এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু
করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।
সিনচিয়াংয়ের নাং বা নান
সিনচিয়াংয়ে যে-কোনো শহরের যে-কোনো গলিতে আপনি একটি বিশেষ খাবার পাবেনই পাবেন, আর সেটি হচ্ছে নাং বা নান। ইংরেজিতে ‘নাং’ হলেও, একে আমরা নান বলেই চিনি।
নান কী সেটা আমাদের বাংলাদেশের বন্ধুরা জানেন। তবে, সিনচিয়াংয়ের নান বিশেষ ধরনের। সাধারণ একটি বড় থালার মতো গোলাকার হয়। এতে তিলবীজ ব্যবহার করা হয়। আরও ব্যবহার করা হয় বিশেষ সুগন্ধি পদার্থ। এটি তৈরির প্রক্রিয়াও বেশ সুন্দর। সিনচিয়াংয়ের মানুষের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে নান। এটি তাদের প্রিয় খাবার। এ খাবার উইগুর খাদ্য-সংস্কৃতিতেও অবিচ্ছেদ্য অংশ।
নানসম্পর্কিত কিংবদন্তি
নান সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত সংস্করণটি হচ্ছে: বহুকাল আগে, বিস্তীর্ণ তাকলিমাকান মরুভূমির প্রান্তে, পশুপালকরা বহু বছর ধরে তারিম নদীর উভয় তীরে বাস করত। মাঝে মাঝে যখন বাইরে যেতো, অন্তত সাড়ে দশ মাস কেটে যেতো তাদের ঘরে ফিরতে। এমনকি, সর্বোচ্চ দেড় বছরও লাগতো কখনও কখনও। তাই রাস্তায় শুকনো খাবার নিতে হতো। তারিম নদী যথন শুকিয়ে যেতো, তখন পশুপালকরা পর্যাপ্ত পানি পেতো না। দু’দিনের মধ্যেই তাদের সঙ্গে থাকা শুকনো খাবার গোবি মরুভূমির পাথরের মতো হয়ে যেতো।
তো, একদিন সূর্য উদিত হয়েছে; মাটিতে যেন আগুন জ্বলছে এবং বাতাস নেই। কিছু ধূলিকণা, যা দেখতে মেঘের মতো কিন্তু মেঘ নয়, বা কুয়াশার মতো কিন্তু কুয়াশাও নয়, বাতাসে ঝুলে থাকে, মানুষের শরীরের প্রতিটি ঘামের ফোঁটা শুষে নেয়। বাতাসে পোড়া পশমের গন্ধ। রাখাল তুরহুন, সূর্যের তাপে ঝলসে যেতে থাকে। সে আর সহ্য করতে পারছিল না। সে তার ভেড়ার পাল ছেড়ে কয়েক ডজন মাইল দূরে তার বাড়িতে ফিরে আসে। তুরহুন তীব্র গরম থেকে বাঁচতে জলের ট্যাঙ্কে নিজেকে ডুবিয়ে দেয়। পানির ভিতর থেকে বেরিয়া আসার পর কয়েক মুহূর্তেই তাঁর শরীর ও মাথার পানি বাষ্পে পরিণত হয়ে যায়। সে হঠাত্ একটি ময়দার টুকরা খুঁজে পেলো, যা তার স্ত্রী রেখেছিলেন। তুরহুন সেই ময়দার দলা নিজের মাথার উপর টুপির মতো ধরলো। এর উদ্দেশ্য মাথাকে সূর্যের তাপ থেকে বাঁচানো। পানিমিশ্রিত ময়দা ঠান্ডা ও খুব আরামদায়ক বোধ হলো। এ সময় সে আবার বাইরে ফেলে আসা ভেড়ার পালের কথা ভাবলো। সূর্য তখনও জ্বলজ্বল করছিল। তুরহুন ভেড়ার পালের সন্ধানে হাঁটা দিল। হাঁটতে হাঁটতে সে একটা সুগন্ধি পেল। সে ডানে ও বামে তাকাল। কিন্তু কিছুই দেখলো না। সে হাঁটছে, কিন্তু ঘ্রাণ তার পিছু ছাড়ছে না। কিছুক্ষণ পরে তুরহুন একটি লাল উইলোর শিকড়ের সাথে হোঁচট খেয়ে নিচে পড়ে গেল। পড়ে যাওয়ার ফলে তার মাথার ময়দার দলাও মাটিতে পড়ে গিয়ে ভেঙে গেল। সুগন্ধের মাত্রা আরও তীব্র হলো। সামনে, পিছনে, বামে এবং ডানে সুগন্ধ আর সুগন্ধ। তুরহুন ময়দার দলার একটি ভাঙা টুকরা হাতে নিল এবং মুখে দিল। সে তার স্বাদ নিল। ময়দার দলা সূর্যের তাপে বাইরের দিকে পুড়ে গেলেও, ভিতরে ছিল নরম; খেতে তুরহুনের কাছে বেশ সুস্বাদু মনে হলো।
নানের জন্ম
তুরহুন শক্ত হয়ে যাওযা ময়দার দলার ভাঙা টুকরোগুলো নিয়ে গ্রামে ফিরলো। পথের ধারে, সে যাকে দেখে তাকেই এক টুকরো খেতে দেয়। যে খায় সে-ই বলে বেশ সুস্বাদু! সবাই সুস্বাদু বলাতে তুরহুন নিশ্চিত হন যে এটি আসলেই সুস্বাদু একটি খাবার হয়েছে। পশুপালকদের যারাই এটার স্বাদ নিয়েছে, তারাই তুরহুনের কাছ থেকে জেনেছে এটি তৈরির রহস্য। তো, এমন সুস্বাদু জিনিসের একটা নাম তো থাকতেই হবে, তাই না? সব ধরনের কেক থেকে আলাদা করার জন্য, তুরহুন সকলকে একত্র করে রীতিমতো শলা-পরামর্শ করলো। অনেক চিন্তা-ভাবনা করার পর, সে বললো: ‘আসুন একে নান বা ‘নাং’ বলি!’
কিন্তু, সমস্যা হলো আকাশে প্রতিদিন সূর্য থাকে না। আর সূর্যের তাপ ছাড়া নান হবে না! কী করা? কীভাবে মেঘলা দিনেও নান খাওয়া যায়? তুরহুন এটা সম্পর্কে চিন্তা করে একটা বুদ্ধ বের করলো। সে উঠোনে একটি বড় গর্ত খনন করলো; হলুদ কাদা দিয়ে গর্তের ভিতরের দেয়ালে প্লাস্টার করলো এবং গর্তের মাঝখানে জ্বলন্ত কাঠকয়লা রাখলো। তারপর গর্তের দেয়ালে ময়দার দলা রাখলো। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল নান!
প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://bengali.cri.cn/ সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)