চীনাদের কাছে মেসি কেন এত জনপ্রিয়?
2023-06-14 17:23:55

 

জুন ১৪: মেসি এসেছেন! সম্প্রতি আর্জেন্টিনার ফুটবল কিং মেসির একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চীনে আসার খবর যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিমান বন্দর থেকে প্রশিক্ষণ মাঠ পর্যন্ত মেসি ও তার দলের সদস্যদের চীনা ভক্তরা তুমুল সংবর্ধনা দিয়েছেন।

 

এদিকে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিতব্য আর্জেন্টিনা-অস্ট্রেলিয়া ফুটবল প্রতিযোগিতার টিকিটের বিক্রি মুহূর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ভালো মানের ফুটবল প্রতিযোগিতা দেখা চীনা ভক্তদের প্রত্যাশিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

 

আর্জেন্টিনার পুরুষ ফুটবল দলের ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এটিই প্রথম বিদেশ সফর। তবে এটি মেসির সপ্তম চীন সফর। আর্জেন্টিনার ফুটবল দলের সঙ্গে থাকা জনৈক সাংবাদিক বলেছেন, ‘তিনি চীনা ভক্তদের ব্যাপক আবেগ দেখিয়েছেন, তা অবাক করার মতো একটি ঘটনা”। আসলে তা কোনো অবাক করার বিষয় নয়। চীনারা ফুটবল খুব পছন্দ করেন। তাদের মধ্যে অনেকে আর্জেন্টিনা দলের ভক্ত। তারা মেসির চমৎকার খেলা এবং কখনও হাল না-ছাড়ার চেতনায় মুগ্ধ। আবার চীনকে আর্জেন্টিনা দল ও মেসির জন্য সৌভাগ্যের স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিক গেমসে আর্জেন্টিনার পুরুষ ফুটবল দল সোনার পদক লাভ করেছে। এর পর মেসিও তার জাতীয় দলের সদস্য হিসেবে অনেক দামি পুরস্কার পেয়েছেন। 

 

চীনে মেসি এত জনপ্রিয় কেন?  জানা যায়, এর মূল কারণ হলো চীন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে এবং দু’দেশের জনগণ একে অপরকে অনেক আপন মনে করেন। আর্জেন্টিনা ল্যাটিন আমেরিকার বড় দেশ। চীন থেকে আর্জেন্টিনার ভৌগলিক দূরত্ব অনেক বেশি। তবে অভিন্ন সদিচ্ছা থাকলে পাহাড় ও সমুদ্রের দূরত্ব অতিক্রম করা যায়। ১৯৭২ সালে চীন-আর্জেন্টিনার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আগেও দু’দেশের মধ্যে ছিল ব্যাপক বেসরকারি সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান। আর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীন ও আর্জেন্টিনা বিশ্বের বৃহত্তম দুটো উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার বিষয়ে একে অপরকে সমর্থন দিয়ে আসছে। দু’দেশের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং গণজীবিকা উন্নত করার ক্ষেত্রে অভিন্ন সদিচ্ছা, তা দু’দেশকে আরও কাছে এনেছে।  বিশেষ করে গত দশ বছরে চীন ও আর্জেন্টিনা যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় সহযোগিতা জোরদার করেছে। দু’দেশ কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে সহযোগিতা করে আসছে। ‘দূরের বন্ধু’ থেকে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারে পরিণত হয়েছে চীন  ও আর্জেন্টিনা। 

 

বর্তমানে আর্জেন্টিনার গরুর মাংস, চিংড়ি, মধু ও ব্লুবেরি চীনাদের খাবারের টেবিলে স্থান পেয়েছে। আর্জেন্টিনায় চীনা প্রতিষ্ঠানের নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে উপকৃত হচ্ছেন আর্জেন্টিনার জনগণ। এসব বিবেচনায় রেখেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা চীনকে তার প্রথম বিদেশ সফরের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে, তা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়।

 

চীন ও আর্জেন্টিনার সম্পর্কোন্নয়নে ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের কারণে দু’দেশের জনগণ আরও কাছে এসেছে। ফুটবলকে উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করে বলা যায়, গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে আর্জেন্টিনার বিখ্যাত তারকা ম্যারাডোনা বহুবার চীন সফর করেছিলেন এবং বেইজিং এবং ছেংতুতে দুটি ফুটবল ম্যাচে আর্জেন্টিনার ক্লাব বোকা জুনিয়র্সকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যা চীনা ভক্তদের কাছে ফুটবলের আকর্ষণ মেলে ধরেছিল। আর মেসির সাতবার চীন সফর চীন-আর্জেন্টিনা ফুটবল বন্ধুত্বের উত্তরাধিকার মাত্র।

রুবি/এনাম