চীনে দ্বাদশ শ্রেণী বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ‘হাইস্কুল শিক্ষার্থী’ বলা হয়। হাইস্কুল পাশ করার পর কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ঢোকার জন্য জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। সারা দেশের সব হাইস্কুল পাশ করা শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। এ পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কোন বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে তা নির্ধারণ করা হয়।

 

চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছর ১২.৯১ মিলিয়ন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয় যা গত বছরের চেয়ে ৯ লাখ ৮০ হাজার বেশি।

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছর স্নাতক প্রোগ্রামের তালিকায় ২১টি নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং চার বছর অধ্যয়নের পর এই বছরের নতুন শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করার জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তীতে তাদের পাঠ্যক্রমগুলিকে পুনর্বিন্যাস করেছে।

 

প্রতিবেদকঃ শান্তা মারিয়া

সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী