দুইদিনব্যাপী চীন-সৌদি আরব সহযোগিতা ফোরামের দশম উদ্যোক্তা সম্মেলন ১২ জুন সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে সমাপ্ত হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে চীন ও সৌদি আরবের মধ্যে দশটির বেশি সহযোগিতা চুক্তি ও স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি, সরবরাহ চেইন, পর্যটন ও চিকিত্সাসহ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি-উত্তর যুগে চীন ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ব্যাপক প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ সম্মেলনে ২৬ দেশের ৩৫০০ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। দু’পক্ষ ৩০টি প্রকল্পের ৭ হাজার কোটি ইউয়ান মূল্যের আর্থ-বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর এবং রিয়াদ ঘোষণা প্রকাশ করেছে। তাছাড়া, একাদশ চীন-সৌদি সহযোগিতা ফোরামের উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২৫ সালে বেইজিংয়ে আয়োজনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
চলতি বছরের সম্মেলন হলো ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম চীন-সৌদি উদ্যোক্তা সম্মেলন আয়োজনের পর বৃহত্তম সম্মেলন। তাতে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেছে। এ সম্মেলন চীন ও সৌদি আরবের আর্থ-বাণিজ্যিক খাতকে মুখোমুখি আদান-প্রদানের প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সুযোগ সন্ধান করেছে।
মিশরের চিকিৎসা খাতের প্রতিনিধি রিয়াদ আরমানিইয়ুসি বলেছেন, ‘এবারের সম্মেলন নিয়ে আমি খুব আশাবাদী এবং তাতে যোগ দিয়ে খুব অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি ওষুধ প্রক্রিয়াকরণ এবং জীববিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট অধিবেশনে অংশ নিয়েছি। সেখানে বেশ কয়েকটি চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আদান-প্রদান করেছি। আমাদের মধ্যে বিশেষ করে উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ব্যাপক সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমরা উপলব্ধি করেছি।’
চীন ও আরব দেশসমূহের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা একে অপরের পরিপূরক। এবারের সম্মেলনের সফলতা থেকে জানা যায় যে বর্তমানে দু’পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার বিষয় ঐতিহ্যবাহী তেল ও গ্যাস থেকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি, খনিজ সম্পদ, সরবরাহ চেইন, পর্যটন ও চিকিত্সাসহ নানা ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। তা গত কয়েক বছরে দু’পক্ষের অগণিত সফল সহযোগিতার অভিজ্ঞতা থেকে গঠিত আস্থা ও মৈত্রীর কারণে অর্জিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি আরব দেশ দীর্ঘকালীন উন্নয়নের কৌশল প্রণয়ন করেছে। এগুলোর মধ্যে অনেক দেশ ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সঙ্গে মিলিত হতে পেরেছে। চীন ও আরব দেশসমূহ অভিন্ন উন্নয়নের জন্য যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রয়েছে, তা দু’পক্ষের ভবিষ্যৎ আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের জন্য আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
লেবাননের বাণিজ্যমন্ত্রী আমিন সালাম সিএমজিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমরা জানি যে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। ছোট বড় যে কোনো আরব দেশ তা থেকে উপকৃত হবার প্রত্যাশা করে। তাই এ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ট্রেনে করে সবাইকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিনিয়োগমন্ত্রীর মূল ভাষণ, দুইদিনব্যাপী সম্মেলনের নানা কর্মসূচী এবং বিভিন্ন আলোচনাসভায় অতিথিদের ভাষণে বার বার ‘ভবিষ্যৎ’ শব্দটি শোনা গেছে। গত বছর অনুষ্ঠিত প্রথম চীন-আরব শীর্ষসম্মেলন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন সোনালী যুগে প্রবেশের একটি উজ্জ্বল প্রতীক। দু’পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার হলে তা চীন-আরব অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিউনিটি গঠনের জন্য সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
(রুবি/এনাম)